লাল ফিতার ফাস থেকে কেন এখনো মুক্ত হলো না রাজ্যের আমলা তন্ত্র। এতে ক্ষুব্ধ নবান্ন। রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তরের কর্তারা বিস্মিত যে সরকারি ভাবে রাজ্য প্রশাসন ‘পেপার লেস ‘ ব্যুরোক্রেসির পথে হাঁটলেও , এখনো অফিসগুলিতে ” বাবুদের” টেবিলে ফাইলের স্তূপ জমে থাকছে। এর জেরে প্রশাসনিক কাজের গতি শ্লথ হচ্ছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে রাজ্যের অন্যতম শীর্ষ বিভাগ অর্থ দপ্তরের উপর।
খোদ অর্থ সচিব এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছন। সম্প্রতি ২৫ জানুয়ারি অর্থ দপ্তরের একটি জরুরী নির্দেশ নামায় তিনি রাজ্যের আমলা তন্ত্রকে মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রশাসনে ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করা অর্থাৎ ই ফাইল পেশ করাটাই এখন দস্তর। কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না বলেই তার আক্ষেপ। এই ব্যাপারে তার চেতাবনি আর কোনো ভাবেই দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া (যেমন ডি পি আর, মওউ, বিভাগীয় মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদি বিষয় বাদ দিলে) অন্যান্য যাবতীয় ফাইল ই ফাইল হিসাবেই অর্থ দপ্তরে পেশ করতে হবে।
তিনি ওই নির্দেশনামায় বলেছেন, ” ২০১৮ সালেই বিভিন্ন দপ্তরকে বলে দেওয়া হয়েছিল, হাতে গুনে কয়েকটি বিষয় বাদ দিলে অর্থ দপ্তরে ই মোডেই ফাইলগুলি পেশ করতে হবে। কিন্তু প্রতিদিনই নজরে আসছে যে স্তূপীকৃত ম্যানুয়াল বা কাগুজে ফাইলই দপ্তর গুলি এখানে পাঠিয়েই চলেছে। এর চাপে গতি হারাচ্ছে অর্থ দপ্তর।” পাশাপাশি, যে সব প্রশাসনিক তথা আর্থিক সিদ্ধান্ত অর্থ দপ্তরকে না ছুঁইয়েই বিভিন্ন দপ্তর নিতে পারে, সেই সব ফাইলও কেন নবান্নে অর্থ দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তিনি তুলেছেন।
উল্লেখ্য, তিনি তার নির্দেশ নামায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের দিকে সংশ্লিষ্ট সকলকেই নজর দিতে হবে। অর্থ সচিব এই প্রসঙ্গে প্রশাসনিক ইতিবৃত্তান্তের কথাও নির্দেশ নামায় উল্লেখ করেছেন। যেমন, ২০১২ সালেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলোর ব্যাপারে দপ্তরগুলি নিজেদের স্তরেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তার জন্য অর্থ দপ্তরের মুখাপেক্ষী হওয়ার কোনো দরকার নেই। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, রাজ্য সরকারের আর্থিক দায়ভার ছাড়াই কোনো কর্মীর বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া, দু বছর পর্যন্ত স্টাডি লিভের অনুমোদন, পদোন্নতি সংক্রান্ত সমস্যার নিরসন ( বিশেষত যেখানে নয়া পদ তৈরির বিষয়ে নেই), যেসব মামলায় ফের আপিলের বা আবেদনের কোনো বিষয় নেই, অবসরের পর কোনো কর্মীকে ফের নিয়োগের ব্যাপার ( এটি কর্মী বর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দপ্তরকে ছুঁইয়ে নিলেই হবে), রাজ্য সরকারের এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে ডেপুটেশনে কোনো কর্মীকে মোতায়েনের সিধান্ত ইত্যাদি।
এক সরকারি কর্তার কথায়, ” আমরা চাই না আমলারা তাদের টেবিলে ফাইলের স্তূপের আড়ালে ঢাকা পড়ে যান। ফাইলের লাল ফিতের ফাসের জটিলতায় জর্জরিত আমলা তন্ত্রের চিরাচরিত মলিন ছবিটা আমরা প্রশাসন থেকে মুছে ফেলতে চাইছি। এক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগই পুরনো দমবন্ধ পরিবেশ থেকে আমলা তন্ত্রের মুক্তির উজ্জ্বল উদ্ধারের দিশা দেয়। বিশেষ করে জনমুখী নানা প্রকল্প বা সরকারি কাজের নানা স্তরে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগে রাজ্য যখন বারে বারে দেশের মধ্যে সেরা শিরোপা পেয়েছে, সেই সন্ধিক্ষণে একদিকে ডিজিটাল মোড অন্যদিকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরনের মাধ্যমেই আমলাতন্ত্রের রক্ষণশীলতার অচলায়তন ভাঙতে পারে।”