অন্বেষা সেন: শিল্পীর তুলির টানে জেগে ওঠে প্রতিমার ত্রিনয়ন। বলা যায়, দুর্গাপূজার সূচনাই হয় এই চক্ষুদানের মাধ্যমে।
শিল্পী প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘প্রতিমার চোখই সবার আগে নজর কাড়ে। অত্যন্ত নিপুণভাবে মা দুর্গার চোখ আঁকতে হয়।
রীতি অনুযায়ী, মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পরে সকালে হতো প্রতিমার চক্ষুদান পর্ব। কিন্তু দেবীপক্ষের শুরু মহালয়ার দিনে। তাই অতীতে অনেক জমিদার বাড়িতে এই দিনটিকেই শুভ মেনে প্রতিমার চক্ষুদান করা হতো।
তবে ধর্ম মতে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হতো মহাসপ্তমীতে। কিন্তু এখন সেই নিয়মে বদল এসেছে। পটুয়া পাড়ায় বেশির ভাগ প্রতিমার কেবল চোখ আঁকার কাজটা করেন তরুণ শিল্পী সেন্টু ভট্টাচার্য তাঁর কথায় , ‘‘একটা সময় ছিল যখন শিল্পীরা অল্প সংখ্যায় প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন প্রতিমা তৈরির সংখ্যাও বেড়েছে। তা ছাড়া, অনেক পুজোর উদ্বোধন এখন মহালয়ার আগেই হয়ে যায়। তাই নিয়ম মেনে মহালয়ায় চক্ষুদান করা সম্ভব হয় না। অনেক আগে থেকে তুলি ধরতে হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকেই শিল্পীরা চক্ষুদানের কাজ শুরু করেন।’’
শিল্পী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চোখের সমস্যার জন্য আমি নিজে একটানা চোখ আঁকতে পারিনা। আমার ছেলেরা এবং অন্যান্য নবীন শিল্পী আমাকে সহায়তা করেন।’’
দুর্গাপুজোয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার হলে চক্ষুদান। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী সপ্তমীর সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবীকে কাজল পরানো হয়। প্রথমে ত্রিনয়ন বা ঊর্ধ্বনয়ন, তার পরে বাম চক্ষু এবং শেষে ডান চক্ষু মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আঁকা হয়।
চক্ষুদানের পরই প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পর্দায় ঢাকা ঘেরাটোপে পূজারী এবং তান্ত্রিকদের উপস্থিতিতে লেলিহান মুদ্রায় মোট ১০৮ বার বীজমন্ত্র জপ করা হয়। মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী।