দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দশমীতে ঠাকুর জলে পড়তেই ফের নারদ তদন্তে সক্রিয় হল কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সিবিআই। একাদশীর দুপুরে নিজাম প্যালেসে সিবিআই তলব করেছিল নারদ স্ট্রিং অপারেশনের ‘সাংবাদিক’ ম্যাথু স্যামুয়েলকে। দু’ঘণ্টা জেরার পর নিজাম থেকে বেরিয়ে ম্যাথু এবার দাবি করলেন, মুকুল রায়কে যে এসএমএইচ মির্জা এক কোটি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন, তার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে।
ম্যাথুর এই দাবিই নতুন কিছু প্রশ্ন তুলে দিল? এমনকী এ প্রশ্নও উঠছে যে, ম্যাথুই বা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
প্রসঙ্গত, নারদ স্টিং ফুটেজ ফাঁস করার পর ম্যাথু কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছিলেন, তাঁর অনাবাসী ভারতীয় বন্ধুরা তাঁকে এই অপারেশনের জন্য টাকা জুগিয়েছেন। পরে ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ আউটলুক ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাথু দাবি করেছিলেন, স্টিং অপারেশনের জন্য তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ কে ডি সিং। এও জানিয়েছিলেন, কে ডি সিং তাঁকে স্টিং অপারেশনের জন্য আশি লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন হল, নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূলের বাকি সাংসদ বিধায়কদের যখন তিন লক্ষ বা পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়েছিলেন ম্যাথু, তা হলে মির্জার মাধ্যমে মুকুল রায়কে দেড় কোটি টাকা কেন দিয়েছিলেন? তা ছাড়া স্টিং অপারেশনের বাজেট যদি আশি লক্ষ টাকা হয়, তা হলে দেড় কোটি টাকা দিলেন কোথা থেকে? নাকি এটা অন্য লেনদেনের কথা বলছেন তিনি?
এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা ম্যাথু এ দিন সাংবাদিকদের দেননি। তিনি সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে বলেন,“আমায় হয়তো মুকুল রায়ের বাড়িতে গোয়েন্দারা নিয়ে যাবেন। যেখানে মির্জার সঙ্গে টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছিল।”
মহালয়ার দুপুরে মুকুল রায়কে জেরা করার পর নবরাত্রি শুরুর সকালে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর এলগিন রোডের ফ্ল্যাটে আইপিএস মির্জাকে নিয়ে চলে গিয়েছিল সিবিআই টিম। সেখানে টাকা লেনদেনের পুনর্নির্মাণ করানো হয় মির্জাকে দিয়ে। গোটাটা ভিডিওগ্রাফ করে রাখে সিবিআই। এর আগে নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত সব সাংসদ-মন্ত্রীর ক্ষেত্রেই এ ভাবে ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছিল। শুধু মুকুল রায়ের বাড়িতে তা করা বাকি ছিল।
নারদ স্টিং নিয়ে ম্যাথু বুধবার আরও বলেন, “আমার কাছে যা ছিল সব ফুটেজ আমি সিবিআই-কে দিয়ে দিয়েছি। এখন আর তদন্ত সেটুকুতে আটকে নেই। অনেক বড় জায়গা থেকে এই তদন্ত চলছে।” এ দিন নারদ স্টিং-এর মূল মাথা ম্যাথুকে প্রশ্ন করা হয়, মুকুল রায় তো বারবার দাবি করছেন তিনি টাকা নেননি। তাহলে? জবাবে ম্যাথু বলেন, “মুকুলবাবু তো আমার থেকে টাকা নেননি। সেটা ভিডিওতেই পরিষ্কার। কিন্তু উনি আমাকে বলেছিলেন মির্জার হাতে টাকা দিতে।”
মির্জা আপাতত জেল হেফাজতে। যে দিন আদালত তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল সে দিনই তিনি বলেছিলেন, “এখন আমি অনেকটা হালকা। সিবিআই-কে সব সত্যি কথা বলে দিয়েছি।”
যদিও মুকুল-শিবিরের বক্তব্য, এটা একটা বড় ষড়যন্ত্র। এবং এর মূলে রয়েছে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলের পক্ষ থেকেই এদের বলা হচ্ছে জেরায় মুকুল রায়ের নাম জড়িয়ে দিতে। তবে একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান যে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে সহযোগিতা করবেন তা আগেই বলে রেখেছেন। এ দিনও তিনি বলেন, “কে কোথায় কী বলে বেরাচ্ছে তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেব কেন। তবে সিবিআইয়ের তদন্তে যে সবরকম সাহায্য করব সে ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত থাকতে পারেন”।
এখন এই তদন্ত কোন দিকে এগোয়া সে দিকেই চোখ রাজনৈতিক মহলের।