
দীর্ঘ ন’মাসের অপেক্ষার অবসান। পৃথিবীতে ফিরতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর।
তাঁদের পৃথিবীতে ফেরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত। নাসা জানিয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে ভারতীয় সময় অনুযায়ী বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিটে পৃথিবীতে ফিরবেন এই নভোশ্চর জুটি। দেখুন ভিডিও
মহাকাশ স্টেশন থেকে তাঁদের নিয়ে রওনা দেবে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মাঝেই মহাকাশ থেকে ভিডিয়োবার্তা দিলেন আপ্লুত সুনীতারা। ধন্যবাদ জানালেন মাস্ক এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সুনীতার কথা শুনে মনে হয়েছে, পৃথিবীতে ফেরার জন্য যেন তাঁর আর তর সইছে না।
সুনীতাদের ভিডিয়োবার্তা সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন মাস্ক নিজে। ২৫ সেকেন্ডের ভিডিয়োতে সুনীতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমরা শীঘ্রই ফিরছি। খুব বেশি আর দেরি নেই। আমাকে ছাড়া কোনও পরিকল্পনা করবেন না। আমরা ফিরছি।’’ এর পর তাঁর সঙ্গী বুচ বলেন, ‘‘মাস্ক এবং আমাদের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা ওঁদের সম্মান জানাচ্ছি। ওঁরা আমাদের জন্য যা করেছেন, আমরা তাতে কৃতজ্ঞ।’’
মহাকাশ স্টেশনে রবিবার সকালে পৌঁছেছিল স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। তাতে ছিলেন নাসার অ্যান ম্যাক্লেন, নিকোল আইয়ার্স, জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার প্রতিনিধি টাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের প্রতিনিধি কিরিল পেসকভ। তাঁদের মহাকাশ স্টেশনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা এবং বুচ। স্পেসএক্সের যানে তাঁরা দু’জন ছাড়াও থাকছেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভশ্চর আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভ।
রবিবার রাতেই (স্থানীয় সময়) নাসা সুনীতাদের পৃথিবীতে অবতরণের সময় প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে ফ্লরিডার উপকূলে নামবেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতে তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে। তার আগে সোমবার সকাল থেকেই নাসা এই অবতরণ প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে দিয়েছে।
বিশেষ ‘স্প্ল্যাশডাউন’ পদ্ধতিতে তাঁদের নামানো হবে আমেরিকার ফ্লরিডা উপকূলে।কী ভাবে হবে সেই কর্মযজ্ঞ? কেমন হবে সুনীতাদের পৃথিবীতে পা রাখার সেই মুহূর্ত?
ইতিমধ্যেই দুই মার্কিন নভোশ্চরকে ফেরাতে অন্য চার মহাকাশচারী নিয়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়ে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইলন মাস্কের স্পেস এক্স সংস্থার ড্রাগন ক্যাপসুল। সেই যানে চেপেই ফিরছেন সুনীতা ও বুচ।
বোয়িং স্টারলাইনার স্পেসক্রাফ্টের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আট দিনের জন্য মহাকাশ সফরে গিয়ে ন’মাস আটকে পড়েন সুনীতারা। একাধিক বার তাঁদের পৃথিবীতে ফেরানোর চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এ বার তাঁদের ফেরাতে বদ্ধপরিকর আমেরিকার ট্রাম্প সরকার এবং ইলন মাস্কের স্পেস এক্স। ঘোষণা করা হয়েছে ফেরার নির্দিষ্ট সময়ও।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা এবং তাঁর সঙ্গী বুচের পৃথিবীতে পা ফেলার সেই মুহূর্তের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন সকলেই।
জানা গিয়েছে, ফ্লরিডা উপকূলের গাল্ফ অফ মেক্সিকোতে প্রথম প্রথম পা ফেলবেন সুনীতারা। নাসার তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সমুদ্রপাড়ে ‘ওশান স্প্ল্যাশডাউন’ করানো হবে দুই মহাকাশচারীর। কী এই ‘ওশান স্প্ল্যাশডাউন’ পদ্ধতি? কেন এ ভাবেই মহাকাশ থেকে ফেরা নভোশ্চরদের পৃথিবীতে নামানো হয়?
যখন কোনও মহাকাশযান বা ক্যাপসুল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং নিরাপদে অবতরণের জন্য প্যারাসুটের মাধ্যমে সমুদ্র বা বড় আকারের জলাশয়ে অবতরণ করে, তখন তাকে স্প্ল্যাশডাউন বলা হয়। স্প্ল্যাশডাউন পদ্ধতি সাধারণত মহাকাশযানের পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সময় ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যাপসুল থেকে প্যারাসুটের সাহায্যে সমুদ্রে বা অন্য কোনও জলাশয়ে অবতরণ করে।
স্পেস এক্স-এর ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে পৃথিবীতে অবতরণের সময় স্প্ল্যাশডাউন পদ্ধতির ব্যবহার করবে। স্প্ল্যাশডাউনের সময় ক্যাপসুলটি দু’টি প্যারাসুট দ্বারা সজ্জিত থাকবে। যদিও একটি প্যারাসুটই নিরাপদ অবতরণের জন্য যথেষ্ট। এই ভাবে প্যারাসুটে চেপে ফ্লরিডা উপকূলের কাছে গাল্ফ অফ মেক্সিকোতে নামবেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। এর জন্য ফ্লরিডার আবহাওয়ার দিকে নজর রেখেছে নাসা।
এই স্প্ল্যাশডাউন পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত এবং নিরাপদ হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে মহাকাশযান অবতরণের সময়ে। গত বছর ২৫ অক্টোবর নাসার একটি মহাকাশযান ফ্লরিডা উপকূলে সফল ভাবে স্প্ল্যাশডাউন করে। তবে তার পরই Crew-8 মিশনের নভোশ্চররা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্ৰসঙ্গত , গত বছরের জুন মাসে আট দিনের সফরে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। কিন্তু তাঁদের বাহক বোয়িং স্টারলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে সুনীতাদের ঘরে ফেরা আটকে যায়। তার পর থেকে বার বার তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বার বার নিরাপত্তাজনিত কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছে। আট দিনের সফর ন’মাস দীর্ঘায়িত হয়েছে। অবশেষে মাস্কের সংস্থার মহাকাশযান তাঁদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরছে।