দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ হোলির দিনই সবুজ-মেরুন রঙে রাঙল কল্যাণী। জাতীয় লিগ ও আইলিগ যোগ করলে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হল এই নিয়ে পাঁচবার। ফলে ছুঁয়ে ফেলল ডেম্পোর রেকর্ডও।ডার্বির আগেই আইলিগ জিতে গেল মোহনবাগান।

কেউ কাঁদছেন হাউহাউ করে। কেউ বা আনন্দে প্রেমিকের হাতটা চেপে ধরেছেন। নাতিকে কোলে নিয়ে বৃদ্ধের তখন পাগলের মতো নাচ। ২০১৫ সালের পর আবার আইলিগ এল বাগান তাঁবুতে।
ম্যাচটা যদি হত যুবভারতীতে। সমর্থকরা হয়ত রাতেই ক্লাব তাঁবুতে ভিড় জমাতেন। তবুও বিকেল থেকেই ক্লাব তাঁবুতে সদস্য, সমর্থকদের জমায়েত। খেলা শেষ হতেই শুরু হল মিষ্টিমুখ। আবির খেলা। মোহনবাগান আবার ভারতসেরা। বাবা। বাবা। বাবা। ৮০ মিনিটে বেইতিয়ার পাস

থেকে বাবার মারা গড়ানো শটটা যখন গোলকিপারের ডান দিক দিয়ে গোলে ঢুকে গেল। দর্শক গ্যালারির দিকে গোটা দলকে নিয়ে চলে গেলেন বাবা দিওয়ারা। কিছুদিন পরেই এটিকের সঙ্গে সরকারিভাবে মিশে যাবে সবুজমেরুন।

আগামী মরশুমে আইএসএল। শেষ আইলিগে চার ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন বেইতিয়ারা। আগামী রবিবারের বড় ম্যাচটা নিয়মরক্ষার হয়ে গেল!‌
১৬ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট। ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে না কোনও দলই। প্রথমার্ধটা ঠিকঠাক জমাট বাঁধেনি মোহনবাগানের খেলা। বিক্ষিপ্ত কিছু আক্রমণ হল। ২৩ মিনিটে বেইতিয়ার কর্ণার থেকে আইজলের গোল লক্ষ্য করে হেড করেছিলেন ড্যানিয়েল সাইরাস। বলটা গোলে যায়নি। ঠিক দু’‌মিনিট পর বাগানের রক্ষণে পৌঁছে যায় আইজল। কিন্তু বাগান রক্ষণ সতর্ক ছিল। ২৫ মিনিটে গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল আইজল। কিন্তু বাগানের রক্ষণ ভাগ সতর্ক থাকায় বিপদ হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধে খোলস ছেড়ে বেরোলো বাগান। মুহুর্মুহু আক্রমণে আইজলের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া। বাবার একটা গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হল। আর ৮০ মিনিটে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

শেষবার লিগ এসেছিল সঞ্জয় সেনের হাত ধরে। এবার এল কিবু ভিকুনার হাত ধরে। স্প্যানিশ কোচের অত্যন্ত ঠান্ডা মাথা। মরশুম শুরুর দিকের টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা। সমালোচনা। কোনও কিছুকে পাত্তা দেননি। প্রস্তুতি যে নিচ্ছেন আইলিগের জন্য। তা বুঝিয়ে দিলেন।
বলতেই হবে বেইতিয়ার কথা। বাগানের মিডফিল্ড জেনারেল। অক্লান্ত পরিশ্রম। পাসের ফুলঝুরি। সঙ্গে রক্ষণে ড্যানিয়েলের যোগদান। নতুনদের উপর ভিকুনার ভরসা রাখা। দুর্দান্ত টিমগেমেরই ফল।


কার্ড সমস্যায় এদিন ফ্রান মোরান্তে না থাকায় ড্যানিয়েল সাইরাসকে ফ্রান গঞ্জালেজের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন বাগান কোচ কিবু ভিকুনা। অন্যদিকে শুরু থেকেই ছিল কমরন তুরসুনভ। বাগানের স্ট্রাইকার পাপা বাবাকার দিওয়ারাকে আটকাতে জোড়া মার্কার হিসেবে আদজেই ও কাসাগাকে রেখেছিলেন আইজলের কোচ স্ট্যানলি রোজারিও। সেইসঙ্গে মাঝমাঠে বেইতিয়াদের খেলা নষ্ট করার দায়িত্ব ছিল অধিনায়ক আলফ্রেড জারিয়ানের উপর।

