সম্পাদকীয় -সিবিআই ও রাজ্য পুলিশের লড়াইকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি যে খবর গোটা দেশে আলোড়ন তুলেছে,তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়,এ বড় সুখের সময় নয়,এ বড় বিপদের বার্তা বহন করে আনছে।আমাদের সংবিধান,আমাদের গণতন্ত্র,আমাদের স্বাধীনতা সবকিছুর জন্যই এই ঘটনা এক বিপদের কালো ছায়া ঘনিয়ে আনছে।বেশ কিছুদিন ঘরেই আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে আসছিলেন,বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহংসার কাজে ব্যবহার করতে চাইছে।সেই কারণেই বেছে বেছে বিরোধী নেতা -নেত্রীদের গ্রেপ্তার করার অপচেষ্টা থেকে নানা মামলায় তাঁদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার প্রয়াস করা হয় বার বার।আর নির্বাচন আসলেই সিবিআইয়ের মত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।এবার সরাসরি কলকাতার পুলিশকমিশনারকে জেরা করতে তাঁর বাড়িতে সিবিআই কর্তাদের চলে যাওয়া নিয়ে যে ঘটনা ঘটল ভারতীয় সংবিধানে তা এককথায় নজিরবিহীন।সিবিআই কর্তাদের জামার কলার ধরে পুলিশের গাড়িতে তুলতে দেখা গেল রাজ্য পুলিশের কর্মীদের।মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করলেন কোন আগাম বার্তা না দিয়ে কলকাতা পুলিশের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছিল সিবিআই।তাঁর আরও অভিযোগ এ কাজ সিবিআই করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে।মুখ্যমন্ত্রী এই প্রয়াসের তীব্র নিম্দা করে ধর্মতলায় ধর্নায় বসে যান কয়েকদিন।সেখানথেকে তিনি দেশের সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বাঁচাতে দেশের সবকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হবার পরামর্শ দিতে থাকেন।দেশজুড়ে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়ে যায়।এ রাজ্যের সংবাদমাধ্যম যেমন মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে প্রচার চালাতে শুরু করে,উল্টোদিকে তেমনি অধিকাংশ সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সংবিধানের নিয়ম ও রীতিকে ভেঙে একজন অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিককে বাঁচাতে সিবিআইয়ের মত সাংবিধানিক একটি সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করেছেন তার নিন্দা করতে থাকে তীব্রভাবে।সব নাটকের আপাত সমাপ্তি ঘটে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করার পর।সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে আপাতাত কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে গ্রেপ্তার করা যাবে না,তবে তাঁকে অবশ্যই সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি বসতে হবে,সবরকম সহযোগিতা করতে হবে সিবিআইকে।এখন প্রশ্ন হল,একজন দায়িত্ববান পুলিশ আধিকারিক হিসেবে কলকাতার পুলিশ কমিশনার কি জানতেন না যে তাঁর উচিত সিবিআইকে কাজে সহযোগিতা করা?তাহলে কেন তিনি দিনের পর দিন সিবিআইয়ের ডাককে উপেক্ষা করছিলেন?তাহলে তো বুঝতে হয় তাঁর উপর রাজনৈতিক চাপ ছিল।তৃণমূল তথা মমতা যদি এ ধরনের চাপ তাঁকে দিয়ে থাকেন তাহলে তো তাঁর বলা উচিত ছিল,তিনি সংবিধানের নিয়মের বাইরে যেতে পারবেন না,সিবিআই একটি সাংবিধানিক সংস্থা তার ডাকে সারা দেওয়াটা তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব।একই ভাবে তো সিবিআই কর্তাদেরও আমরা প্রশ্ন করতে পারি,কেন নিয়ম মেনে তদন্ত হবে না,কেন ভোটের আগেই তদন্তের গতি আচমকা বেড়ে যায়?প্রধানমন্ত্রী যদি এই ভাবে আচমকা কারোর বিরুদ্ধে সিবিআইকে লেলিয়ে দেয় সিবিআই কর্তারা কেন বলবেন না,আমরা সংবিধানের নিয়ম মেনে তদন্ত করবো,প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নয়।আসল সমস্যাটা হল এদেশের কেউ সংবিধানের রীতি নীতি মানছেন না,সকলেই রাজনৈতিক আনুগত্য দেখাতে ব্যস্ত।তাই আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলি ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ।মোদী সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন,আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মিথ্যে নয়,কিন্তু এই অভিযোগ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও করা যায়।তিনিও রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেন,তাঁর সরকারের বিরোধিতা করলে নানা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন।সিবিআইয়ের সঙ্গে মমতার পুলিশ যে আচরণ করেছে সেটাও কোনভাবেই সংবিধান সম্মত নয়,এ কথাটাও বোধহয় নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার স্বার্থে বলা উচিত।

সব চেয়ে বড় কথা এইসব রাজনৈতিক নাটক থেকে সাধারণ আমজনতার কোন প্রাপ্তি নেই,তারা শুধু বোকা বনে যায়,তারাই শুধু ঠকে যায়।সিবিআই ও কলকাতা পুলিশের দ্বন্দ্বে মমতার রাজনৈতিক লাভ হতে পারে,কিংবা মোদীও এটা নিয়ে প্রচার করে লাভ পেতে পারেন,সাধারণ মানুষ কা পাবেন!কিচ্ছু না,বরং চিটফান্ড থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার কোন আশা নেই,এই রাজনৈতিক নাটকে সেরকম আশ্বাস কেউ দেয়ও নি,উল্টে ধর্মতলার মত ব্যস্ত রাস্তায় ধর্না ও ভিভিআইপিদের অবিরাম আনাগোনায় তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকেই।সত্যিই!রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে প্রাণ যায় উলুখাকড়ার!!কবে যে এ দেশের সাধারণ মানুষ এইসব রাজনীতিকদের চিনতে শিখবে কে জানে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here