দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ লকডাউনের তৃতীয় পর্বে এসে দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড বৃদ্ধি হল। গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৮৭৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জনের। তবে, এরপরেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বোঝানোর চেষ্টা করছে, পরিস্থিতি ভাল হচ্ছে। তাদের দাবি, দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুস্থ হওয়ার হার। বর্তমানে দেশে সুস্থ হয়ে ওঠার হার ২৮.১৮ শতাংশ। একদিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১,৩৯৯ জন। এই সংখ্যাও এখনও পর্যন্ত একদিনে সর্বাধিক। কেন্দ্র বলছে, বেশি পরীক্ষার ফলে বেশি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তারা তুলে ধরতে চাইছে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়টিকে। সরকারের বক্তব্য, দেশে করোনা রোগীদের প্রটোকল মেনে সঠিক চিকিৎসা ও কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। তাই সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা বাড়ছে।
অন্যদিকে, তৃতীয় দফার লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু ছাড় ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এখন থেকে বিবাহ অনুষ্ঠানে সর্বাধিক ৫০ জন অংশ নিতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ২০ জনের বেশি যোগ দিতে পারবেন না। করোনায় কারও মৃত্যু হলে শেষকৃত্যে সর্বাধিক ৫ জন যোগ দিতে পারবেন। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অফিস খুলেছে। তাই সব দপ্তরে থার্মাল স্ক্রিনিং, স্যানিটাইজার, মাস্কের বন্দোবস্ত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কর্মীদের লাঞ্চ ব্রেক ও শিফট ডিউটি পৃথক হতে হবে। দপ্তরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক কর্মীকে ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া বিদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের বিশেষ বিমানে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শর্ত রাখা হয়েছে, দেশে ফিরে তাঁদের আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। আরও জানানো হয়েছে, এ যাবৎ বিভিন্ন রাজ্যে ৬২টি ট্রেনে ৭০ হাজার শ্রমিককে ফেরানো হয়েছে। এদিনই আরও ১৩টি ট্রেন চালানো হতে পারে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল জানিয়েছেন, লকডাউনের আগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হার ছিল ৩.৪ দিন। এখন তা হয়েছে ১২ দিন। শুরুর দিকে প্রতিদিন গড়ে ১০০–১৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। এখন তা প্রায় ৩,০০০। তাঁর দাবি, দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে বাড়েনি। বেশি সংখ্যক পরীক্ষা করার ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষার হারও অনেক বেড়েছে। যত পরীক্ষা হবে, তত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। এর কারণ, অনেকের শরীরে কোনও উপসর্গ নেই, অথচ তাঁরা আক্রান্ত। ১০ লক্ষ নমুনা পরীক্ষার পর আমেরিকা, ইতালি ও ব্রিটেনের তুলনায় ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম বলে আগেই দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
হঠাৎ মৃতের সংখ্যায় এই বৃদ্ধি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে আগরওয়াল জানিয়েছেন, ‘দেশে একদিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণ দু–একটি রাজ্যের হিসেব পৌঁছতে দেরি হওয়া। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ গতকাল যে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে, তাতে এক ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা ১,২৫৯ এবং মৃতের সংখ্যা ১৩৩ হয়েছে। এই রাজ্যগুলি তথ্য দিতে দেরি করেছে।’ মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬,৭১১। মৃত্যু হয়েছে ১,৫৮৩ জনের। এক প্রশ্নের জবাবে লব আগরওয়াল বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনা সংক্রমণ অনেক পরে শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারতে সংক্রমণ ছড়ানোর গ্রাফ নিম্নমুখী। এদেশে কখনওই সংক্রমণের গ্রাফ খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি। বৃদ্ধির হার অনেকটা স্থিতিশীল।’