দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ঠাকুরনগরে মতুয়াদের বারুণী মেলা এ বছরের জন্য একপ্রকার স্থগিতই হয়ে গেল। মঙ্গলবার মমতাবালা ঠাকুর সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, এ বছর মেলা হবে না। এর উপর আবার মেলা নিয়ে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। দু’পক্ষের মধ্যে সোমবার রাতে মারপিটে জখম থেকে গ্রেপ্তারি, সবই হয়েছে।
করোনাভাইরাসের জন্য বারুনি মেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল আগেই। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চলছিল চাপানউতোর। মেলা নিয়ে আগে থেকেই আইনি জটিলতা ছিল। এর মধ্যে ঠাকুরনগরের নাগরিকদের একাংশ মেলা বন্ধের পক্ষে প্রচার এবং গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা শুরু করে। মতুয়া সম্প্রদায়ের পাগল, সাধু-সহ গোঁসাইদের একাংশ মেলা না-করার পক্ষে
মমতাবালা ও শান্তনু ঠাকুরের কাছে আবেদনও করেছিলেন।


এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে মেলা বন্ধের ঘোষণা করলেন তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সংঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘হরিচাঁদ ঠাকুরের ২০৯তম জন্মদিন পালন করা হবে। কিন্তু বারুনির মাঠে মেলা হবে না। মেলা করার অনুমতি আমাদের ছিল। গোঁসাই, পাগল ও অন্য সাধুরা মেলা বন্ধের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ মমতাবালার ব্যাখ্যা, ‘মেলায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসেন। সাত দিন ধরে মেলা চলে।

করোনাভাইরাস নিয়ে গোটা দেশেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সতর্কতাও জারি আছে। এই পরিস্থিতিতে একসঙ্গে প্রচুর মানুষ এক জায়গায় জড়ো হলে করোনাভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই বারুনির মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ যাঁরা করতে পারতেন, সেই শান্তনু ঠাকুরের গোষ্ঠী সোমবার রাতে বিজেপির অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলা নিয়ে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, বিজেপি সাংসদ শান্তনুর অনুগামীদের সঙ্গে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মারপিটে ছ’জন আহত হয়েছেন। জানা গিয়েছে, মেলা বন্ধ রাখার আবেদন নিয়ে সাংসদ শান্তনুর কাছে গিয়েছিলেন দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। সেই সময় তাঁদের উপরে চড়াও হন সাংসদ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি কর্মীরা। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে। ধৃতদের মধ্যে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের গাড়ির চালক এবং আরও চার অনুগামী রয়েছেন।


শান্তনু বলেন, ‘আমরা মেলা করার কথা বলিনি। আবার মেলা হবে না, তা-ও বলিনি। ভক্তরা এসে মেলা করলে মেলা হবে। প্রশাসনও এই পরিস্থিতিতে মেলা নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।’ তারপর জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর মেলা শুরুর কথা ছিল ২১ মার্চ। পুণ্যস্নান হওয়ার কথা, ২২ মার্চ।


ঠাকুরনগরের বাসিন্দা আইনজীবী লিটন মৈত্র বলেন, ‘‘এ দিন আমরা আদালতের কাছে করোনাভাইরাসের প্রসঙ্গ তুলে মেলা বন্ধের আবেদন করি। হাইকোর্টের নির্দেশে মানুষ বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলেন। কারণ, মহামেলা উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরে পুণ্যস্নান করতে আসেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল।’’
হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এ দিন বাড়িতে ছিলেন না। ফোনেও সাড়া মেলেনি। কয়েকদিন আগে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘মতুয়া ভক্তেরা রোগ মুক্তির জন্য পুণ্যস্নান করতে আসেন। মেলা বন্ধ করার আমরা কেউ নই।’’
মতুয়া ভক্তরা মেলার আয়োজন না করা নিয়ে আদালতের নির্দেশ শুনে দ্বিধাবিভক্ত। এক মতুয়া ভক্ত আশিষ বিশ্বাসের কথায়, ঠাকুরনগরে ১৯৪৮ সাল থেকে মেলা হচ্ছে। এই প্রথম মেলা হবে না শুনছি। খুবই মন খারাপ লাগছে, আবার করোনাভাইরাসের বিষয়টিও অস্বীকার করা যায় না আদালতের সিদ্ধান্তকে মেনে অসংখ্য ভক্ত দেরকে রক্ষা করাটাও আমাদের কর্তব্য।

কী ভাবে ভক্তদের আসা নিয়ন্ত্রণ করা হবে জানতে চাইলে মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফোনে ভক্তদের খবর দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা যেন বাড়িতেই এ বার ঠাকুরের পুজো ও নাম সংকীর্তনকরেন।
গাইঘাটার থানার ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন মাঠে মতুয়ামহামেলা উপলক্ষে ইতিমধ্যেই অস্থায়ী দোকানপাট তৈরি কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। অনেক দোকান ইতিমধ্যেই তৈরিও হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে এ দিন থেকেই তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে জেলা পুলিশ-প্রশাসনিক মহলে। এ দিন গাইঘাটা থানার পুলিশ মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছে, আজ শুক্রবারের মধ্যে দোকানপাট গুটিয়ে ফেলতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের নির্দশ মেনে মেলার মাঠ থেকে অস্থায়ী দোকানপাট ব্যাবসায়ীরা নিজেরাই ভেঙে নিয়ে গেছেন বেশির ভাগ অংশেই৷

বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here