চাহিদার অভাব, কালের নিয়মে বিলুপ্তির পথে একসময়কার বিখ্যাত যশোরের চিরুনি শিল্প-
অর্পিতা বনিক, বনগাঁ: পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাংলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের প্রচলন রয়েছে। তবে একসময়কার বিখ্যাত সব কুটির শিল্প বর্তমানে ধুঁকছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এরকমই এক শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানকার বেশ কিছু মানুষ চিরুনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
এক সময় প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে মানুষজন এই চিরুনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল ৷ কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু কেন? দেখুন ভিডিও
বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষের কথায়,চিরুনী শিল্প বনগাঁয় একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই চিরুনী শিল্পের জন্য বনগাঁর জগৎ জোড়া খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্পের চাহিদা কমে গেছে। তাই এই শিল্পকে পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বনগাঁয় বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের চিরুনী তৈরি হয়। এই সমস্ত চিরুনী দেশের গন্ডি পেরিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিভিন্ন দেশ বিদেশে আগে যে পরিমানে চিরুনী রপ্তানি হতো সেই পরিমাণ রমরমা বাজার আর নেই। এই শিল্প বর্তমানে মৃতপ্রায়। কার্যত সেই কারণে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেজিৎ ঘোষ জানান,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং পশ্চিমবঙ্গের শিল্প উন্নয়ন কমিটির সহযোগীতায় বনগাঁর সমস্ত চিরুনী ইউনিট নিয়ে ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে। ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১২৫ টি ইউনিট আছে।
২০২০ থেকেই এই ক্লাস্টার শুরু করা হয়েছে এই এলাকায়। এই ক্লাস্টারের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সফট ইন্টারভেনশন প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে আধুনিকীকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। ডিসাইন, প্যাকেজিং সহ প্রযুক্তিগত যে সমস্ত বিষয়গুলি রয়েছে তার উপর এই ক্লাস্টার সেন্টারে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতায় আর্থিক ভাবে এবং প্রযুক্তিগত ভাবে চিরুনী শিল্পকে কিভাবে আরও উন্নত করা হবে সেই বিষয়ে এই ক্লাস্টার সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমেই আগামী দিনে চিরুনী শিল্পে উন্নতি হবে বলে সকলের ধারণা।
যদিও স্থানীয় শ্রমিকেরা জানিয়েছেন বর্তমানে এই চিরুনি শিল্প প্রায় বন্ধের মুখে ৷ সপ্তাহে তিন থেকে চার দিনের বেশি কাজ হয় না ৷ পারিশ্রমিকও কমেছে ৷ ফলে তাঁরা এখন অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন বাঁচার তাগিদে ৷