দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একেই বলে জীবনীশক্তি। বয়স ৯৫। শরীরে থাবা বসিয়েছে মারণ ভাইরাস৷ হাসপাতালে চলছে বাইপ্যাপ অক্সিজেন সাপোর্ট। শ্বাসকষ্ট নিয়েও অপরিসীম মনের জোর বৃদ্ধার। হাসপাতালের বেডে বসেই নাচছেন গরবা। শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছনো এই বৃদ্ধার মনবল চমকে দিয়েছে নেটিজেনদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হতেই ভাইরাল হয়ে যায় বৃদ্ধার নাচের এই ভিডিয়ো। মুহূর্তেই লাইক ও শেয়ারের বন্যা বয়ে যায়। নেটিজেনরা কুর্নিশ জানাচ্ছেন এই করোনা রোগীকে।
দেশজুড়ে আছড়ে পড়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। চারিদিকে চলছে হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার। অক্সিজেনের অভাবে নিত্যদিনই মৃত্যু ঘটছে একের পর এক করোনা রোগীর। এত খারাপের মধ্যেও ছোট ছোট ঘটনা করোনা যুদ্ধে দেশবাসীকে উৎসাহ দিচ্ছে। গুজরাটের রাজকোটের এই বৃদ্ধার ভিডিয়োটিও ঠিক তেমন। মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই তাঁর অদ্ভুত জীবনীশক্তি মনবল বাড়াচ্ছে নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের। কম বয়সেই প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে যখন আইসিইউ-তে ভর্তি হচ্ছেন একের পর এক করোনা রোগী। তখন ৯৫ বছরের বৃদ্ধা সকলকে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে করোনাকে ভয় না পেয়ে বাঁচার তাগিদটুকু জিইয়ে রাখতে হয়। সকলেই স্যালুট জানাচ্ছেন তাঁকে। দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন নেটিজেনরা।
মঙ্গলবারের তুলনায় ফের সামান্য বাড়ল দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কিন্তু, ক্ষীণ আশার আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে দেশে। লাগাতার দু’দিন দৈনিক আক্রান্তের তুলনায় বেড়েছে সুস্থতার সংখ্যা। তবে কি কোভিড যুদ্ধে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ভারতের? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান কী জানাচ্ছে?
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪২১ জন। একদিনে দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪২০৫ জনের। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড মুক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৮ জন। যা আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তবে কি সংক্রমণের গ্রাফ এবার নিম্নমুখী। যদিও এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। একদল চিকিৎসক মনে করছেন, সংক্রমণের শিখর এখনও ছোঁয়া বাকি রয়েছে। অপরদিকে, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছে শিখর ছুঁয়ে এবার ধীরে ধীরে নামছে ভারত৷
দৈনিক আক্রান্ত এখন কিছুটা কমেছে দেশে। পর পর চার সপ্তাহ ধরে চার লাখের বেশি দৈনিক সংক্রমণ ধরা পড়ছিল। গত কয়েকদিনে তা সাড়ে তিন লাখে নেমে গেছে। তবে সংক্রমণের হার কমেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলছে, মে মাসের ৫ তারিখ অবধি ৩০ লাখের বেশি সংক্রমণ ধরা পড়েছিল দেশে। সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার কারমেই আক্রান্তের সংখ্যা এত দ্রুত গতিতে বেড়েছে। দেশে এখন গড়ে কোভিড পডিটিভিটি রেট তথা সংক্রমণের হার ১৭.৫৬ শতাংশ। কিন্তু হিসেব বলছে, অন্তত ২৭টি রাজ্যে পজিটিভিটি রেট তথা সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের বেশি।
যত জন কোভিড রোগীর করোনা পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যতজনের সংক্রমণ ধরা পড়ছে, সেই হিসেবকেই বলে পজিটিভিটি রেট তথা সংক্রমণের হার। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, দেশের ৭৩৪টি জেলার মধ্যে ৬৪০টি জেলায় এই পজিটিভিটি রেট জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। পুদুচেরী, গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশে সংক্রমণের হার সাঙ্ঘাতিকভাবে বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে কোভিড পজিটিভিটি রেট ৩৪ শতাংশের বেশি।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) বলছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুত গতিতে। হিমাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে সংক্রমণের হার বেশি। রাজস্থানেও তাই। রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্ট সব জায়গায় ঠিকমতো হচ্ছে না বলেই দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের, বদলে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হচ্ছে। সে কারণেই বেশিরভাগ কোভিড পজিটিভ রোগীকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তার মধ্যেই কোভিডের ডবল ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ বাড়ছে রাজ্যে রাজ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, এই ডবল ভ্যারিয়ান্ট বা ভারতীয় প্রজাতি ৪৪ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতেরই দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই ডবল ভ্যারিয়ান্টের তিনটি ছোঁয়াচে স্ট্রেন ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা। এই ভাইরাল স্ট্রেনগুলো সুপার-স্প্রেডার, দ্রুত ছড়াতে পারে মানুষের শরীরে। করোনার মধ্যে আবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মাথাব্যথার কারণ। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশায় কোভিড রোগীদের মধ্যে কালো ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ছে। মধ্যপ্রদেশে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, মহারাষ্ট্রে দু’হাজারের বেশি সংক্রমিত। করোনার মধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন নির্দেশিকাও জারি করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সকলকে সাবধানে থাকতে বলা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ করে নজর দিতে বলা হচ্ছে।