দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সময় এর সাথে জনজীবনে ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী শুক্রবার সকালেই ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়বে এই এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম। হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় প্রায় ১৭৫-১৮৫ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আবহাওয়া দফতরের শেষ পাওয়া আপডেট অনুযায়ী পুরী থেকে ২৭৫ কিলোমিটার সাউথ সাউথ ওয়েস্ট (SSW) অবস্থানে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। অনুমান ৩ মে শুক্রবার ভোরবেলাই পুরীর দক্ষিণে গোপালপুর এবং চাঁদবালির মাঝে ওড়িশা উপকূল বরাবর আছড়ে পড়বে প্রবল শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়।

ইতিমধ্যেই সতর্কতামূল পদক্ষেপ হিসেবে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে সব ফ্লাইটের উড়ান বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার গোটা দিন ও রাত বন্ধ থাকবে ভুবনেশ্বরের বিমানবন্দরের যাবতীয় পরিষেবা। এ দিন বিকেল থেকেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করেছে ভুবনেশ্বরে। শুরু হয়েছে বৃষ্টিও। পুরীর বিভিন্ন হোটেলের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। পর্যটকদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা করা হয়েছে তিনটি বিশেষ ট্রেনের। ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করেছে কলকাতা বিমানবন্দরও। শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টা থেকে পরের দিন শনিবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে সব উড়ান।

বাতিল হয়েছে ওড়িশাগামী শতাধিক ট্রেনও। এ দিকে অসংখ্য ট্রেন বাতিল হওয়ায় পুরী এবং ভাইজ্যাগ স্টেশনে আটকে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী। তাঁদের খাবার বিলি করার ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফণীর তাণ্ডবের আশঙ্কাতেই পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ পতাকা বা ধ্বজ বদলের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। পতাকার মাপ ১২ হাত থেকে কমিয়ে ৫ হাত অর্থাৎ ১২ ফুট করা হয়। বুধবার থেকেই সেই ছোট পতাকাই লাগানো হচ্ছে মন্দিরের চূড়ায়।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস শুক্রবার মধ্যরাতেই বঙ্গে আছড়ে পড়বে ফণী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন-র তরফে জানানো হয়েছে শুক্র এবং শনিবার দুই মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলি—–দক্ষিণবঙ্গের এই আট জেলায় সমস্ত সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। সতর্কতার জন্য কলকাতার পুরনো বাড়ি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা। কলকাতা শহরে পুরসভা চিহ্নিত বিপজ্জনক বসতবাড়িতে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়াও ফুটপাথের দোকানদারদেরও সতর্ক করা হয়েছে। সব ভেন্ডার ও হকারদের অস্থায়ী স্টল সাময়িক ভাবে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে পুরসভার পক্ষে জানানো হয়েছে, ঝড়-বৃষ্টির সময়ে কেউ যেন কোনও লাইটপোস্ট, পিলারবক্স এবং ট্রান্সফর্মারে হাত না দেয়। নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিতে ইট, লোহার টুকরো, বাঁশ, টিনের পাত ইত্যাদি সাবধানতার সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। ঝড়ের সময়ে এই সব জিনিস উড়ে গিয়ে যাতে কারও প্রাণহানি বা সম্পত্তির ক্ষয় ক্ষতি না ঘটায় তার জন্য আগাম সতর্ক থাকতে বলেছে পুরসভা।

ত্রাণ শিবিরেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুরসভা। নিয়ন্ত্রণ করা হবে ফেরি সার্ভিসও।
বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য NDRF-এর বিশেষ টিম ইতিমধ্যেই অ্যালার্ট জারি হওয়া এলাকাগুলো পৌঁছে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২’টি দল অন্ধ্রপ্রদেশে, ২’টি দল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে, ২’টি দল ঝাড়খন্ডে, ২’টি দল কেরালাতে, ২৮’টি দল ওড়িশাতে, ২’টি দল তামিলনাড়ুতে এবং ৬’টি দল পশ্চিমবঙ্গে এসে উপস্থিত হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে এই বিশেষ দলগুলিতে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, প্যারামেডিক্যাল টিম, নৌকা সহ ডুবুরি, লাইফ জ্যাকেট, স্কুবা ডাইভিং-এর সরঞ্জাম এবং আধুনিকতম যোগাযোগ ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি রয়েছে।

এদিকে উত্তর ২৪ পরগনার ফণী’র প্রভাবে ৩৫নং জাতীয় সড়ক যশোর রোডের দু’পাশের বড় বড় প্রাচীন গাছের শুকনো -মৃত ডাল ভেঙে গুরুতর বিপদ হতে পারে বলে মনে করছেন বনগাঁ,গাইঘাটা ও হাবড়া এলাকার স্থানীয় মানুষ৷বিগত দিনের ঝড়ে উপড়ে পড়েছে এই বিশালাকার প্রাচীন গাছ, প্রাণহানিও হয়েছে অনেকের।

উল্লেখ্য বনগাঁ বি এস এফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় বেশ কিছু বড়সড় ডাল বিপদ জনক ভাবে ঝুলছে দীর্ঘদিন ধরে ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের। এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরী হয়েছে এবার ফণীর দাপটে এই সব ডাল ও মৃত গাছ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে এমন কি প্রাণহানীর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here