দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: হাতে আর মাত্র কয়েকঘণ্টা সময়। আর তাই এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করতে রাজি নন তৃণমূল সুপ্রিমো। ১ এপ্রিল সম্মুখ সমরে নামার আগে সোমবারই দ্বৈরথে জুজুধান দুই পক্ষ। এদিন পরপর চারটি জনসভা করবেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিকে কোনওভাবেই প্রচারে পিছিয়ে থাকতে চান না মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় । হুইলচেয়ারে বসেই আট কিলোমিটার পথে মিছিল করলেন তিনি।
এদিন, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় রোড শো শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় ক্ষুদিরাম মোড় থেকে ঠাকুরচক পর্যন্ত মিছিল করেন তিনি। এছাড়াও তিনি হুইলচেয়ারে বসেই পৌঁছে যান নন্দীগ্রামের কয়েকটি গ্রামে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করেন নেত্রী। এরপর কয়েকটি জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমদাবাদ হাইস্কুল মাঠেও সভা রয়েছে তৃণমূলনেত্রীর। নন্দীগ্রামে ভোটপ্রচারের শেষলগ্নে ফের কী বলেন মমতা, সেদিকে চোখ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম মূল লড়াই নন্দীগ্রামে। একদা দলের সৈনিক শুভেন্দু অধিকারীরই প্রতিপক্ষ হিসেবে ভোটে লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের শুরু থেকেই মমতা বনাম শুভেন্দু দ্বৈরথে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। প্রায় রোজদিনই একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আধলাখেরও বেশি ভোটে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী। অন্যদিকে, শুভেন্দুকে মীরজাফর, গদ্দার বলে তোপ দেগেছেন মমতা।
রবিবার সাগরের সভা থেকে প্রাক্তন দলনেত্রীকে নিশানা করে শুভেন্দু বলেছেন, ‘বেগমকে হারাচ্ছি। যতই নাটকবাজি করুন না কেন। কোনও কাজে লাগবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোষণবাজ তৃণমূল সরকারকে তাড়াতে হবে। আমিও তৃণমূল করতাম। ওখানে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে থাকতে হবে। তোলাবাজ ভাইপোকে নেতা মানতে হবে। আমরা বললাম, ভাইপোকে নেতা মানতে পারব না।’ অন্যদিকে, শিশির অধিকারী ও শুভেন্দু অধিকারীকে পালটা আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমোও।
নন্দীগ্রামের নির্বাচনী সভা থেকে ফের নাম না করে শিশির-শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলন নিয়ে মমতা এদিন বলেন, ‘নন্দীগ্রামে সিপিআইএম-কে ডেনে এনেছিলেন এই বাপ-ব্যাটা। তাঁদের পুলিশের ড্রেস পরিয়ে ঢোকানো হয়েছিল।’
এদিন মিছিল শেষে ঠাকুরচকে সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই সভা থেকেই অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন নেত্রী। তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম কাণ্ডের সময় বাপ-ব্যাটাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন বিজেপি -তে গিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন।’ ভূমি আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেদিন ওরা সিপিএম -কে ডেকে এনেছিল। সিপিএম-এর ক্যাডাররা পুলিশের ড্রেস পরে গুলি চালিয়েছিল। আজও তাই করছে। পুলিশের ড্রেস কিনে ক্যাডারদের সাজিয়ে গ্রামে গ্রামে ভয় দেখাচ্ছে, বলছে বিজেপি-কো ভোট দো।’ ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে রোখা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘নন্দীগ্রাম নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কেবল অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি।’
একইসঙ্গে মমতার তোপ, ‘ট্রলার থেকে শুরু করে হোটেল সব আছে। নেই শুধু মনুষ্যত্ব। আমি ভাবতে পারিনি যাকে একের পর এক মন্ত্রিত্ব দিয়েছি, ভাইকে মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান করেছি, এত কিছুর পর এখন বিজেপি ধরছে।’
নন্দীগ্রামের সভা থেকেই এদিন নিমতায় বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও মন্তব্য করেন নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। কিন্তু রাজনীতি চলছে। অমিত শাহ টুইট করে মিথ্যে বলছেন। বাংলায় কিছু হলেই টুইট করেন। আর উত্তরপ্রদেশের বেলায় চুপ।’
মমতার গতকালের বক্তব্যের পরই বঙ্গ রাজনীতিতে জোর শোরগোল শুরু হয়েছে। আসরে নেমেছে সিপিএমও। তাঁদের দাবি, সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে যে ‘চক্রান্ত’–এর কথা শোনা গিয়েছিল, আসলে সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিলেন মমতা। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন শিশির অধিকারীও। বলেন, ‘ওঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’
এদিন মমতা ফের বলেন, ‘নন্দীগ্রামে যাঁরা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেস দিয়েছে। গদ্দাররা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আজও ক্যাডারদের পুলিশের ড্রেস কিনে দিয়ে গ্রামে গ্রামে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে ওরা।’ কটাক্ষ করে মমতা বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের শুরু থেকে ওঁদের দেখা যায়নি। তাঁর কথায়, ‘১০–১৫ দিন দেখা যায়নি বাপব্যাটাকে। নব সামন্ত এখানাকার হার্মাদ ছিল। এখন বিজেপিতে গেছে সে। আর ওই গদ্দার এখন তাদের নেতা।’