সম্পাদকীয়-কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ যে, যখন যে দল কেন্দ্রের সরকারে থাকে তারা তাদের প্রভাব খাটিয়ে সিবিআইকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে।এর আগে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে যেমন এই অভিযোগ ছিল,এখন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ বার বার উঠছে।এ রাজ্যের তৃণমূল দল বার বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে চলেছে রাজ্য জুড়ে চিটফান্ড তদন্তের নামে সিবিআইকে দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যের শাসক দলকে বিপাকে ফেলবার চেষ্টা করছে।রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী থেকে সাংসদ সবাইকে সিবিআই জেলে ভরেছে,সম্প্রতি সেই তালিকায় নতুন সংযোজন সিনেমার নামি প্রয়োজক শ্রীকান্ত মেহেতা।রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে,যেহেতু আসন্ন লোকসভা ভোটে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন,তাই ভোটের আগে আবার নতুন করে সিবিআইকে দিয়ে এ রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে সখ্য থাকা মানুষজনদের হেনস্তা করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বিজেপির নির্দেশে চলা সিবিআই।সকলেই জানে শ্রীকান্ত মেহতা এ রাজ্যের শাসক দলের ঘনিষ্ঠ,তাঁর নির্দেশেই যে টলিউটের ছোট বড় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা শাসক দলের মঞ্চে উপস্থিত থাকেন,শাসক দলের প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়েন সেটা এ রাজ্যের মানুষের কাছে পরিষ্কার।তাই তাঁকে সিবিআইয়ের গ্রেপ্তার করা নিয়ে একটা রাজনৈতিক অংক থাকা যে একেবারে অসম্ভব নয় তা বলাই বাহুল্য।শাসকদলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,কেন্দ্রের শাসক দল এভাবেই গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে বিপদ হয়ে উঠছে।বিরোধিতা করলেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের ভয় পাইয়ে চেপে রাখার চেষ্টা করছে কন্দ্রের শসক দল।অন্যদিকে এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা দাবি করছেন রাজ্যের শাসক দল চিটফান্ডের টাকা নানাজন মারফত হাতিয়ে নিয়ে দলের কাজে ব্যবহার করছে।তদন্তে তা ধরা পড়ছে তাই গ্রেপ্তার হতে হচ্ছে একের পর এক শাসক ঘনিষ্ঠ লোকজনকে,এর সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই।সিবিআই তাদের নিজেদের মত কাজ করছে,কন্দ্রের সরকার কোনভাবেই তাদের প্রভাবিত করছে না।
আমরা এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যে ঢুকতে চাইছি না,আমরা শুধু বাস্তব অবস্থার পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা বলতে চাইবো,প্রথোমত-সিবিআই একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা,য়ার কোন রাজনৈতিক রঙ থাকা উচিত নয়।এই সংস্থার উচিত নিরপেক্ষভাবে যে কোন দুর্নীতির তদন্ত করা।চিটফান্ডের তদন্তের দায়িত্ব তাদের সুপ্রিমকোর্ট দিয়েছে সে কথা মাথায় রেখে তাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে দোষীদের চিহ্নিত করা।আমানতকারী গরীব মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টা তাদের তদন্তের উপর নির্ভর করছে,এ কথা ভুললে চলবে না।এ রজ্যের সরকারও তদন্তে সাহায্য করেছে বলে আমাদের মনে হয় নি,তারাও নানা ভাবে তদন্তকে দীর্ঘসময়ের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে,এটাও কাঙ্খিত নয়।মানুষের এতটাকা যারা নয় ছয় করেছে তাদের ধরার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারই বা সক্রিয় হবে না কেন!এটা আমাদেরও ভাবাচ্ছে।সিবিআইয়ের রাজনীতিকরণ একেবারেই উচিত নয় এটা যেমন ঠিক তেমনি,রাজ্য সরকার চিটফান্ডের দোষীদের আড়াল করতে কেন চাইছে সেটাও বড় প্রশ্ন।আমরা চাইবো সমস্ত রাজনৈতিক রঙের উর্দ্ধে উঠে সেই দিকে এগিয়ে যাক সিবিআই।শুধু ভোট এলে সিবিআই যদি সক্রিয় হয় তাহলে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই,তাই তদন্তের কাজে সবসময় সক্রিয় থাকতে হবে সিবিআইকে।সিবিআইয়ের রাজনীতিকরণ হলে দেশের স্বাধীন তদন্তের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়বে,এটা মাথায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত সিবিআইয়ের রাজনীতিকরণ খুব-খুবই অনুচিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here