দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃলকডাউন যদি তুলে নিতেই হয়, তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন ‘চূড়ান্ত নজরদারি’। তা না হলে সমূহ বিপদ সামনে। কারণ প্রথম আক্রমণের পরে স্তিমিত হয়ে গেলেও, লকডাউন শিথিল করা মাত্র দ্বিতীয়বার নতুন এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই। ফলে সতর্কতা আরও তীব্র ও তীক্ষ্ণ করা ছাড়া উপায় নেই। স্পষ্ট ভাষায় এমনটাই জানিয়ে দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বছরের গোড়া থেকে বিশ্বের কয়েকশো দেশে থাবা বসানোর পরে, লাখ লাখ প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পরে করোনাভাইরাসের প্রথম দফার সংক্রমণের তীব্রতা ক্ষীণ হয়েছে বেশ কিছু দেশে। সেসব দেশের মধ্যে একাধিক দেশ ইতিমধ্যেই লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে গত কয়েক দিন ধরেই। কিন্তু হু-এর আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসটিও চরিত্র বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। ফলে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর খবর আসছে।
ইতিমধ্যেই জার্মানিতে অসুখের প্রকোপ কমার পরে লকডাউন তোলার পদ্ধতি শুরু করতেই নতুন করে একগুচ্ছ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হদিস মেলে। করোনাকে রুখে দিতে সফল হওয়া দেশ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়াতেও একই চিত্র দেখা যায়। লকডাউন তুলে নাইটক্লাবগুলি খুলে দিতেই করোনাভাইরাসের একটি নতুন চরিত্রের ও সংক্রমণের খোঁজ পাওয়া যায়।
ফলে এই অবস্থায় বিশ্বজুড়ে লকডাউন পুরোপুরি উঠে গেলে তা আরও অনেকটা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে হু। আর সেই ছড়িয়ে পড়া রুখতেই ‘চূড়ান্ত নজরদারি’ প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা। সারা বিশ্বকে সতর্ক করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কার্যক্রমের প্রধান ডাঃ মাইক রায়ান।
ডক্টর রায়ান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের আক্রমণে তছনছ হওয়ার পরে, দীর্ঘ লকডাউন পার করে অনেক দেশই কড়া লকডাউন আলগা করছে। দেশ সচল রাখার স্বার্থেই অনন্ত লকডাউন তোলার প্রয়োজনের কথা শিকার করেও তিনি কড়া ভাবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, লকডাউন তুললে সংক্রমণ নতুন করে ছড়িয়ে পড়া রুখতে ‘চূড়ান্ত নজরদারি’ প্রয়োজন। কারণ সংক্রমণের ‘ক্লাস্টার’গুলি যদি থেকে যায়, তাহলে রোগটি নিম্নস্তরে চলতেই থাকবে। ফলে ভাইরাসটি আবার আক্রমণ করবে পুরোদমে, এমন ঝুঁকি থেকেই যায়।
হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রোস আধানম ঘেব্রেসিয়াসও একই সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, “পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য খুব ধীরে ধীরে তুলতে হবে লকডাউন। কড়া নজর রাখতে হবে ঘটনাক্রমের উপর। হুট করে লকডাউন তুললে বিপদ ফের তুঙ্গে পৌঁছবে।”
জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ঘটনা ঘটার উদাহরণ দেন তিনিও। মনে করিয়ে দেন, করোনাভাইরাসের এপিসেন্টার চিনও মহামারী থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েওঠার পরে ফের সম্মুখীন হয়েছে করোনা সংক্রমণের।
তাঁর কথায়, “যত দিন না কোনও ভ্যাকসিন বেরোচ্ছে এই ভাইরাসকে প্রতিহত করার মতো, তত দিন আমাদের পরিস্থিতির উপর লাগাম টেনেই এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে হবে।”
বিশ্বজুড়ে চরম আক্রোশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই মারণ করোনাভাইরাস। গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৪২ লক্ষের বেশি। মারা গেছেন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ। বেশ কিছু দেশে এখনও কার্যত লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে মৃত্যু। এই পরিস্থিতিতেও বহু দেশের কাছেই উপায় নেই লকডাউন তোলা ছাড়। কারণ অর্থনীতি অচল হতে বসেছে। আর এই লকডাউনের শিথিলতাই নতুন করে রোগটি ছড়িয়ে ফেলার রাস্তা খুলে দিচ্ছে।
হু-এর কর্তা ডক্টর রায়ান এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এই পরিস্থিতিতে বহু দেশ চোখ খোলা রেখে চলতে ইচ্ছুক। কিন্তু এমনও কিছু দেশও আছে যারা সব দেখেও কিছু না দেখার ভান করছে।” সেই দেশগুলির নাম অবশ্য উল্লেখ করেননি তিনি।