খেলার শুরু থেকেই নিজেদের চেনা ছন্দে খেলা শুরু করেছিল মোহনবাগান। ছোট ছোট পাসে নিজেদের মধ্যে বল রেখে আক্রমণে উঠছিলেন বেইতিয়া, শেখ সাহিলরা। অন্যদিকে বেশ কিছু ম্যাচ পরে একসঙ্গে খেললেন আশুতোষ মেহতা ও ধনচন্দ্র সিং। ফলে বারবার উইং থেকে ক্রস ভেসে আসছিল। কিন্তু আইজলের ডিফেস্নিভ গঠন এতটাই জমাট ছিল যে ফাঁক তৈরি হচ্ছিল না। বাবাকে ক্রমাগত চাপে রাখছিলেন দুই বিদেশি স্টপার। সেইসঙ্গে বেইতিয়া, নংদম্বা নওরেমদের থ্রু ভাল অ্যান্টিসিপেট করছিল আইজল ডিফেন্স।

তারমধ্যেই বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করে মোহনবাগান। কিন্তু গোল আসেনি। অন্যদিকে মাঝেমধ্যেই কাউন্টার থেকে আক্রমণ তুলে আনছিল আইজল। কিন্তু সাইরাস ফেরায় বাগান ডিফেন্সও এদিন জমাট ছিল। তার মধ্যেই একটা ভাল সেভ করতে হয় শঙ্কর রায়কে। প্রথমার্ধে গোলশূন্য ফলেই ড্রেসিংরুমে যায় দু’দল।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বাগান। ৫৪ মিনিটের মাথায় বাবার গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়। তার পরের মিনিটেই আইজলের আক্রমণে মোহনবাগান ডিফেন্সে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কোনও রকমে সেই গোল আটকায় বাগান ডিফেন্স।
এদিন বাগান মাঝমাঠের প্রধান স্তম্ভ জোসেবা বেইতিয়াকেও কড়া নজরে রেখেছিলেন আইজল ফুটবলাররা। নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছিলেন না বেইতিয়া। ফলে গোলের সুযোগ তৈরি কম হচ্ছিল।

আক্রমণে চাপ বাড়াতে সুহেরকে তুলে শুভ ঘোষকে নামান কিবু। একের পর এক আক্রমণ ভেসে আসছিল আইজল বক্সে। কিন্তু গোলটা আসছিল না।
৭৯ মিনিটের মাথায় কল্যাণীর ১৭ হাজার সবুজ-মেরুন দর্শকের মনে আনন্দের ঝড় তুললেন পাপা বাবাকার দিওয়ারা। বেইতিয়ার পাস থেকে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে আইজল গোলকিপারকে দাঁড় করিয়ে রেখে গোল করলেন বাবা। এই নিয়ে চলতি আইলিগে পরপর ৯ ম্যাচে গোল করলেন এই সেনেগালি স্ট্রাইকার। তাঁর ১১ নম্বর গোল হল এদিন। ১-০ গোলে এগিয়ে গেল মোহনবাগান।

বাকি সময়েও কিছু সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের কাছে। কিন্তু গোল আসেনি। শেষ পর্যন্ত ১-০ ব্যবধানেই ম্যাচ জিতে আইলিগ জিতে নিল বাগান।


এদিনের জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট হয়ে গেল মোহনবাগানের। আইলিগের বাকি দলগুলো নিজেদের সব ম্যাচ জিতলেও ৩৭ পয়েন্টের বেশি যেতে পারবে না। ফলে ডার্বির আগেই সবুজ-মেরুন রঙে রেঙে উঠল কলকাতা। আইলিগ এল গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে। বাগান সমর্থকদের স্বপ্নের কাণ্ডারি হয়ে এলেন কিবু ভিকুনা।

ছবিগুলি তুলেছেন- কুমার বসু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here