TMC: কানাঘুষোই সার, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সেই ‘অভিষেক’, বিধাননগরে মেয়র কৃষ্ণাই

0
816

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: জল্পনাই সার, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রইলেন সেই অভিষেক বনন্দ্যোপাধ্যায়৷’এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতির সপক্ষে প্রকাশ্যেই সওয়াল করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এ নিয়ে তুমুল জলঘোলা হয়। ফিরহাদ হাকিম বিবৃতি দিয়ে বলেন, দল এই নীতি সমর্থন করে না। মমতা ব্যানার্জিই শেষ কথা বলবেন। এরপর কানাঘুষো শোনা যায়, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে চলেছেন অভিষেক। কিন্তু আজ তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষে সব জল্পনার অবসান ঘটল। বহাল রইলেন অভিষেকই।

৬ দিনের ব্যবধানে তাঁর পুরনো পদেই ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নতুন ওয়ার্কিং কমিটিতেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব তাঁকেই দিলেন সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, খুব স্বাভাবিক নিয়মে আর পাঁচ জনের মতো যখন অভিষেকের পদ চলে যায়, তখন দলের মধ্যে ও রাজনৈতিক মহলে এক শ্রেণির মধ্যে যুদ্ধজয়ের আনন্দ ছিল। কেউ কেউ এও দাবি করতে শুরু করেছিলেন যে অভিষেককে চাপে রাখতে দলে একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করতে পারেন দিদি। অভিষেকের আলাদা করে বিশেষ মর্যাদা যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই সেই ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেওয়া হল তাই নয়, জাতীয় স্তরে সাধারণ সম্পাদকের পদ আর কাউকে দেওয়া হল না। অর্থাৎ ওই পদে অদ্বিতীয় থাকলেন অভিষেক।


এ ক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা ভাল যে, কংগ্রেস বা বিজেপির মতো জাতীয় দলের সভাপতির পর একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকেন। তাঁদের মধ্যে অলিখিত ভাবে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্ব থাকে সবথেকে বেশি। অর্থাৎ দলীয় সভাপতির পর সাংগঠনিক ভাবে সব থেকে বেশি মর্যাদা ও ক্ষমতা থাকে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের।


তৃণমূল জাতীয় দল হলেও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বরাবরই এক জন ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে সেই পদের দায়িত্ব সামলেছেন মুকুল রায়। মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পর সেই পদের সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সুব্রত বক্সীকে। তার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দেন মমতা। এবং এও ফের প্রমাণিত হল, সাংগঠনিক ভাবে দিদির পরই দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী নেতা হলেন অভিষেকই।


আবার মজার ব্যাপার হল, জাতীয় দলগুলি তো বটেই আঞ্চলিক দলগুলিতেও সহ সভাপতির পদ অনেকটাই থাকে আলঙ্কারিক। তাঁদের সাংগঠনিক দায়িত্ব বিশেষ থাকে না। শুনতে মনে হয়, সভাপতির পরই বোধহয় সহ সভাপতির গুরুত্ব, কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়।

অন্যদিকে দল ছেড়ে দিয়ে ফের তৃণমূলে ফিরে এসে টিকিট পাওয়া সব্যসাচীকে বিধাননগরের মেয়র করলেন না দিদি। দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন, কঠিন সময়ে দায়িত্ব সামলানো কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে বিধান নগরের নতুন মেয়র হিসেবে মনোনীত করল তৃণমূল।

এদিন জাতীয় কর্মসমিতিতে চন্দননগরের মেয়র করা হয়েছে রাম চক্রবর্তী এবং আসানসোলের মেয়র করা হয়েছে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়কে।
ভোটের ফলপ্রকাশের দিনই দিদি জানিয়েছিলেন, শিলিগুড়ির মেয়র হবেন গৌতম দেব।

কারণ তিনিই সেখানে মোস্ট সিনিয়র। তবে বাকি তিন মেয়রের নাম চূড়ান্ত হবে দলে।সেই মতো আজকে কর্মসমিতির বৈঠক বসে। এবং বাকি তিন কর্পোরেশনের মেয়রের নামে সিলমোহর দেয় তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতি।

এমনিতে জেলার কর্পোরেশনের মেয়র কারা হবেন তাতে স্থানীয়দেরই আগ্রহ থাকে। তবে এবার বিধাননগর নিয়ে সার্বিক ভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে কৌতূহল ছিল। তার মূলে ছিলেন সব্যসাচী দত্তই। অনেকের মতে, সব্যসাচীকে টিকিট দেওয়া নিয়ে যে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য ছিল তা অভিষেকের সাম্প্রতিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

যেখানে অভিষেক বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব্যসাচীকে টিকিট দিয়েছেন। তৃণমূলের তরুণ নেতাটি এও বলেছিলেন, মমতা উদার। তিনি নন, তিনি প্র্যাক্টিক্যাল, বিজ্ঞানসম্মত। ফলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, সব্যসাচীকে মেয়রের আসনে বসিয়ে দেওয়া হবে নাকি।
ভোটের ফলের দিন সেই জল্পনা আরও উস্কে যায়। দেখা যায় সস্ত্রীক সব্যসাচী প্রথমে পৌঁছে গিয়েছেন দিদির বাড়িতে। তাঁকে প্রণাম করে সটান অভিষেকের বাড়ি।

এই ফ্রেম তৈরি হওয়ার খানিক পরেই দিদির বাড়িতে যান কৃষ্ণা। ভোটের ফল ঘোষণার দিনই দিদি বলেছিলেন, কৃষ্ণার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আস্থার সম্পর্ক। মমতা যখন ১৯৮৪ সালে যাদবপুরে প্রথম জিতেছিলেন তখন দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে থাকতেন কৃষ্ণা। দু’জনে একসঙ্গে রান্না করে খেতেন।
তৃণমূলের অনেকে এও বলছিলেন, সব্যসাচীকে মেয়র করলে দলের নিচুতলার কর্মীদের আবেগে ধাক্কা লাগতে পারে। কারণ দলের কঠিন সময়ে তিনি বিজেপিতে ছিলেন। আবার সুসময়ে ফিরেছেন।

এখন তাকে যদি সরাসরি মেয়র করে দেওয়া হয় তাহলে মনে হতেই পারে কঠিন সময়ে দায়িত্ব সামলানোদের গুরুত্ব নেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, সেসব বুঝেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়েছেন মমতা। কারণ তাঁর মতো আর নিচুতলার পালস ক’জন বোঝেন?

Previous articleBiswajit Das: ‘আজব’ দাবি বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ-এর, মুকুলের সুরেই বললেন, ‘আমি বিজেপিতেই আছি !’
Next articleBangaon Municipal Election 2022: বিধায়ক বিশ্বজিৎ-এর উপস্থিতিতে প্রার্থীপদ থেকে সরে দাঁড়ালেন বনগাঁর নির্দল প্রার্থী তরুন সরকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here