বছর ঘুরলেই রাজ্যের বিধানসভা ভোট। ভুয়ো ভোটার ইস্যুতে ইতিমধ্যে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
সেদিকে লক্ষ্য রেখে কয়েকদিন আগেই নেতাজি ইনডোরের সভা থেকে দলের নেতা, কর্মীদের টাস্ক ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার দলের নেতা, কর্মীদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তাও আবার শুধুমাত্র ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রকে নিয়ে।
দলীয় সূত্রের খবর, ভবানীপুর দিয়ে শুরু। ২৯৪টি কেন্দ্রর ক্ষেত্রেই এখন থেকে এভাবে এলাকা ভিত্তিক বৈঠকে বসবেন শুভেন্দু-সহ বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতারা। উদ্দেশ্য, প্রতিটি বিধানসভা থেকেই শাসক তৃণমূলকে প্রবল লড়াইয়ের মুখোমুখি ফেলা।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হবেন ধরে নিয়ে সম্ভাব্য লড়াইযের ঘুঁটি সাজাতে মঙ্গলবার ভবানীপুরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ভবানীপুরের বুথ ধরে ধরে সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলতে পারলেই আগামী ভোটে ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীকে লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কি আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী? ঘটনাপ্রবাহ দেখে রাজ্য বিজেপির একটি অংশ তেমনই ভাবতে শুরু করেছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে একটি কার্যালয় খুলতে চলেছেন বিরোধী দলনেতা। বিজেপি সূত্রের খবর, সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। কার্যালয় খোলার দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছে। সব পরিকল্পনা মতো চললে আগামী ১ মে ওই কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে পারেন শুভেন্দু।

ঘটনাচক্রে, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে কেবল মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়ি নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস এবং বাড়িও ওই ওয়ার্ডেই। মমতার পরিবারের সদস্যেরাও ওই ওয়ার্ডেই থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ওয়ার্ড থেকেই কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর। তাই শুভেন্দু ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ডেরা’ বাঁধলে ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় ‘রাজনৈতিক উত্তাপ’ তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডে শুভেন্দুর কার্যালয় করা নিয়ে দক্ষিণ কলকাতা বিজেপিও ‘উত্তেজিত’। এক নেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই সবসময় কঠিন। কিন্তু শুভেন্দুদার মতো নেতা পাশে থাকলে আমরা প্রাণপণ লড়াই করব। তাঁর অফিস উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।’’

যা থেকে অনেকে মনে করছেন, শুভেন্দু আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি ভবানীপুর থেকেও লড়তে পারেন। তবে সেই বিষয়টি একেবারেই অনুমানের স্তরে রয়েছে। শুভেন্দুর তরফেও এই মর্মে দলের অন্দরে কিছু বলা হয়নি। অনেকের মতে, নেতাজি ইন্ডোরের সভায় ভোটার তালিকায় ‘ভুয়ো’ ভোটার থাকা নিয়ে অভিযোগ তুলে যে ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে গোটা দলকে ‘বুথমুখী’ করে দিয়েছেন মমতা, তাতে ‘চাপ’ বেড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের উপর। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা তথা তৃণমূলের উপর ‘পাল্টা চাপ’ তৈরি করতেই শুভেন্দু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডে তাঁর কার্যালয় খোলার কৌশল নিয়েছেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মুখোমুখি লড়াই হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর। ভোট প্রচার থেকে গণনা, গোটা পর্বটাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ১৯৫৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন শুভেন্দু। পরে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপ নির্বাচনে ৫৮,৮৩৫ ভোটে জয়ী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে পরিসংখ্যানের নিরিখে গত লোকসভা ভোটে ভবানীপুর বিধানসভার আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এগুলি হল- ৬৩, ৭০,৭১, ৭২ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড। তবে ৭৩, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, যে তিনটি ওয়ার্ডে গতবারে বিজেপি পিছিয়ে পড়েছিল সেখানেই এবারে ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দিতে চাইছে পদ্মশিবির। পাশাপাশি যে পাঁচটি ওয়ার্ডে ব্যবধান বেশি ছিল, সেগুলিও যাতে অক্ষুন্ন রাখা যায়, সেবিষয়ে বৈঠকে কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।

সূত্রের খবর, বৈঠকে দলের কর্মীদের পই পই করে শুভেন্দু একথাও জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটার লিস্টের দিকে বাড়তি নজর দিতে। বিরোধী দলনেতার আশঙ্কা, ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়ার নামে বিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করতে পারে শাসকদল।