দেশের সময়:এ রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফা কাটতে না কাটতেই আবার রক্ত ঝড়ল,আবার হারিয়ে গেল একটা তরতাজা প্রাণ।বার বার নির্বাচন আসে আর জীবনের অপচয়ের এই একই কাহিনি শুনতে হয় আমাদের।তাই সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রশ্নটা বোধহয় অবধারিত ভাবেই এসে পড়ে যে গণতন্ত্র মানুষের রক্তে হোলি খেলে, সেই গণতন্ত্র মানুষের কোন উপকারে আসবে?মুর্শিদাবাদে ভোট দিতে গিয়ে একদল দুষ্কৃতীর কুঠারের আঘাতে নিহত টিয়ারুল শেখের সদ্য তারুণ্য ছোঁয়া ছেলেটি,এবারই প্রথম বাবার সঙ্গে ভোট দিতে গেছিল।ফেরার পথে একদল দুষ্কৃতী তার বাবাকে আক্রমণ করে,বাবাকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় সেই ছেলেটিকেও আক্রমণ করে দুষ্কৃতী দল,নিজে মার খেয়েও বাবাকে সে হাসপাতালে নিয়ে যায়।কিন্তু যখন হাসপাতালে পৌঁছোয় সেই তরুণ ততক্ষণে মারা যান টিয়ারুল শেখ।টিয়ারুল শেখের ছেলে তীব্র কান্নায় ভেঙে পড়ে বার বার জানতে চায়,তারা তো নেতা হতে চায় নি,তারা তো মন্ত্রী হতে চায় নি,তারা শুধু সুস্থ দেহে তাঁদের গণতান্ত্রীক অধীকার টুকু প্রয়োগ করতে চেয়েছিল,কেন তবে তাদের এভাবে আক্রান্ত হতে হল?এ প্রশ্ন খুব গুরুতর এক প্রশ্ন,এ প্রশ্ন শুধুমাত্র এক সদ্য পিতা হারা সন্তানের আত্ম-বিলাপ নয়,এটা আসলে আমাদের গণতন্ত্র ও ব্যবস্থাপনার প্রতি এক সুতীব্র থাপ্পর।নির্বাচন কমিশন নামক যে সংস্থাটি,এই নির্বাচনের সময় সকলকে নি্র্ভয়ে ভোট দিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞাপনি প্রচার করে,এ প্রশ্ন তাদের ভুমিকাকেও এক গভীর প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।মর্শিদাবাদের এক সাধারণ নাগরিক টিয়ারুল শেখের উপর যখন প্রকাশ্য রাস্তায় একদল ভাঁড়াটে গুন্ডা আক্রমণ করছিল,তখন কোথায় ছিল,পুলিশ প্রশাসন,কোথায় ছিল আধাসেনা?কেন তাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এল না,কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে কোন নেতাই সেভাবে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করলেন না,কেন নির্বাচন কমিশন জানালো যে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া এ রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোট শান্তি-পূর্ণ?মানুষের লাশ পড়ে যাওয়ার পরেও কোন যুক্তিতে ভোট শান্তিপূর্ণ হতে পারে?একটা মানুষ শুধু একটা সংখ্যা,তার বাইরে বুঝি কিছু নয়?এভাবে যদি চলতে থাকে, যদি মানুষকে নিছক সংখ্যা ভেবে আমাদের প্রশাসন স্রেফ এক বা দুএকজনের মত্যুর বাইরে ভোট শান্তিপূর্ণ বলার এই অমানবিকতার চর্চা চালিয়েই যায়,তবে একদিন মানুষ বয়কট করবে ভোট,বয়কট করবে সব নেতা ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের।এমনকী এদের শায়েস্তা করতে মানুষ হাতে অস্ত্রও তুলে নিতে পারে।সেদিন কিন্তু খুব ভয়ঙ্কর হবে,টিয়ারুল শেখের ছেলের কান্নাকে সেদিন কিন্তু আর বিক্ষিপ্ত ঘটনা বলে চালানো যাবে না।তাই গণতন্ত্রে এত রক্ত কেন,এ প্রশ্নের মিমাংসা প্রশাসনকে করতেই হবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here