কলকাতা পুরসভায় হার কার্যত মেনেই নিচ্ছে রাজ্য বিজেপি

0
1110

দেশের সময়: বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা যাই বলুন না কেন এ রাজ্যে আসন্ন কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি যে কোন শক্ত চ্যালেঞ্জের সামনে শাসক তৃণমূলকে দাঁড় করাতে পারবে না সেটা রাজ্য বিজেপির নেতারা কার্যত মেনে নিতে শুরু করেছেন।তার মানেটা এই দাঁড়াল যে আগামী ২০২১ এর আগে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনকে যদি সেমিফাইনাল ধরা হয় তাতে বিজেপির পরাজয় সুনিশ্চিত বলে মেনে নিচ্ছেন বিজেপিরই রাজ্য নেতারা।

সম্প্রতি বিজেপি তাদের কলকাতা কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে সরিয়ে খিদিরপুর সংলগ্ন হেস্টিং এর কাছে এক বহুতল বাড়িতে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।বিজেপির রাজ্য নেতাদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সেই নতুন ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির নেতা মুকুল রায় জানিয়েছেন তারা আগামী বিধানসভার কথা বিবেচনা করে তাদের রাজ্য দপ্তরের কাজকে আর গতি দিতে ও সক্রিয় করতে এই নতুন ভবনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছেন।

মকুলবাবুর কথায় এবার থেকে হেস্টিং এর এই নতুন কার্য়ালয় থেকেই আগামী বিধান সভার ভোটের কৌশল ও নীতি নির্ধারিত হবে।লক্ষ্য করার মত বিষয় হল যেখানে সামনে পুরসভার ভোট সেখানে মুকুল রায় বার বার বিধানসভার ভোটের কথা উল্লেখ করলেন।তবে কী পুরসভার লড়াইতে বিজেপি শাসক তৃণমুলকে ওয়াকওভার দিয়ে দিতে চাইছে?

পুরসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে বিধানসভা নিয়ে রণকৌশলের কথা বলে কার্যত যে পুরসভার ভোটকে গুরুত্ব না দেওয়ার যে ভঙ্গি তা কি তাদের পুরসভায় হার মেনে নেওয়ারই সামিল নয়?প্রশ্নটা অনিবার্যভাবেই মুকুল রায়ের দিকে ধেয়ে গেছিল সেদিন।আর মুকুল রায়ের জবাব থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় পুরসভা নিয়ে রাজ্য বিজেপি খুব একটা আশা করছে না।

মুকুল রায় জানিয়েছেন,এ রাজ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ভোট আসলে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে যায় কারণ ভোটের নামে প্রহশন হয়।ছাপ্পা ওও রিগিং এর সাহায্যে ভোট হয় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়।এই সব ভোটে মানুষের মতের প্রতিফলন হয় না।তাই তাঁরা পুরসভা নয় বিধান সভা ভোট যা কিনা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রনে ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে হয় তার উপরই বেশী জোর দিতে চান।মকুল রায়ের এই কথাতে কার্যত যে পুরসভায় হার নিশ্চিত ধরে নিয়েছে রাজ্য বিজেপি তা পরিষ্কার হয়ে যায় বলে অনেকে মনে করছেন।

প্রায় একই ঢঙে কথা বলেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও,তাঁর মতে এ রাজ্যে পুরভেট কবে তা রাজ্যের শসক দল ছাড়া কেউ জানে না।শাসক দল যখন চাইবে তাদের প্রস্তুতি মত পুরসভা নির্বাচন হবে বিরোধী দলের কোন কৌশল ও লড়াইয়ের নীতি নির্ধারনের সুযোগই নেই।তাই পুরসভা কোন সেনিফাইনাল নয়,সেমিফাইনাল আসলে গত লোকসভায় হয়ে গেছে এবার ফাইনাল হবে একুশে।

বলা যায় পুরসভায় যে তাদের কোন আশা নেই তা পরোক্ষে মেনে নিচ্ছেন দিলীপবাবুও।বিজেপির অন্দর মোহলে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে পুরসভা নিয়ে রাজ্য নেতাদের একেবারে হাল ছেড়ে দেওয়ার বার্তা।

লোকসভায় চমকে দেওয়ার মত ফল করেও বিজেপি কেন এতটা থমতে গেল,কেন পাল্টা সংগঠন তৈরি করে ঝাপিয়ে পড়তে পারল না?এর উত্তর হল বিজেপির অন্দর কলহ।এই মুহূর্তে বিজেপির রাজ্য নেতারা ভাগ হয়ে গেছেন নব্য বিজেপি ও পুরোনো বিজেপিতে।তৃণমূল থেকে আসা বিজেপি নেতারা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না।

দিলীপ ঘোষ ও তাঁর সঙ্গ পাঙ্গরা ্ন্যদের কাজই করতে দিচ্ছেন না।ফলে বিজেপির সংগঠন একেবারে নড়বড়ে অবস্থাতেই থেকে গেছে।রাজ্য সরকার যে নির্বাচন নিয়ন্ত্রন করছে তাকে টক্কর দিতে যে সাংগঠনিক শক্তি দরকার বিজেপির তা একেবারেই নেই।তাই পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি লড়াইয়ের আগেই হেরে বসে আছে।অথচ বিজেপি নেতারা যতোই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ পাতিত্বের কথা তুলুক না কেন এ রাজ্যে ২০১০ এর পুরসভাতে কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকা অবস্থাতেও বামেদের হারিয়েছিল তৃণমূল।

আসলে তখন ২০০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সাফল্য ধরে রাখতে তৃমমূল রাজ্য জুড়ে যে ধারাবাহিক আন্দোলন জারি রেখেছিল বিজেপি তার কোনটাই করেনি।বরং রাজ্য নেতাদের নির্বোধ দলাদলি ও ধর্মীয় সুডসুড়ি দিয়ে সস্তায় বাজিমাত করতে চাওয়ার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ঘর অনেকটাই গুছিয়ে নিতে পেরেছেন।

পুরসভায় নিশ্চিত ভাবেই হারতে চলেছে বিজেপি,এই অবস্থা চললে একুশেও যে তাদের বিশেষ কোন প্রভাব থাকবে না তা বলে দেওয়া যায়।মুকুল ঘনিষ্ট এক বিজেপি নেতা তাই আক্ষেপ করে বললেন,গাধাকে দিয়ে লাঙল চালালে যা হয় তাই হয়েছে।গাধাাটা শুধু পুরসভা নয় বিধানসভার ভোটটাও তৃণমূলকে সাজিয়ে দিল।

গাধা বলে তিনি যে কাকে চিহ্নিত করতে চাইলেন তা বুঝতে কারোর অসুবিধা নেই।তবে সিপিএম ও কংগ্রেস অবশ্য বলছে আসলে পুরোটাই মোদী ভাই আর দিদি ভাইয়ের বোঝাপড়ার ফল।এটা সত্যি না মিথ্যে বলা শক্ত তবে বিজেপি বর্তমান যা অবস্থা তাতে দিলীপ ঘোষের উচিত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খোয়াব দেখা বন্ধ করে বাণপ্রস্তে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া।

Previous articleকরোনা-সতর্কতা: বিদেশিদের জন্য ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও ভিসা দেবেনা ভারত
Next articleকরোনা আতঙ্ক: ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজর, গায়ে জ্বর থাকলেই ফেরানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের,অবারিত দ্বার পেট্রাপোল সীমান্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here