দেশের সময় : এ রাজ্যে এখন কে কোন দলে কখন আছেন,আর কখন নেই বোঝা খুব মুশকিল।কেউ এবেলা তৃণমূল তো ওবেলায় বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন,আবার কেউ দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে কয়েকদিন পর আবার তৃণমূলে ফিরে আসছেন।এই যেমন হালিশহরের পুরসভার তৃমমূল কাউন্সিলাররা ঘটা করে প্লেন চড়ে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে এসে এখন আবার নাকি তৃমমূলে ফিরে গেছেন।

এরই মধ্যে আবার মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায় বলছেন সবাই বিজেপিতেই ফিরবেন,আস্থা ভোট হলে নাকি সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।এ রাজ্যের এই ‘আয়া রাম গয়া রাম’ সংস্কৃতির প্রভাবে যে ভাবে রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে,তাতে গমতন্ত্রের নামে যে প্রহসন হচ্ছে তা মানুষ খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে।মানুষের সেবার নাম করে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা যে আসলে ক্ষমতার মধু চুষতেই ব্যস্ত তা আর কারোর বুঝতে বাকি নেই।

এরই মধ্যে নতুন এক জল্পনা রাজ্য-রাজনীতিতে মাথা চাড়া দিয়েছে,তা হল এবার তৃণমূল থেকে যে সব সাংসদরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কে কে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে আছেন?এবারের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের যে ফল,তাতে বিজেপি একেবারে শাসক দলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে,একটু এদিক ওদিক হলেই লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরেখে এরাজ্যে বিজেপি সংখ্যা গরিষ্ট হয়ে যেতে পারে।

লোকসভার ফলে বিজেপি ১৮,কংগ্রেস ২ ও তৃমমূল ২২।হিসেব অনুযায়ী বিজেপির থেকে তৃণমূল ৪টি আসনে এগিয়ে থাকলেও কংগ্রেসের আসনকে বিরোধী ধরলে বিরোধীদের থেকে তৃণমুল এগিয়ে মাত্র দুটি আসনে,এখানেই শেষ নয় আরামবাগের আসনে তৃণমুল জয় পেয়েছে মাত্র হাজারের কিছু বেশী ভোটে,সেখানে বিজেপি দাবি করছে ঐ আসনটা তাদেরই,তারা ঐ আসন নিয়ে মামলাও করেছে।

সব মিলিয়ে যদি পরিষ্কার হিসেব করা যায় তাহলে এ রাজ্যে বিরোধীদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের ব্যবধান মাত্র একটি আসনের।ফলে একটা দুটো লোকসভার আসনের এদিক-ওদিক হলেই রাজ্যের ক্ষমতার ভারসাম্য একেবারে বদলে যাবে।এটা জানেন বলেই এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির চানক্য বলে পরিচিত মুকুল রায় বলছেন কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যের শাসক দল গরিষ্টতা হারাবে।

এই মন্তব্যের জেরেই রাজ্য জুড়ে তুমুল আলোচনা তবে কী তৃণমূলের নব নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ বিজেপিতে নাম লেখাতে পারেন?বিজেপি শিবিরে তো বটেই শাসক তৃণমূলের অন্দর মোহলে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে এই আশঙ্কার প্রকাশ।প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে না চাইলেও কখন কী হয় তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন অনেকেই।

বিজেপির শীর্ষ নেতা থেকে রাজ্য স্তরের নেতারা অনেকেই জানাচ্ছেন তৃণমূলের বেশ কয়েকজন সাংসদ তাদের দিকে পা বাড়িয়ে।কারা তারা?নাম প্রকাশ করতে রাজি নয় কেউই,তবে হাওয়ায় অনেক নামই ভাসছে।যেমন কয়েক দিন ধরে প্রবল আলোচনা হল এ রাজ্যের নতুন সাংসদ নুরসত জাহানকে নিয়ে,তিনি যে ভাবে হিন্দুত্ব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,এবং তাঁর সমর্থনে যে ভাবে বিজেপির নেতারা এগিয়ে এলেন তাতে জল্পনা উঠল তিনি বিজেপি শিবিরে নাম লেথাতে পারেন।

বলা হচ্ছে তাঁর স্বামী একজন কট্টর হিন্দু,তিনি নাকি বিজেপির রাজনৈতির সমর্থক,সেই কারণেই নাকি নুরসাতের সিঁদুর শাখার প্রতি দরদ,নুরসত তাঁর স্বধর্ম ছেড়ে যেভাবে হিন্দুত্বকে আঁখড়ে ধরেছেন তাতে মুসলিম সম্প্রদায় তাঁর প্রতি রুষ্ট,তারা নুসরতের বিরুদ্ধে ফতোয়াও দিয়েছে।এ রাজ্যে মুসলিম ভোট ব্যঙ্কের দিকে নজর রাখায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নুসরতকে বেশীদিন আগলে রাখতে পারবেন না,তাই নাকি নুসরতের পক্ষে তৃমমূল শিবিরে বেশীদিন থাকা সম্ভব নয়।শোনা যাচ্ছে নুসরতের দিকে নজর রাখছে বিজেপি।

এছাড়াও তৃণমূলের একাধিক সাংসদ সারদা ও নারদা অভিযোগে বিদ্ধ,তাঁদের মধ্যও বেশ কয়েকজনকে নাকি টার্গেট করেছে বিজেপি।কয়েকজনের সঙ্গে নাকি কথাও ফাইনাল করে রেখেছে বিজেপি নেত্রীত্ব।তালিকায় নাম আছে বলে শোনা যাচ্ছে যাদের কথা,তাঁদের মধ্যে সৌগত রায়,শতাব্দী রায়,এমনকী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও আছে।এমনটাও খবর অধিকারী গড়ও নাকি বিজেপি শিবিরে ভিড়ে যেতে পারে।

শুভেন্দু অধিকারীকে দলে পাওয়ার আগ্রহ বিজেপির আছে,সেক্ষেত্রে তাঁর গড় বলে পরিচিত কাঁথি ও তমলুকের সাংসদের দিকেও যে বিজেপি নজর দেবে তা স্বাভাবিক।তবে তৃণমুলের পক্ষ থেকে এ সব আলোচনাকেই অসাড় ও আষাড়ে গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলা হয়েছে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে এসব রটনা হচ্ছে,খোদ শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির প্রচারকে পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তবে রাজনীতিতে তো শেষ কথা বলে কিছু হয় না,তাই কী কখন হবে কেউ জানে না।সবাই জানেন রাজনীতি হল সম্ভবপরতার শিল্প,সেই শিল্প কে কখন কীভাবে গড়বেন আগে থেকে বলা অসম্ভব,তবে তৃণমূল শিবির থেকে কোন কোন সাংসদ বিজেপির দিকে পা বাড়াতে পারেন তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা যে তুঙ্গে তা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here