• দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লোকসভা ভোটের বাদ্যি এখনও বাজেনি। এরমধ্যেই চলতি মাসে দ্বিতীয়বার বাংলায় এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এবার আবার সঙ্গে এসেছিলেন বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা ওরফে জেপি নাড্ডাও।

মঙ্গলবার শুভেন্দু অধিকারীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। এরপরই আচমকা যেন বজ্রপাত! রীতিমতো বিবৃতি জারি করে প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরাকে বিজেপির সম্পাদক পদ থেকে সরানো হল।

২০২০ সাল থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদে ছিলেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না। বেসুরো গাইছিলেন তিনি। একপর তাঁকে কেন্দ্রীয় পদ থেকে সরানো হয়। আর পদচ্যুত হওয়ার তিন ঘণ্টা পরই ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন বেসুরো এই বিজেপি নেতা।

দল পদক্ষেপ করলেও চুপ করে বসে থাকার পাত্র তিনি নন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কার্যত তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অনুপম হাজরা। দলীয় সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে লিখেছেন, শর্ত মেনে চললে তাঁকে নাকি আবার পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=pfbid02DCXDwxH2pRYD881GexzFCAjw6dpWGWEW1G8p3NqpMhda2nrtCXKjrN149U9xjRtel&id=100034520296851&mibextid=Nif5oz

প্রসঙ্গত, রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সত বিজেপি কর্মীদের কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে বলে বারে বারে অভিযোগ করে এসেছেন অনুপম হাজরা। এমনকি, সদ্য ব্রিগেড ময়দানে যে লক্ষ্য কণ্ঠে গীতাপাঠ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিজেপি, সেই অনুষ্ঠানেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ। এরপর গতকাল বিজেপির মহাসচিব অরুণ সিং এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডার নির্দেশেই সরানো হয়েছে অনুপম হাজরাকে। অবিলম্বে তাঁকে পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি সর্বভারতীয় নেতা হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অনুপমকে দেওয়া নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যা সরাসরি দেখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। দীর্ঘ দিন কেন্দ্রের ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’-র নিরাপত্তা পেতেন অনুপম। গত ৫ ডিসেম্বর অনুপমকে জানিয়ে সেই নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

তবে সেই বার্তার পরেও অনুপম যে দমছেন না সেটা বুঝিয়ে রবিবার ফের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। সেখানে লিখেছিলেন, ‘‘নিজের দলের মধ্যে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠিত চোর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাখলে, আর কয়েকদিন পর তৃণমূলকে চোর বলার জায়গায় থাকব কি আমরা?’’ ওই পোস্টের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দলীয় পদ থেকে সরানো হল তাঁকে।

এক সময়ে বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন অনুপম। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে গত লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর আসনে প্রার্থীও হন। তবে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। সেই সময়ে নানা ভাবে তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। বিজেপির অনেকেই বলেন, সেই কারণে রাজ্য থেকে সরিয়ে অনুপমকে কম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিহারের সংগঠন দেখতে বলা হয়।

ইদানীং একের পর এক মন্তব্যে রাজ্য বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে যাচ্ছিলেন অনুপম। বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কের সময়ে তিনি শান্তিনিকেতনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে চলে যান। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেন। তার আগে রামপুরহাট এবং পরে খয়রাশোলে দু’টি বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল অনুপমের। তার মাঝে তিনি ফেসবুক লাইভে রাজ্য নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করেন। অভিযোগ করেন, রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর মদতেই জেলা বিজেপিতে অরাজকতা চলছে।

দলকে অস্বস্তিতে ফেললেও অনুপমের যুক্তি ছিল ভালর জন্যই তিনি সব কিছু করছেন। বলেছিলেন, ‘‘দলের কোণঠাসা কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে চলেছি আমি। তবে যে কোনও কাজ করার ক্ষেত্রেই বাধা পাচ্ছি আমি। আমাকে রাজ্য বিজেপির তরফে কোনও কর্মসূচিতে ডাকা হয় না। কখনও ডাকা হলেও এমন সময়ে জানানো হয়, যাতে আমি সময়ে আসতে না পারি।’’ অনুপমের দাবি, রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েক জনের অঙ্গুলিহেলনেই এই সব হচ্ছে। সেই সময়েই রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উনি আগে বালুরঘাট সামলান। ক’দিন আগেই দেখলাম ২০ জন লোক নিয়ে ঘুরছেন। তার মধ্যে ১৮ জনই নিরাপত্তাকর্মী।’’ এর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘সবটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন। কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা এর ফল দেখতে পাবেন।’’ সেই ‘ফল’ এ বার পেলেন সাংগঠনিক ‘প্রত্যাঘাতে’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here