পার্থ সারথি নন্দী, বনগাঁ: :‌ স্কুল–কলেজ বন্ধ। সরস্বতী ঠাকুরের জন্য এখনও বেশিরভাগ স্কুলই যোগাযোগ করেনি। তা সত্ত্বেও পটুয়া পাড়ায় কেউ বাঁধছেন খড়, কেউ মাখছেন মাটি, কেউ ব্যস্ত মাটির প্রলেপ দিতে, আবার অনেকেই ব্যস্ত রং–তুলি নিয়ে। তাঁদের আশা খুলে যাবে স্কুল। বিধি মেনে অঞ্জলী দেবে কচিকাঁচারা।

সামনেই সরস্বতী পুজো। প্রতিবছর নানা ধরনের ঠাকুর তৈরি করে সাজিয়ে রাখতেন বনগাঁর মৃৎশিল্পীরা। এবছর আর সেই ঝুঁকি নেননি। যা বরাত এসেছে সেইমতোই প্রতিমা তৈরি করেছেন। কয়েকদিনের জন্য স্কুল খুলেছিল। করোনার বাড়বাড়ন্তের পর ফের বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বাগদেবী বিক্রি নিয়ে সন্দিহান বনগাঁর পটুয়া পাড়া।

দু’‌একটা থিমের প্রতিমা ছাড়া সরস্বতীর অগ্রিম বরাত হয়না। আগেভাগেই ছোট–বড়–মাঝারি প্রতিমা তৈরি করে সাজিয়ে রাখেন মৃৎশিল্পীরা। সেখান থেকেই পছন্দের ঠাকুর বেছে নেন লোকজন। শিমুলতলা,তালতলা পটুয়া পাড়া মিলিয়ে অন্তত দশটি গোলায় সরস্বতী তৈরি হয়।

তালতলার দু’ই প্রতিমা শিল্পী গোপাল পাল ও লক্ষণ পাল জানাচ্ছেন, স্কুল–কলেজগুলি থেকে এখনও ফোন আসেনি। গতবছর অবশ্য বহু স্কুলে পুজো হয়েছিল। এবছরও স্কুল–কলেজ পুজোর আগে খুলে যেতে পারে। কিন্তু শেষমূহূর্তে বরাত পেলে ঠাকুর তৈরি করতে পারবেন না তাঁরা। ছোট ঠাকুরেই পুজো সারতে হবে তাঁদের।

শিল্পী স্বপন ভট্টাচার্য্য জানান এবছর অনেক ছোট ঠাকুর তৈরি করেছেন। ‘‌প্রতিবছর অন্তত ১৫০টা ঠাকুর তৈরি করি। এবছর মাত্র ৪০ টা ঠাকুর করছি। কারণ বিক্রি না হলে কোথায় রাখব। অনেকেই এবছর গোলায় আসবেন না ঠাকুর কিনতে। কিছু স্কুল খুলে দেওয়া হবে শুনছি। কিন্তু ভরসা করতে পারছি না।’‌

প্রদীপ ভট্টাচার্য্য বললেন, ‘‌এক দেড় মাস আগে থেকেই কাজটা শুরু করে দিই। তবে এবছরও সবাই পুজো করবে। কিন্তু আমাদের গোলায়তৈরী বড় ঠাকুর সবাই পাবে না। অন্তত ৫০ % শতাংশ ঠাকুর কম তৈরি হয়েছে এখানে। আমরা ভয়ে ঠাকুর তৈরি করিনি। দূ’ একদিন হলো কিন্তু মানুষ আসছেন ঠাকুর দেখছেন চলে যাচ্ছেন, অনেকে দামও শুনছেন না খুবই চিন্তার মধ্যে আছি তৈরী ঠাকুর ও সব বিক্রি হবে কী এবার !

শিল্পী সেন্টু ভট্টাচার্য্যের কথায় ‘‌স্কুল–কলেজ শুনছি খুলবে। অন্যবারের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম সংখ্যায় সরস্বতী তৈরী হয়েছে। তবে স্কুল খুললে ফেব্রুয়ারির প্রথমেই বাজার জমজমাট হবে আশা করছি।

হাতে সময় কম। দু’‌তিনদিন ধরে আকাশ মেঘলা। ঠাকুর শোকাতে সমস্যায় পড়েছেন শিল্পীরা। আগুন জ্বালিয়ে ঠাকুর শোকানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এই বাজে আবহাওয়ায় ঠাকুরের রঙ পাকা হয়না। তাই রোদ ওঠার অপেক্ষায় করছেন তাঁরা।

এবছর ঠাকুরের মুখের আদলে কিছুটা পরিবর্তন করেছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য্য। বললেন, ‘‌প্রতিবছরই নতুনত্ব কিছু করার চেষ্টা করি। তবে আমি কম ঠাকুর তৈরি করেছি। হাতেগোনা কয়েকটি বায়না হয়েছে এবার। তবে করোনার জন্য এবছরও কোথাও আগের মতো ধুমধাম করে পুজো হবে না। বাড়ির জন্য যে প্রতিমা কেনা হয়, তার চেয়ে স্কুল–কলেজের সরস্বতী প্রতিমার উচ্চতা বেশি হয়। তার সাজসজ্জাও অনেক বেশি। এই ধরনের প্রতিমা বিক্রি করলে আমাদের লাভও বেশি থাকে। এ বার স্কুল–কলেজ বন্ধ থাকায় কম সংখ্যক প্রতিমা গড়েছিলাম। বড় প্রতিমা তেমন বানাইনি।’‌

কলকাতার যাদবপুরের চিত্র শিল্পী মোহিনী বিশ্বাস ব্যস্ত রং–তুলি নিয়ে৷ তিনি এবছর কয়েকটি বাগদেবীর ছবির বরাত পেয়েছেন৷ মোহিনী জানালেন কয়েকটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন এবার করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছে,তাঁদের জন্যই ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছেন বিদ্যার দেবী সরস্বতীর ছবি৷

সোমবারও মেঘলা আকাশ,দিনভর টিপটিপ বৃষ্টি ঠাকুর তৈরির কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। মাখা কাদা গলে গিয়েছে। শুকিয়ে যাওয়া সব ঠাকুরই ঢাকতে হয়েছে ত্রিপলে। অনেকে কাজ বন্ধ করে বসেছিলেন। রোদ না উঠলে কাজ করবেন না তাঁরা। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন না তাঁরা। বিদ্যার দেবীর পুজো, অথচ স্কুল–কলেজ বন্ধ। মিছিল-মিটিং, মেলা, উৎসব সবই হচ্ছে যত বাঁধা পাঠশালায়৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here