দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃকথায় বলে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। বাস্তবে তা কিন্তু ততটাও সহজ নয়। ‘মা’ এমন একটা শব্দ যা অমূল্য, ভাষায় প্রকাশ হয় না।
মাতৃত্বের এমনই এক অনন্য নজির গড়লেন এক কানাডিয়ান মহিলা হকি খেলোয়াড়। সেরা স্মল নামের এই মহিলা হকি খেলোয়াড় বিশ্বব্যাপি মায়েদের সামনে প্রমাণ করলেন সন্তান পালনের কোনও আলাদা সময় হয় না। একটি হকি ম্যাচের বিরতিতে ড্রেসিংরুমে নিজের আট সপ্তাহের কন্যাসন্তানকে স্তন্যপান করালেন স্মল। সেই ছবি এখন ভাইরাল নেট দুনিয়ায়।
বছর চব্বিশের সেরা স্মল হকি-কে এতটাই ভালবেসেছেন যে সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র আট সপ্তাহের মধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তবু তিনি যে একজন মা, সেটা তিনি ভোলেন নি। ম্যাচের ব্যস্ততায় সে দিন সন্তানের জন্য ব্রেস্টপাম্প আনতে ভুলে গেছিলেন তিনি। তাই ম্যাচের বিরতিতে লকার রুমে দলের সদস্যরা যখন বিশ্রাম নিয়ে ফের মাঠে নামার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন সেরা ব্যস্ত ছিলেন তাঁর সন্তানকে স্তন্যপান করাতে। অন্যান্যরা তখন অবাক হয়ে তাঁকে দেখছেন, ভাবছেন কত সহজেই সেরা তাঁর মাতৃত্বের সবচেয়ে বড় কর্তব্যটি পালন করছেন।
সেরা বলেছেন, ‘‘আমি প্রথমে আমার সন্তান এলি-কে কভারে ঢেকেই স্তন্যপান করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি কারণ এলি’র জিভে জন্মগত কিছু সমস্যা থাকায় তা সম্ভব ছিল না। আমি মনে করি সন্তানকে স্তন্যপান কোনও বড় ব্যাপার নয়। প্রকাশ্যে স্তন্যপান করানোকে এখনও ট্যাবু হিসাবেই ধরা হয়, যেখানে এটা একজন মায়ের প্রধান দায়িত্ব।’’
সেরা নিজেই এই ছবি মিল্কি ওয়ে ল্যাক্টেশন সার্ভিস নামের এক দুগ্ধ প্রস্তুতকারী সংস্থাকে পাঠিয়েছিলেন। এই সংস্থাই ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করেছিল। ছবিটি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলেছে, প্রশংসাও কুড়িয়েছে। প্রচুর শেয়ার হয়েছে এই ছবি। ফেসবুকে লাইকের সংখ্যাও কয়েক লক্ষ।
সেরা এই অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া পেয়ে রীতিমত আপ্লুত। তিনি এও বলেছেন যে তিনি কোনও নজির তৈরি করেননি, করতে চানওনি। যা করেছেন আর পাঁচ জন মায়ের মত‌ো তাঁর সন্তানের জন্য করেছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, অনেক মানুষ এই ছবি প্রকাশ্যে আসায় বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন। সেরা বলেছেন আধুনিক সমাজ নারীর স্তনকে যৌনতার তালিকায় ঠেলে দিয়েছে, তাই তিনি নিজে এই ছবি পোস্ট করতে ভয় পেয়েছেন। একজন মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পেরে সেরা নিজেও খুশি এবং গর্বিত।
তবে ভাইরাল হওয়া এই ছবি যে শুধুই প্রশংসিত হয়েছে তা নয়। বেশ কয়েকজন শিশু বিশেষজ্ঞ এই ছবি দেখে বলেছেন, ‘‘এটা একটা প্রাকৃতিক ও সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এই ছবিতে তা যৌনতাসূচক।’’ টরন্টোর কিন্ডারকেয়ার পেডিয়াট্রিকসের চিকিত্সক ডেন ফ্লান্ডার্স ছবি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এই ছবি অত্যন্ত হতাশাজনক। এটা একজন মহিলার জন্য, সর্বপরি একজন মায়ের জন্য অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। শিশুর স্তন্যপান কোনও সুপারমার্কেটে শপিংয়ের সময়েও হতে পারে আবার চলন্ত গাড়িতেও হতে পারে। তাই এটার জন্য এত আবেগপূর্ণ পোস্ট করার প্রয়োজন নেই। তবে অবশ্যই বর্তমান সমাজের নিরিখে এই ছবি অনেক প্রথাগত ধ্যানধারণা বদলে দেবে।’’

(স্টোরি- সংবাদ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here