বনগাঁ লিটিল ম্যাগাজিন মেলা নিয়ে –
‘দেশের সময়’ এ প্রতিবেদন লিখছেন-
পার্থ সারথি দে: বনগাঁ শহর জুড়ে এখন উৎসব। পৌষ মেলার পর হস্তশিল্প মেলা ।এরপর বনগাঁ থানার মাঠে 18 জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে লিটল ম্যাগাজিন মেলা। এতদিন কেবল মাত্র বাংলা একাডেমি চত্বরে রাজ্যজুড়ে প্রকাশিত লিটিল ম্যাগাজিনের মেলা বসতো ।ইতিমধ্যেই সেই রাজ্য কেন্দ্রিক মেলার ব্যপ্তি ছড়িয়েছে রাজ্য জুড়ে। কখনো তা বিষ্ণুপুরে, কখনো তা বর্ধমানে।এবার বনগাঁয়।
লিটিল ম্যাগাজিনকে কেন্দ্র করে এই জাতীয় মেলা বনগাঁয় এই প্রথম ।একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রুদ্র প্রসাদ ঘোষ ,অর্পণ বিশ্বাস ,রাহুলেরা দিনরাত এক করে বনগাঁর সংস্কৃতির মুকুটে আরেকটি পালক যোজনা করতে চলেছেন।
লিটিল ম্যাগাজিন আর বাংলার সংস্কৃতি এখন সমার্থক ।কেননা এই অনু পত্রগুলি ই বাংলা সাহিত্যের মূল ধারাকে বহন করে চলেছে ।কবি বুদ্ধদেব বসু প্রথম এই ক্ষুদ্র পত্র-পত্রিকাগুলোকে ‘ *লিটিল* *ম্যাগাজিনে’র* অভিজাত সম্মাননা জ্ঞাপন করেন।
লিটিল ম্যাগাজিন বলতে একটু কৃশতনু ,ক্ষুদ্রকায় নিয়মিত ও অনিয়মিত প্রকাশে বেকার যুবকের সঞ্চিত অর্থের ব্যয় ইত্যাদি বোঝালেও বর্তমানে অনেক ম্যাগাজিন দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো আকার আয়তনে আর লিটিল নয়। তা অনেকটাই বৃহৎ আকৃতির। এই লিটিল ম্যাগাজিনের মধ্যেই অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকের বিশিষ্ট রচনা প্রকাশিত হয়েছে ।এ প্রসঙ্গে অমিয়ভূষণ মজুমদার কমল কুমার মজুমদার এর নাম যেরকম মনে পড়বে তেমনি যারা খুব জনপ্রিয় লেখক যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও চলে আসবে।অনেকে তো আবার শুধুমাত্র লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক রূপে স্বীকৃত। তা এক আত্মশ্লাঘার ব্যাপার হয়ে আছে সেই সব লেখকদের কাছে। যাদের লেখা শুধুমাত্র লিটিল ম্যাগাজিনেই নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে বলা যেতে পারে।
বিংশ শতাব্দীর চারের দশক থেকে লিটিল ম্যাগাজিন কৌলিন্য পেতে শুরু করে ।সে সময়ে কবিতা পত্রিকা পূর্বাশা পত্রিকার সাহিত্য জগতে উপস্থিতি ছিল নিয়ামক নক্ষত্রের মতো।জীবনানন্দ দাশ থেকে শুরু করে বিষ্ণু দে সকলেই এই সমস্ত লিটিল ম্যাগাজিন লিখেছেন ।আজকে যেমন লিটল ম্যাগাজিন আর প্রাতিষ্ঠানিক কাগজের মধ্যে একটা বেশ সমান্তরাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছে আগে কিন্তু এটা ছিল না ।এখন যারা লেখালেখি করছেন তাদের একটা বৃহৎ অংশই ভাবেন কবে আমার লেখা *দেশ* পত্রিকায় ছাপা হবে ।এটাও ঠিক যে এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকাশিত পত্রিকায় নিজের লেখা ছাপা হলে তার পরেই একটা কল্কে পাওয়া যায়। অন্যরা একটু সমীহ করে। বাংলা একাডেমির কবিতা পাঠের আসরে ডাক পাওয়া যায় ।উচ্চ আসনে বসা যায়। কলকাতার অভিজাত প্রকাশনী থেকে বই বের করা যায় ।যদিও এখন লেখার ক্ষেত্রে শোনা যায় ,লেখা থেকেও চ্যানেল অর্থাৎ যোগাযোগ জরুরি ।ঠিক যেমন পুরস্কার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এরকম কটু কথা শোনা যায়। যাই হোক বনগাঁ শহরে এই প্রথম লিটিল ম্যাগাজিন কে কেন্দ্র করে মেলা বসছে ।এ দারুন আনন্দের ।আমাদের বনগাঁ বাসির গর্বের বিষয়।