দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃপঞ্চায়েত ভোটের আগেই দলের নয়া কর্মসূচি শুরুর কথা জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে নতুন  সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ২৫ এপ্রিল থেকে অভিষেক দু’মাস কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত জনসংযোগ যাত্রা করবেন। সেইসঙ্গে গোপন ব্যালটে মানুষের মতামত নেবেন কাকে কোন এলাকায় পঞ্চায়েতের কোন স্তরে প্রার্থী করা যায়।

এদিন সাংবাদিকরা অভিষেককে প্রশ্ন করেন, যদি দেখা যায় গোপন ব্যালটে কোনও এলাকার মানুষ স্থানীয় কোনও স্বচ্ছ সিপিএম নেতার নাম বাছছেন সেক্ষেত্রে কী হবে? জবাবে অভিষেক বলেছেন, কোথাও যদি এরকম হয়, যে মানুষ বলেন এই ব্যক্তি ভোটে দাঁড়ালে কাজ হবে, দুর্নীতি হবে না, তিনি যদি সিপিএমেরও কেউ হন আমি তাঁকে প্রার্থী করার জন্য রাজি করাব। এ ব্যাপারে আমার কোনও ইগো নেই। অভিষেক এও বলেন, শুধু সিপিএম কেন, বিজেপি, কংগ্রেস যে কোনও দলের কেউ হলেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই।

আগামী ২৫ তারিখ থেকে সংযোগ যাত্রা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন আমরা ২৫ তারিখ থেকে সংযোগ যাত্রা শুরু করব। এই ক্যাম্পেইনের নাম হচ্ছে তৃণমূলের নবজোয়ার।আগামী দু’মাস ধরে মানুষের পঞ্চায়েত গড়া এই কর্মসূচীর আসল লক্ষ্য। আমি আগেই বলেছি পঞ্চায়েত গণতান্ত্রিক হবে। মানুষের ভোট হবে। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ভোট তো হবেই। আমরা এখান থেকে প্রার্থী ঠিক করব।”

তিনি আরও বলেন, “৬০ হাজার গ্রামীণ বুথে প্রার্থী কে হবে, তার মতামত এখান থেকে নেওয়া হবে। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে, তৃণমূলে নবজোয়ার। এমন লোককে প্রার্থী করা, যাঁরা পঞ্চায়েতে মানুষের পাশে থেকে কাজ করবেন। যে ব্যক্তিকে ৩৬৫ দিন পাওয়া যাবে, তাকেই আমরা প্রার্থী করব। আমরা ভারতে প্রথমবার মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে, মানুষের মতামত নিতে চলেছি। আমরা জেলা থেকে প্রার্থীর তালিকা আনিয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রাধান্য মানুষের থেকে মতামত নেওয়া।”

তিনি বলেন, “জনসংযোগ যাত্রা ও গ্রাম বাংলার মতামত এই দুটো কর্মসূচী আমাদের অংশ। আগামী ২৫ তারিখ এটা শুরু হচ্ছে। কোচবিহারের দিনহাটা থেকে শুরু হবে। পাথরপ্রতিমা বা সাগরে শেষ করব। আমি ২৪ তারিখ বিকালে বেরোব। আমি দু’মাস কলকাতায় ফিরব না। আমি সাগর শেষ করে তারপর বাড়ি ফিরব। সকাল ১১’টায় শুরু। রোজ গড়ে চারটে করে জনসভা। আমি সন্ধ্যা ৬টায় ক্যাম্পে ফিরব। যে জেলায় ক্যাম্প হয়েছে। সেখানে অধিবেশন হবে। সব বুথ সভাপতি থাকবেন। ৩ থেকে ৪ হাজার লোক থাকবে। তারপর গোপন ব্যালটে ভোট হবে। সেখানে নৈশভোজ থাকবে। প্রার্থী কাকে চান, সেটা আমাদের জানান।”

অভিষেক আরও বলেন, “কোচবিহার ৩ রাত, আলিপুরদুয়ার ১, জলপাইগুড়ি ২, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এভাবে শিডিউল করা হচ্ছে। গণতন্ত্রে শেষ কথা বলে, গণদেবতা। মানুষ যাঁকে প্রাধান্য দেবে, তাঁকেই প্রার্থী করা হবে। এছাড়া ওয়েবসাইটে লাইভ ফর্ম থাকবে, সেখানে মতামত জানানো যাবে। আমি রাতে ক্যাম্পে থাকব।”

তিনি বলেন, “সিক্রেট ব্যালটে ভোট হবে। ফলে ভোট দিন। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে কাকে চান আপনারা জানাবেন৷ এই কর্মসূচীতে ভুল ত্রুটি হলে, আমাদের ধরিয়ে দিক সংবাদমাধ্যম। আমাদের নির্বাচনী জয়ের ওপরে উঠতে হবে। বামেরা অনেক কথা বলে। কিন্তু কোনওদিন এমন চেষ্টা করেনি। আগামী দিনে, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন মানুষকে ভোটে দাঁড় করাব। কথা দিয়ে কথা রাখা বড় ব্যাপার।”

অভিষেক বলেন, “এটা ভারত জোড়ো যাত্রার মতো পদযাত্রা নয়। দু’মাসে গোটা বাংলা হাঁটা সম্ভব নয়। আমাদের জনসংযোগ যাত্রা হল, মানুষের কাছে গিয়ে কথা বলা। যে পয়েন্টে যাওয়া হবে। সেটা আগেই বলা হবে। নিজের এলাকা, পরিবারের স্বার্থের কথা ভেবে যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কোনও ৫৬ ইঞ্চির কথা মাথায় রেখে ভোট নয়। ভোট দেবেন পানীয় জল, গ্রামীণ রাস্তার মতো পরিষেবা দেখে।”

তিনি জানান বলেন, “এই কর্মসূচীর মধ্যে যদি পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়, তাহলে যতটা জেলা করা যায় তাই হবে। আর যদি বিরোধীদের কোনও নাম সামনে আসে, সাধারণ মানুষ চায়, তাহলে তার সাথে আমি কথা বলব। বাম, বিজেপি সে তিনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন, আমার কোনও ইগো নেই৷ তবে তিনি তৃণমূলের প্রতীকে না দাঁড়াতে চাইলে, আমরা বিকল্প নাম ভাবব। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছে বলে আজ এই কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে বলে অনেকে বলবেন৷ পার্থ চ্যাটার্জি গ্রেফতার হয়েছিল ২২ জুলাই। আর আমি ১২ জুলাই জলপাইগুড়িতে গিয়ে বলেছিলাম, মানুষের পঞ্চায়েত গড়ব।”

অভিষেকের এই বক্তব্য নিয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ বলেন, ‘এলাকার মানুষ যদি সিপিএমের কাউকে তাদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে চান তাহলে তিনি হঠাৎ চোর-চিটিংবাজের পার্টির হয়ে দাঁড়াতে যাবেন কেন?’ শতরূপ এও বলেন, ‘যেভাবে তৃণমূল পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গণভোট নেবে বলছে এটাই যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা ভোটের সময়ে করতেন তাহলে অভিষেক নিজেই ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হতে পারতেন না।’

অভিষেক এদিন বলেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূল এই কর্মসূচি নিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘আমি এমন লোক চাই যিনি দল না দেখে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করবেন।’ তাঁর দাবি, এইভাবে প্রার্থী বাছাই ভারতের কোনও দল কখনও করেনি। আগামী দিনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের  মতো সব দল এই পথ অনুসরণ করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here