দেশের সময় : ২০১৬- র বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপি কী করছে না করছে বা তাদের প্রার্থী তালিকা কীভাবে প্রকাশ হচ্ছে সেই ব্যাপারে অনেকেরই কোনও হেলদোল ছিল না। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যা ভোট হয়েছে, বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছিল দিল্লি থেকে। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ভোট এবং চার পুর নিগমের ভোটে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেন। কিন্তু ১০৮ পুরসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রীয় ভাবে ঘোষণা করল না গেরুয়া শিবির।
৯ ফেব্রুয়ারি বাংলার ১০৮ পুরসভা ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। অবশেষে সোমবার সন্ধ্যায় জেলাগত ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বিজেপি।
বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা উত্তর পাড়া, কোন্নগর, রিষড়ার মত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল। আবার গঙ্গার উল্টো পাড়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা,ব্যারাকপুর ,উত্তর ব্যারাকপুর, খড়দহ, পানিহাটির মত পুরসভা গুলির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল। উত্তরবঙ্গ, রাজ্যের পশ্চিম অঞ্চল একইভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল বিজেপি।
বিজেপির অন্দরে মতুয়াদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে শান্তনু ঠাকুরের অন্য সুর শোনা যাচ্ছিল বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে। বিদ্রোহের সুর বনগাঁ ছাড়িয়ে পৌঁছেছিল দিল্লি পর্যন্ত। শান্তনু ঠাকুর অমিত শাহের সঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব নিয়ে বৈঠক করবেন বলেও জানা গিয়েছিল।
বনগাঁ ছাড়িয়ে বিজেপির অন্দরের বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়ে পড়ছিল রাজ্যেও। দল ভারী করতে শান্তনু ঠাকুর, রীতেশ তিওয়ারি এবং জয়প্রকাশ মজুমদারদের মতো হেভিওয়েট ‘বিদ্রোহী’ নেতাদের সঙ্গে রাজ্য় কমিটি নিয়ে বৈঠকও করেন বনগাঁর সাংসদ। বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল পিকনিকও। বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরে এই পিকনিক পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে কতকটা শান্তনুর মান ভাঙাতেই তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতা দেবদাস মণ্ডলকে টিকিট দেওয়া হল বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনের জন্য।
সোমবার বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনের কোঅর্ডিনেটর তথা বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্ত্তনীয়া সাংবাদিক বৈঠক করে দলের প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেন। এই তালিকায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে নাম দেখা গেল সাম্প্রতিক রাজ্য বিজেপির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো শান্তনু ঠাকুর এর অনুগামী বলে পরিচিত দেবদাস মণ্ডলের।
এদিন পুরসভা নির্বাচনের জন্য বনগাঁ পুরসভার ২২ টি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য বিজেপি। উল্লেখযোগ্যভাবে আজকের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত অশোক কীর্ত্তনীয়াও এই বিজেপির অভ্যন্তরে ওই বিদ্রোহীদের অন্যতম। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বনগাঁ পুরসভা সংক্রান্ত প্রস্তুতি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উত্তরের এই বিজেপি বিধায়ক। তবে পুরভোটের প্রার্থী তালিকা সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করছেন সেই বিধায়কই। তাই রাজনৈতিন মহলের একাংশের মতে বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহের আঁচ কিছুটা কমেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে শান্তনু ঠাকুরের ‘জনসম্পর্ক যাত্রা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল। এক সপ্তাহ আগে কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কে অনুষ্ঠিত বিদ্রোহীদের পিকনিকে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল। এহেন দেবদাসের নাম প্রার্থী তালিকায় থাকা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
প্রার্থী হিসেবে দেবদাস মণ্ডলের নাম ঘোষণার পর তিনি বলেছেন, “বনগাঁর মানুষ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। তাঁরা ভীত সন্ত্রস্ত। ২২ টি ওয়ার্ডের মানুষ এই পুরসভা বিজেপির হাতে তুলে দেবে।” শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, “আমি ভারতীয় জনতা পার্টির অনুগামী, আমি মোদীজির অনুগামী, আমি সংগঠনের অনুগামী। শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক। তিনি আমাদের বনগাঁর সাংসদ। তিনি একজন মন্ত্রী।”
অনেকের মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর তৃণমূলে যে বিভ্রাট তৈরি হয়েছে এবং তাকে ঘিরে জেলায় জেলায় যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে, তা দেখেই হয়তো ঝুঁকির পথে হাঁটল না গেরুয়া শিবির। আবার পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে যে কোন্দল তা ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় ছড়িয়েছে পড়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে কোন্দল হলে তা সামগ্রিক ভাবে ভোটে প্রভাব ফেলত। সেসব ভেবেই হয়তো সুকান্ত মজুমদার, অমিতাভ চক্রবর্তীরা এই পথে হাঁটলেন।