দেশের সময়ওয়েব ডেস্কঃ মাত্র দিন পনেরো আগের কথা! তখন সবে সবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বাংলার চারটি জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলার সেই চার জেলা হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কোন এলাকাগুলি কন্টেইনমেন্ট জোন সেই প্রশ্ন করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জায়গার নাম গোপন রাখবে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল নাম জানালে মানুষের মধ্যে প্যানিক ছড়াতে পারে।
এক পক্ষকালের মধ্যেই অবস্থান বদল করল নবান্ন। রাজ্য সরকার জানিয়ে দিল ওই চার জেলার কন্টেইনমেন্ট জোন কোনগুলি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আগের অবস্থান থেকে সরে এসে জানান, “আমরা ভেবেছিলাম নাম জানালে আতঙ্ক ছড়াতে পারে। কিন্তু এখন নামগুলো পাবলিক করে দিচ্ছি। তাতে মানুষ আরও সতর্ক হতে পারবেন।” এই জোনগুলির নাম যাতে সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে সেই আবেদনও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, এলাকাগুলির নাম প্রকাশ করলে স্থানীয়রাও নজর রাখতে পারবেন। বিভিন্ন কমিটির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই কমিটিগুলিও এলাকায় নজরদারি চালাতে পারবে এবং পুলিশকে সাহায্য করবে।
এপ্রসঙ্গে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “এতদিন কি মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না যে স্থানীয়রা কন্টেইনমেন্ট জোনের নাম জানলে প্রশাসনকে সাহায্য করতে পারবেন? আসলে মৃত্যুর সংখ্যার মতো কন্টেইনমেন্ট এলাকার সংখ্যাও চেপে যেতে চেয়েছিলেন। এখন যখন দেখছেন পারছেন না, এদিকেরটা টানলে ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন তালিকা প্রকাশ করছেন।”
প্রসঙ্গত, রেড জোনের জেলা মানে গোটা জেলাই যে স্পর্শকাতর তা নয়। যে এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেরকম কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করে কন্টেইনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করে প্রশাসন। অন্য জায়গার তুলনায় সেই এলাকাগুলিতে লকডাউনের কড়াকড়ি একটু বেশি।
এদিন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন কোন জেলায় কটি কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি এও জানান ক’টি জোন থেকে শেষ দু’সপ্তাহে কোনও পজিটিভ কেস পাওয়া যায়নি।
মুখ্যসচিব বলেন, পূর্ব মেদিনীপুরে আটটি কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটিতে ১৯ এপ্রিল থেকে কোনও পজিটিভ কেস নেই। ৫৭টি কন্টেইনমেন্ট জোন রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। ওই জেলায় ১৩টি জোন থেকে দু’সপ্তাহে কোনও সংক্রামিতের খোঁজ নেই। হাওড়ায় কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৫৬। শেষ দু’সপ্তাহে পজিটিভ কেস নেই ১৩টিতে। কলকাতার কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২২৭টি। ১৮টিতে শেষ দু’সপ্তাহে কোনও কোভিড পজিটিভ নেই।
নবান্নের তরফে বলা হয়েছে, বাংলায় এখনও আটটি জেলা গ্রিন জোনে রয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় একজনের শরীরেও করোনা সংক্রমণ নেই। প্রসঙ্গত, গতকাল রাত পর্যন্ত গ্রিন জোনের জেলার সংখ্যা ছিল ন’টি। এদিনই মালদহের একজনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে। ফলে মালদহ-সহ বাকি জেলাগুলি রয়েছে অরেঞ্জ জোনে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “রেড জোনে একটু বেশি কড়াকড়ি থাকবে। অরেঞ্জ জোনে আবার কিছু ছাড় দেওয়া হবে। গ্রিন জোনে আরএকটু বেশি ছাড় থাকবে।” তিনি এও বলেন, “গ্রিন জোন যদি রেড জোন হয়ে যায় সেখানে আবার নিয়ম বদলাবে। এগুলো সময়ে সময়ে পাল্টাবে।”