জুনের ১২ তারিখ। গুজরাতের আমেদাবাদ থেকে ওড়ার ৩২ সেকেন্ড পরই ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান । ২৬০ জনের মৃত্যু হয় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই মুম্বইয়ে একই ধরনের বোয়িং ৭৮৭ বিমান দুর্ঘটনার ‘শেষ মুহূর্ত’ পুনর্গঠন করে দেখতে শুরু করেন অন্তত তিনজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলট। উদ্দেশ্য ছিল — দুর্ঘটনার আসল কারণ বোঝা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু তাঁরা সেইভাবে সফল হননি।
সূত্র মারফৎ জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তাঁরা চেষ্টা করেন উড়ানের সময় দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি ‘পুনর্গঠন’ করতে। বৈদ্যুতিন ত্রুটির ফলে একসঙ্গে ইঞ্জিন দু’টি বন্ধ হয়ে গেলে বিমানের উচ্চতা নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় — এই অনুমান থেকেই পরীক্ষাটি করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই পরিস্থিতি তৈরি করা যায়নি। ব্যর্থ হন পাইলটরা।
এই সিমুলেশনের জন্য যে বিমান ব্যবহার করা হয়, তাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের সুনির্দিষ্ট ট্রিম শিট ডেটা প্রয়োগ করা হয়। বিমানের ওজন, ভারসাম্য ও কেন্দ্রবিন্দু ঠিকভাবে ছিল কিনা, তা বুঝতে এই ডেটা গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক পরীক্ষায় দেখা হয়, একটি ইঞ্জিন অকেজো থাকলে, আন্ডারকারেজ বা ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো অবস্থায় এবং ফ্ল্যাপ সম্পূর্ণ ভাঁজ করে দিলে কী হয়। এই অবস্থা সাধারণ উড়ানের পক্ষে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে বিমানটি সঠিকভাবে উচ্চতা নিতে পারে না।
এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে বেছে নেওয়া হয় ভ্রান্ত টেক-অফ ফ্ল্যাপ কনফিগারেশন, যাতে এক ইঞ্জিনে বিমানটিকে ওড়াতে আরও কষ্ট হয়। বিমানের ডানার ফ্ল্যাপগুলি উড়ান ও ল্যান্ডিংয়ের সময় লিফট বাড়াতে সাহায্য করে — যা এই পরীক্ষায় সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এই পরীক্ষাগুলিতে দেখা গিয়েছে—একটি ইঞ্জিন চালু থাকলেও ওই বিমানটি উচ্চতা নিতে পারত। কারণ, বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানে ব্যবহৃত ইঞ্জিনগুলি অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রতিটি ইঞ্জিন তৈরি করে প্রায় ৭০ হাজার পাউন্ড থ্রাস্ট, যা এই শ্রেণির বাণিজ্যিক বিমানের মধ্যে অন্যতম উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন।
কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন দুটি ইঞ্জিনই একসঙ্গে বিকল হয়ে যায়। কারণ, এয়ার ইন্ডিয়ার কোনও পাইলটই এমন পরিস্থিতির জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। বিশেষ করে, যখন বিমানটি ৪০০ ফুটেরও কম উচ্চতায় থাকে, তখন দুটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে গেলে তা থেকে বিমানের পুনরুদ্ধার কার্যত অসম্ভব।
অভিজ্ঞদের মতে, এটিই ‘নেগেটিভ ট্রেনিং’ — যে পরিস্থিতি থেকে ফেরার কোনও বাস্তবিক সম্ভাবনা থাকে না। আর আমেদাবাদে বিমানটি যখন দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন ঠিক এমনই কোনও উচ্চতায় ছিল। সেই কারণেই ‘পুনর্গঠন’ ব্যর্থ হওয়ায় দুটি ইঞ্জিন বিকলের তত্ত্ব আরও জোরালো হচ্ছে।