মিলন খামারিয়া ৩০ শে মার্চ,মোহনপুর : পরিসংখ্যান বলছে ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ভারতে ৩৭ কোটি।এতো বৃহৎ সংখ্যার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কিন্তু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা সবাই তো চাকরি পাবেন না, তবে তারা যদি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করেন তাহলে কৃষির উন্নতির পাশাপাশি তারাও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে।

আজ সেই উদ্দেশ্য নিয়েই বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সর্বভারতীয় সমন্বিত ফল গবেষণা কেন্দ্র'(ICAR-AICPR)-তে ‘কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তির বিস্তার (‘Input Distribution and Technology Transfer’) -এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হল SCSP প্রজেক্ট থেকে। এই প্রশিক্ষণ নেবার জন্য নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা থেকে ৩৮ জন উদ্যোগী চাষি উপস্থিত ছিলেন। এই প্রশিক্ষণ দেন প্রফেসর দিলীপ কুমার মিশ্র, প্রফেসর কল্যাণ চক্রবর্তী, প্রফেসর ফটিক কুমার বাউরি ও ড. দেবলীনা মাঝি।

আজ শুরুতেই অধ্যাপক চক্রবর্তী অনুষ্ঠান সঞ্চালনার ভার গ্রহণ করেন। তারপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শুভেন্দু বিকাশ গোস্বামী-কে বরণ করে নেওয়া হয়। এছাড়াও বরণ করে নেওয়া হয় কাঁচরাপাড়া হার্ণেট হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপ কুমার দাস ও সহকারী শিক্ষক সুজিত মন্ডল-কে।

এরপর ড. মাঝি উপস্থিত চাষিদের বিভিন্ন প্রকারের কলম-এর মধ্যে – কাটা কলম ও গুটি কলম-এর সাহায্যে হাতে কলমে চারা তৈরি করা শেখান। উন্নত মানের চারা থেকে কলম তৈরি করলে তবেই ভালো ফসল পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান।

তারপর ড. চক্রবর্তী ‘জোর কমল’ দেওয়া শেখান। দুটি গাছের ডালের কতটা পরিমাণ চেঁছে একসাথে জোড়া দিলে কলম তৈরি করা যায় তা শেখান ড. চক্রবর্তী। ‘দ্বি সারি বেড়া পদ্ধতি’-তে চাষের কথাও বলেন তিনি। এই পদ্ধতিতে কাছাকাছি দুটি গাছ লাগানো হয় ও দূরে দূরে দুটি গাছ লাগানো হয়। পাশাপাশি প্রতিটি মূল ফসলের সাথে সাথী ফসল চাষ করার কথাও বলেন তিনি।

কেঁচো সার তৈরি করা শেখান অধ্যাপক মিশ্র। কেঁচো সার কত দিনে ও কীভাবে তৈরি করতে হয়, এই বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তিনি।

আজকের এই শিবিরে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শুভেন্দু বিকাশ গোস্বামী। তিনি বলেন,”দশ হাজার বছর ধরে আমাদের দেশে চাষাবাদ চলছে। এই চাষাবাদকে প্রতিনিয়ত উন্নত করতে হবে আমাদের। আর তা করতে গেলে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ প্রয়োজন। শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের চাষের কাজে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।আজকে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে উক্ত কাজ যে ভালোভাবে হবে – এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।”

আজকের এই প্রশিক্ষণ শিবিরের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে এই প্রকল্পের আধিকারিক(AICRP on fruits) অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র জানান যে,” প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন ১৩০ গ্রাম করে ফল খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত দাম হবার কারণে সাধারণ মানুষ পরিমাণ মতো ফল খেতে পারেন না। কিন্তু ফলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর আশি হাজার কোটি টাকার ফল আমদানি করতে হয়। যদি উৎসাহী যুবক-যুবতীরা ফল চাষে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসে তাহলে ফল চাষে আমাদের দেশ যেমন আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে তেমনি তারা নিজেরাও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার এ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

প্রশিক্ষণ শেষে আগত উদ্যোগী চাষিদের হাতে ভার্মি কম্পোস্ট সার, ব্যবহারিক ব্যাগ, মৌসম্বী লেবুর চারা, কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক ওষুধ তুলে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃষির প্রতি আগ্রহ তৈরি করার জন্য, নিজেরা আগে বিভিন্ন প্রকারের কলম তৈরি শেখায় আগ্রহী হয়ে, আজকের এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন কাঁচরাপাড়া হার্ণেট হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপ কুমার দাস ও সহকারী শিক্ষক সুজিত মন্ডল।

এছাড়াও আজকের এই শিবিরে বিশেষভাবে উপস্থিত বিশিষ্ট উদ্যানবিদ ও এই প্রকল্পের প্রাক্তন আধিকারিক অধ্যাপক সুশান্ত কুমার সরকার, ড. সঞ্জীব দেবনাথ,ড. অনামিকা কর, অঙ্কিতা রায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here