এক অদ্ভুদ সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাদের এ রাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্র।আমরা যাদের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি করে পুরসভা বা বিধানসভা,কিংবা লোকসভায় পাঠিয়েছি তাঁরা দেখা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই যে দলের হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সে দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন।আবার কখোন সেই দল ছেড়ে আবার পুরোন দলে ফিরে আসছেন।আজ কেউ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছে,আবার কেউ কিছুদিন পরে তৃণমূলে ফিরে আসছে।
আজ যিনি বিজেপির দপ্তরে বসে বলছেন মোদীজির জাতীয়তাবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তৃমমূল ছেড়ে বিজেপিতে এলাম,কাল তিনিই আবার তৃণমূল নেতার সামনে হাজির হয়ে বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভালবাসার টানে তৃণমূলে ফিরে এলাম।এই নোংরা-কদর্য পাল্টিবাজির রাজনীতি দেখে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না,এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার খেলা।ক্ষমতার রাশ যার দিকে যখন বেশী বলে মনে হচ্ছে তখন সেদিকে ভিড়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।অর্থ আর নানা সুযোগ সুবিধার মধু চোষার লোভ,এই সব পাল্টিবাজ রাজনীতিকদের ভুলিয়ে দিয়েছে,সততা-নীতি ন্যায় বোধ।
এরা শুধু লাভের হিসেব কষে চলেছেন,এরা ভুলে গেছেন জনপ্রতিনিধি হিসেবে যে এলাকা থেকে এরা নির্বাচিত হয়েছেন সেই এলাকার মানুষের প্রতি এদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে,সেই এলাকার মানুষ তাঁদের যে দলর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন,দল বদলের আগে সেই এলাকার মানুষের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।এই পাল্টিবাজ রাজনীতিকরা সবচেয়ে বেশী প্রতারণা করেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে,এরা সবচেয়ে বেশী ঠকায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে।নিজেদের লোভ আর লালসায় এরা আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিতকে প্রতিদিন দুর্বল করে দিচ্ছেন,আমাদের গণতন্ত্র এখন হাস্যকর এক বস্তুতে পরিণত হয়েছে এই লোভি নোংরা আত্মস্বার্থ সর্বস্ব পাল্টিবাজ রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের জন্য।
এরকম চলতে থাকলে মানুষ আর ভোট-ব্যবস্থার উপর কোন আস্থা রাখতে পারবে?কেন মানুষ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবে-ষখন সে জানেই যে সে যাকে ভোট দিয়ে জেতাবে সেও যে কোন সময় পাল্টি খেয়ে যে কোন দলে চলে যেতে পারে?তাহলে এই ভোটের আর কী মানে থাকে-ভোট ব্যবস্থাটা তুলে দিলেই হয়!পয়সার থলি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল বাজার থেকে নিজেদের অর্থের জোরে কর্মী সমর্থক কিনুক।যার পয়সার জোর বেশী সে বেশী লোক কিনবে,সেই ক্ষমতায় থাকবে।ব্যাপারটাতো সেরকমই হচ্ছে,এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতা ও অর্থের জোরে দিনের পর দিন সিপিএম-কংগ্রেস ভাঙিয়ে তাঁর দলকে বড় করেছেন।
সিপিএম ও কংগ্রেসের টিকিটে জিতে অর্থ আর ক্ষমতার লোভে যারা একসময় তৃণমূলে যোগ দিয়ে বলেছিল মমতার উন্নয়নে সামিল হতে দল বদল করছেন,এখন সেই তারাই তৃণমূলের ক্ষমতার রাশ আলগা হতেই বিজেপিতে যোগ দিয়ে বলছেন মোদীজির জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন।মনে রাখতে হবে এখনও যারা তৃণমূলে ফিরে আসছে তারা শুধু এরাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আছে বলে ফিরে আসছে তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলে এরাও ফিরতো না।২০২১ এ যদি এরাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসে দেখা যাবে গোটা তৃণমূলটাই বিজেপিতে মিশে গেছে।তাই আমরা মনে করি পাল্টিবাজির এই রাজনীতি বন্ধ হওয়া জরুরি।
পাল্টিবাজ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা না করলে আমাদের গণতন্ত্র বাঁচবে না।ইতিহাস বলে মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় এদেশটা ইংরেজদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছিল, দুশো বছর ইংরেজদের গোলামি করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।আজ আবার পাল্টিবাজ মিরজাফররাও এদেশের গণতন্ত্রকে বেঁচে দিতে চাইছে,তাই আমাদের এখনই সাবধান হওয়া জরুরি,আসুন দলমত নির্বিশেষে আমরা পাল্টিবাজি রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হই।