দেশের সময় , উত্তর ২৪পরগনা : আধার নিয়ে চরম বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। ভয়ও পাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা। রবিবারই বীরভূম থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দেন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিয়ে বলেন, “আমি বাংলার মানুষকে বলতে পারি ভয় পাবেন না, আমি আছি।” আর মমতা সরব হতেই এবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের। অবিলম্বে সমস্যার সমাধান না হলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দিলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছেছে আধার কার্ড বাতিলের চিঠি। আধার কার্ড বাতিল নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর ঠাকুর বাড়িতে বৈঠক করলে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর সহ সঙ্ঘের সদস্যরা এবং মতুয়া ভক্তরা।
মমতা ঠাকুর বলেন, “যাঁদের আধার কার্ড বাতিল করা হচ্ছে তার মধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের। কেন্দ্র ঘুড়িয়ে ডিজিটাল NRC করে দিল। মতুয়াদের গোলামে পরিণত করতে চাইছে। আগামী দিনে অঞ্চল এবং ব্লকে ব্লকে আন্দোলন হবে। তারপরও সমস্যার সমাধান না হলে ঠাকুরবাড়িতে আমরণ অনশনে বসব।”
আধার বাতিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরব হওয়ার পর সামনে আসছে একের পর এক অভিযোগ। জামালপুর, দুর্গাপুর, কৃষ্ণগঞ্জ, নাকাশিপাড়ায় বাড়ি বাড়ি আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি এসেছে। যাতে অথৈ জলে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর ব্যাঙ্ক বা রেশন সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তফশিলি ফেডারেশনের লোকেরা জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মতুয়াদের ওপর হচ্ছে। তাঁদের কার্ডগুলো ডিনোটিফাই করা হচ্ছে। নমঃশূদ্রদের করা হচ্ছে। এবং গরিব মানুষ, ক্ষেতমজদুর, খেটে খাওয়া মানুষ। প্রত্যেকটা জেলায় করা হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার কিছু জানে না। জেলা প্রশাসন কিছু জানে না। গায়ের জোরে, লুঠেরা গভর্নমেন্ট সেন্টারের, জমিদারি কায়দায় জমিদারের মতো আচরণ করে, জমিদাররাও আগে এই ধরনের আচরণ করত না। এরা জমিদারদেরও হার মানিয়ে দেবে। যাকে ইচ্ছে তাঁর কার্ড কেটে নেওয়া হচ্ছে।”
এই সমস্যা তৈরি হওয়ার পরে সব চেয়ে বেশি সমস্যার কথা বলছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়ায়। এ বার কেন্দ্রের তরফে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হল মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে। সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে এই সমস্যা তৈরি হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। বৈঠকে শাহ আমাকে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।’’
আধার কার্ড বাতিল প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “যে সমস্ত মানুষদের যারা ওপার বাংলা থেকে এসেছেন, যাদের আধার কার্ড ডিঅ্যাকটিভ হয়ে গেছে, পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক অকাউন্টও ডিয়াক্টিভ হয়ে গেছে। তাঁরা যেন বিভ্রান্ত না হয়, তার জন্য আজকে আমি যে বার্তাটা তাদের কাছে দিতে চাই, যে একটা ইমেল আইডি আমরা দিচ্ছি এবং একটা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিচ্ছি।’’ পাল্টা মমতাবালা ঠাকুর বলেছেন, “যদি কোনও টেকনিক্যাল সমস্যা হয়ে থাকে সেটা নিয়ে বলবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। শান্তনু ঠাকুর যখন বলছেন তাহলে তিনি ঠিক করে দিন। যাঁদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে তাঁদের বলব সকলে শান্তনু ঠাকুরের বাড়িতে আসুন।”