দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দু’সপ্তাহ ধরে বেজিং-নয়াদিল্লি লম্বা চওড়া কূটনৈতিক বিবৃতিতে কমতি হয়নি। কিন্তু তার পরিণতি কী হল?
সোমবার রাতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দু’পক্ষের সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘাতে ভারতীয় সেনার এক অফিসার ও দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সেনার তরফে এদিন এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গালওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দুই পক্ষই আলোচনায় বসেছিল। কিন্তু তারই মধ্যে সোমবার রাতে মুখোমুখি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাতেই ভারতের এক সেনা অফিসার ও দুই জওয়ান মারা গিয়েছেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অঞ্চলে দু’দেশে সেনাবাহিনীর কমান্ডার স্তরে বৈঠক চলছে। উত্তেজনা কমানোর জন্য দু’দেশই আলোচনা চালাচ্ছে।
লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতে ৫ চিনা সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করছে বেজিং। চিন প্রশাসনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সাংবাদিক টুইট করে তা জানিয়েছেন।
Reports say 5 PLA soldiers were killed and 11 were injured at LAC China-India border yesterday.
— Wang Wenwen (@WenwenWang1127) June 16, 2020
শুরুতে অবশ্য হতাহতের কথা স্বীকার করেনি বেজিং। কিন্তু পরে শি চিনফিং প্রশাসন কৌশল বদলে দাবি করতে শুরু করেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় সেনা তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিল।
বেজিং প্রশাসনের সেই টুইটের পরই গ্লোবাল টাইমসের সিনিয়ার জার্নালিস্ট ওয়াং ওয়েনওয়েন টুইট করে বলেন, ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পিপলস লিবারেশন আর্মির পাঁচ সৈনিক মারা গিয়েছেন বলে খবর। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।
Based on what I know, Chinese side also suffered casualties in the Galwan Valley physical clash. I want to tell the Indian side, don’t be arrogant and misread China’s restraint as being weak. China doesn’t want to have a clash with India, but we don’t fear it.
— Hu Xijin 胡锡进 (@HuXijin_GT) June 16, 2020
পরে গ্লোবাল টাইমের প্রধান সম্পাদক হু শিজিন টুইট করে বলেছেন, “লাদাখে ভারতীয় সেনার সঙ্গে হাতাহাতিতে চিনা সেনারও কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। আমি ভারতের উদ্দেশে বলতে চাই, এত উদ্ধত হয়ো না, চিনের সংযমকে দুর্বলতা ভেবো না।”
লাদাখের সংঘাতে ভারতের এক কমান্ডিং অফিসার তথা কর্নেল পদমর্যাদার অফিসার এবং দুই সেনা জওয়ানের যে মৃত্যু হয়েছে তা নয়াদিল্লি ইতিমধ্যে স্বীকার করেছে। গোড়ায় ভারতীয় সেনবাহিনী তাদের বিবৃতিতে অবশ্য জানায়নি যে চিনা সেনারও মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে বিবৃতিতে সংশোধন করে জানিয়েছে যে হতাহত হয়েছে দুই বাহিনীতেই।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, দু’পক্ষের মধ্যে এই যে হতাহত হয়েছেন তাতে কোনও গুলি সম্ভবত চলেনি। লাঠিসোটা, পাথর ইত্যাদি দিয়েই রীতিমতো মারামারি হয়েছে।
লাদাখে উত্তেজনা কমানোর ব্যাপারে গত দু’সপ্তাহ ধরে বেজিং-নয়াদিল্লি বিবৃতি দিচ্ছে। দু’পক্ষের মেজর জেনারেল স্তরে বৈঠকও শুরু হয়েছে। যা বর্তমানে ধারাবাহিক ভাবে চলছে। কিন্তু তার মধ্যেই তুমুল সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় গতকাল। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, উত্তেজনা প্রশমনের প্রয়াস শুরু হয়েছে। তা কতদূর ফলপ্রসূ হয় এখন সেটাই দেখার।
১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম পিপলস লিবারেশন আর্মির সঙ্গে সংঘাতে প্রাণ গেল ভারতীয় জওয়ানদের। সেনা সূত্রে খবর, গুলি চালানো হয়নি। হাতাহাতিতেই মৃত্যু হয়েছে সেনা অফিসার ও দুই জওয়ানের।
ভারতের তরফে বলা হয়েছে, দু’পক্ষেরই জওয়ান মারা গিয়েছে। তবে কতজন চিনা সেনার মৃত্যু হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বেজিংয়ের তরফে গোটা ঘটনার জন্য দিল্লির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, চিনের দাবি, ভারতীয় জওয়ানরাই প্রথমে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চিনা সেনাদের উপর হামলা চালায়। তারপরই সংঘাত শুরু হয়।
গত মাসে পূর্ব লাদাখের প্যানগং লেকের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে তীব্র সংঘাতের ঘটনা ঘটে। সেনা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রুটিন টহলদারির সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ইন্দো-টিবেটান বর্ডার ফোর্সের জওয়ানদের আটকে রাখে পিএলএ। কেড়ে নেওয়া হয় অস্ত্রও পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরই লাদাখে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম বাড়াতে শুরু করে নয়াদিল্লি।
এরপরই চাঞ্চল্যকর উপগ্রহ চিত্র সামনে আসে। যাতে দেখা যায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অদূরে বিমানঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছে চিন। তাতে দাঁড় করানো রয়েছে যুদ্ধ বিমান। চিনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বক্তৃতা করতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিঙ সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, অতিশয় খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
তারপর যদিও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বরফ গলতে শুরু করেছিল। লাদাখ থেকে ধাপে ধাপে সেনাও সরিয়ে আনছিল ভারত। কিন্তু তার মধ্যেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায়। যা দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়াবে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।