হাতে মাত্র একদিন। সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে প্রায় সমস্ত স্কুল-কলেজে। তুলির টানে ব্যস্ত কুমোরটুলির শিল্পীরা। আর পাড়ার মণ্ডপ সাজছে কচিকাঁচাদের হাতে।
এবছর অর্থাৎ ২০২৫-এ বসন্ত পঞ্চমী দুই দিন ধরে পালিত হবে ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি। পঞ্চমী তিথি শুরু হবে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯:১৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬:৫২ মিনিটে। তবে শাস্ত্র অনুযায়ী, উদয় তিথিতে মূল পুজোর দিন নির্ধারিত হয়, তাই এবছর বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজো ৩ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হবে। শুভ মুহূর্ত অনুযায়ী, পুজোর শ্রেষ্ঠ সময় সকাল ৯:১৫ থেকে ১০:৪৫ পর্যন্ত।
সরস্বতী পুজো অর্থাৎ বসন্ত পঞ্চমীতে ঠিক কী পরবেন, সেই সন্ধানও রইল ‘দেশের সময়’-এ।
একটু বড়দের আবার প্ল্যান চলছে সরস্বতী পুজোয় ঠিক কেমন সাজগোজ করা যায়। রীতি অনুযায়ী সরস্বতী পুজোয় হলুদ পরার চল রয়েছে। কেন হলুদ পরা হয়, এর পিছনে ঠিক কী যুক্তি রয়েছে, জেনে নেওয়া যাক।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে মা সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো হয় বলে দিনটি শ্রীপঞ্চমী নামেও পরিচিত। এই দিন থেকে বসন্ত ঋতুর আগমন হয় বলে অনেকে আবার বসন্ত পঞ্চমী হিসেবে এই দিনটি পালন করেন। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে হলুদ রঙের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। হলুদ রঙকে শুভ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, হলুদ রঙ সুখ, শান্তি দেয়। সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য মা সরস্বতীকে হলুদ রঙের ফুল নিবেদন করা হয়। এছাড়া বৈজ্ঞানিকভাবেও হলুদ রঙকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মনে করা হয়, হলুদ রঙ মানসিক চাপ দূর করে মনে শান্তি আনে। এর পাশাপাশি হলুদ রঙ আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে।
বসন্ত পঞ্চমী বসন্ত কালের শুরু, এই সময়ে সর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় চারিদিক। হলুদ হয়ে ওঠে মাঠ ঘাট। তাই হলুদ রঙকে বসন্তের শুরু বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, হলুদ ফুল দিয়ে ঘর সাজালে পজিটিভ এনার্জি থাকে।
বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজোয় হলুদ রঙের মাহাত্ম তো জেনে নিলেন। এবার কী পরবেন। সরস্বতী পুজোয় ছোট থেকে বড়, মেয়েরা প্রায় সকলেই মূলত শাড়ি পরে থাকেন। আর ছেলেরা পাঞ্জাবি। কেউ ধুতি দিয়ে পাঞ্জাবি পরেন, কেউ পাজামা দিয়ে। এদিন অন্যান্য উৎসবের মতো ট্যাডিশনাল পোশাক পরতেই পছন্দ করেন সকলে। যদি কেউ শাড়ি বা পাঞ্জাবিতে স্বচ্ছন্দ বোধ না করেন তাহলে সালোয়ার কামিজ বা কুর্তা পাজামা পরতে পারেন।
বসন্ত পঞ্চমী বসন্ত ঋতুর সূচনার প্রতীক এবং বিদ্যা, সঙ্গীত ও কলার দেবী সরস্বতীর আরাধনার দিন। এই দিনে ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ কামনা করে, বিশেষত শিক্ষার্থীরা বিদ্যাবুদ্ধির জন্য পুজো করেন।
ভক্তরা ঘর ও পড়ার জায়গা পরিষ্কার করে সরস্বতীর মূর্তি বা ছবির সামনে বই, বাদ্যযন্ত্র ও শিক্ষাসামগ্রী রাখেন।
বিদ্যার দেবীর আশীর্বাদ পেতে শিক্ষার্থীরা পুজোর পর বই-পত্র স্পর্শ করেন এবং কিছু সময় পড়াশোনা থেকে বিরত থাকেন ।
বাসন্তী হলুদ রঙ বসন্তের প্রাণশক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। তাই এই দিনে ভক্তরা হলুদ পোশাক পরেন এবং হলুদ ফুল, চন্দন ও প্রসাদ নিবেদন করেন।
বসন্ত পঞ্চমীতে লাড্ডু, খিচুড়ি, কচুরি এবং মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। অনেক জায়গায় পরিবারের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি, যা ঐক্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক।
স্কুল-কলেজে সঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান হয়, যা শিক্ষা ও সৃজনশীলতার উদযাপন হিসেবে পালন করা হয়।
অনেক জায়গায় নতুন গাছ রোপণ করা হয়, যা বসন্ত ঋতুর নবজাগরণের প্রতীক। বসন্ত পঞ্চমী শুধুমাত্র এক ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি প্রকৃতি, জ্ঞান ও সংস্কৃতির মিলন ঘটায়। শুভ এই দিনে সরস্বতীর আশীর্বাদে সকলের জীবন আলোকিত হয়।