সুবীর হালদার,কলকাতা: একের পর এক চমক। এবার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে শ্রীলা চ্যাটার্জীর নাচের এলবাম প্রকাশ পেল। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতায় ওই অ্যালবাম প্রকাশ উপলক্ষে হাজির ছিলেন খোদ অভিনেত্রী। হাজির ছিলেন সুরকার অশোক ভদ্র। নাচব আমি গাইবে তুমি সিরিজে এটি শ্রীলার দ্বিতীয় এলবাম।
প্রথম এলবাম ‘এক পলকে’ রিলিজ করেছিল কুমার শানুর সঙ্গে। টাইমস মিউজিকের উদ্যোগে প্রকাশ পাওয়া ‘দিবানা মন’ নামে এই অ্যালবামটিতে শ্রীলার সঙ্গে নেচেছেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। রয়েছেন শ্রীলার সৃষ্টি ডান্স ট্রুপের শিল্পীরাও। দেখা যাবে বীরভূমের সাঁওতাল শিল্পীদের। দেখুন ভিডিও:
অ্যালবাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বনগাঁর গর্ব শ্রীলার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন ঋতুপর্ণা। ভাগ করে নিলেন শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। বললেন, খুব আনন্দ করে আমরা শুটিং করেছি। আমার মনে আছে, এই কাজটার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে চলে এসেছিলাম। প্রতিটা কাজের পিছনেই একটা পরিশ্রম থাকে। আমাদের এই কাজ সবার ভালো লাগলে আমাদেরও ভালো লাগবে। শ্রীলার নাচের শৈলী অনবদ্য। আমার সান্নিধ্যে যদি কেউ জীবনে চলার পথে এগিয়ে যেতে পারে, সবসময় আমি তার সঙ্গে আছি।
আর শ্রীলা বললেন, এই অ্যালবামের শুটিং হয়েছিল কলকাতার ইকো পার্কে। আমার মনে আছে সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। তার মধ্যেই আমরা শুটিং করছিলাম। একটা দৃশ্যে ড্রেস চেঞ্জ ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে, তখন নতুন ড্রেস আনার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু ঋতু দি কী সুন্দরভাবে যে নিজের লুক বদলে ফেলেছিলেন, আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এই জন্যই তিনি সুপারস্টার।
শ্রীলা জানালেন, সিরিজের তৃতীয় অ্যালবাম হবে জুবিন গর্গের সঙ্গে। এভাবে মোট দশটি এলবাম প্রকাশ হবে। সবগুলিই প্রকাশ করবে টাইমস মিউজিক। গানে সুর দেবেন অশোক ভদ্র।
কিছুদিন আগেই বিদেশ মাতিয়ে এসেছেন শ্রীলা। চতুর্থ গ্লোবাল মিউজিক্যাল ফেস্টিভ্যালে বিশেষ শিল্পী হিসেবে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। তাঁকে এই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওয়েসিস ফাউন্ডেশন। ইন্দো-থাই চেম্বার অফ কমার্সের উদ্যোগে ২৮ অক্টোবর ভারত ও থাইল্যান্ডের শিল্পীরা তাঁদের নৃত্য পরিবেশন করেন। আর বিদেশি শিল্পীদের সঙ্গে রীতিমতো টক্কর দিয়ে নিজের পারফরম্যান্সে সকলের মন জয় করে নেন।
তখন সবে ক্লাস থ্রি। বাবা মারা যান। সাধারণ মধ্যবিত্ত সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন মা রীনা চ্যাটার্জী। সংসারের হাল ধরতে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বাড়িতেই একটি বুটিক খোলেন। নিজের রোজগারের টাকায় ছেলে মেয়েকে মানুষ করাই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রীনাদেবীর। ছোট থেকেই নাচ পছন্দ ছিল মেয়ে শ্রীলার। মেয়ের শখ দেখে পাশে দাঁড়ান মা। আর মায়ের সমর্থন পেয়েই আনন্দে নেচে ওঠে মেয়ের মন।
বনগাঁর আমলাপাড়া থেকে যে জার্নি শুরু হয়েছিল একদিন, দিনে দিনে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়। এমনকী বাংলার বাইরে। কিন্তু ভালোবেসে একদিন যে নাচ বেছে নিয়েছিলেন শ্রীল, তা যে এমন খ্যাতির মুকুট পরাবে ভাবতে পারেননি শিল্পী নিজেই। সম্প্রতি ভুবনেশ্বরের উৎকল মঞ্চে যখন তাঁর হাতে উঠেছে ‘গুরু পদ্ম’ পুরস্কার। কত্থক শাস্ত্রীয় নৃত্যে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে শ্রীলাকে।
শিল্পীর কথায়, বিদেশে পারফরম্যান্স, দেশে সম্মান, পুরস্কার দ্বায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দিয়েছে। আরও ভাল কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে এই পুরস্কার। শ্রীলার কথায়, মা না থাকলে উত্তরণের সিঁড়িটাই খুঁজে পেতাম না। আর এখন বিরাটি কলেজের অধ্যাপক স্বামী সুমিত মুখার্জীর সাহায্য ও অনুপ্রেরণা আমাকে ভালো কাজ করার ইচ্ছে জাগায় সবসময়। তাঁর নাচের স্কুল ‘সৃষ্টি’ কে নিয়েও অনেক ভাবনা রয়েছে শ্রীলার।