দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অনুব্রত মন্ডলকে দিল্লি যেতেই হচ্ছে । গরু পাচার মামলায় কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেল ইডি। শুক্রবারই তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে। 

দু’দিন আগে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট ইডিকে প্রশ্ন করেছিল, অনুব্রতকে ( কেন এখনও দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়নি? কেন্দ্রীয় এজেন্সি কোর্টে জানিয়েছিল, অনুব্রত দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করে রেখেছেন। কিন্তু রাউস অ্যাভিনিউ আদালত স্পষ্টই বলে, সেই মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। সুতরাং কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে আসা যেতেই পারে। সেই মর্মে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে আর্জি জানিয়েছিল ইডি। বৃহস্পতিবার আদালত নির্দেশ দিল, অনুব্রতকে গরু পাচার মামলায় দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করা যেতে পারে।

জানা গিয়েছে, আপাতত আসানসোল জেলে বন্দি রয়েছে তিনি। সেখান থেকে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে আগামী কাল শুক্রবার দিল্লি নিয়ে যাবে ইডি, যা গরুপাচারের তদন্ত মামলায় বড় মোড় হিসাবে মনে করছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়েছে এনামুল হক ও অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে। আপাতত তারা তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছে।

গত ৯ ডিসেম্বর রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করার নির্দেশ দেওয়ার পর কয়েক বছরের পুরনো একটি মামলায় তাঁকে হেফাজতে চায় বীরভূমের দুবরাজপুর থানা। দুবরাজপুর আদালত তাতে সম্মতি দেয়। ওদিকে ইডি যখন কেষ্ট মণ্ডলকে আসানসোল থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার কাগজপত্র গোছগাছ করছে তখন দেখা যায় ২০ ডিসেম্বর অনুব্রত আসানসোল জেল থেকে দুবরাজপুর নিয়ে চলে গিয়েছে পুলিশ। শিবঠাকুর মণ্ডলের দায়ের করা সেই মামলা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল বাংলার রাজনীতিতে।

এরমধ্যেই আবার অনুব্রত রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে দিল্লি হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানির দিন বারবার পিছিয়েই গিয়েছে। জানা গিয়েছে, আগামী ১৭ মার্চ দিল্লি হাইকোর্টে অনুব্রতর ওই মামলার শুনানি হবে।

তবে সেই শুনানির আগেই নিম্ন আদালতের নির্দেশে পদক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। শুক্রবারই কেষ্টকে নিয়ে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দেবে ইডি।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই গরু পাচার মামলায় এনামুল হক ও সায়গল হোসেককে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলকেও দিল্লি  নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু ঘটনাচক্রে আচমকাই শিবঠাকুর মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। শিবঠাকুর মণ্ডল অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে নাকি দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই গলা টিপে খুনের চেষ্টা করেছিলেন অনুব্রত। চার লাইনের একটা অভিযোগ, তাতে কোনও এভিডেন্স ছিল না, তার ভিত্তিতেই দুবরাজপুর থানার পুলিশ অনুব্রতকে গ্রেফতার করে। তার আগে অবশ্য সিবিআই হেফাজতে ছিলেন অনুব্রত। পুলিশি গ্রেফতারির পর অনুব্রতর ঠিকানা হয় দুবরাজপুর পুলিশ হেফাজত। ফলে সেক্ষেত্রে অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ব্যহত হয়।

এরই মাঝে অবশ্য দিল্লি যাত্রা রুখতে অনুব্রত দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর হয়ে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে আইনজীবী কপিল সিব্বলকেও। দিল্লি হাইকোর্ট অবশ্য কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। ইডি মূলত অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে চায় কয়েকটি বাফার অ্যাকাউন্টের তথ্যের সন্ধানে।

বীরভূমের বিভিন্ন জেলার ব্যাঙ্কে সেই অ্যাকাউন্টগুলি রয়েছে। পাশাপাশি বীরভূমের বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে কার নামে টাকা ঢুকেছে, কত টাকা বেরিয়েছে, কাদের নামে অ্যাকাউন্ট, তাও খতিয়ে দেখতে চান তদন্তকারীরা। কারণ ইডি-র হাতে তথ্য এসেছে, আধার-প্যান লিঙ্কের নাম করে নথি সংগ্রহ গ্রামের একাধিক বাসিন্দাদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। পাচারের টাকা সেই অ্যাকাউন্টগুলিতে ঢুকেছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

পাশাপাশি শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের অ্যাকাউন্টেও টাকার গরমিল  মিলেছে, সেই টাকা কোথা থেকে এসেছে, জানাতে পারে নি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি মেয়ে, ভাগ্নে, গাড়িচালকের অ্যাকাউন্টেও যে টাকার হদিশ মিলেছে, তার উৎস কী, তাও খতিয়ে দেখতে চান তদন্তকারীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here