সম্পাদকীয়ঃ- পরিযায়ী শ্রমিকরাও এদেশের নাগরিক

0
699

সম্পাদকীয়ঃ-গোটা দেশ জুরে যখন টানা ২১ দিনের লকডাউন প্রক্রিয়া চলছে তার মধ্যেই দেখা গেল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের গ্রামে ফিরতে মরিয়া হয়ে পায়ে হেঁটে চলেছেন মাইলের পর মাইল।তাদের সেই সারিবদ্ধ লং মার্চ দেখে শিউড়ে উঠে তথাকথিত ভদ্র মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় বলতে শুরু করলেন,”বাপ রে এরাই তো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে ভয়াবহ করে তুলবে।এই সব অশিক্ষিত লোকগুলোর জন্যই দেশটা বিপদে পড়বে।”আর এরই পাশাপাশি টিভির পর্দায় মুখ দেখিয়ে কিছু পন্ডিত প্রবর লাগাতার বলে চলেছেন এই সময় ঘরবন্দি হয়ে থাকাই একমাত্র উপায়।কিন্তু এরা যেটা বলতে পারছেন না বা বলতে চাইছেন না তা হোল,যে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ঘরের বাইরে আছেন যাদের খাওয়া ও পড়ার নিশ্চয়তা নেই তারা কী করবেন?কেন তাদের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা সরকার অস্থায়ী ভাবে হলেও করবে না?তা না হলে এরা কী খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে না খেয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবেন?সরকার যদি বিদেশে থাকা ভারতীয়দের বিমানে করে নিয়ে আসতে পারে তবে কেন তারা এইসব গরিব খেটে খাওয়া মানুষজনদের ঘরে পৌঁছে দিতে বাসের বা যান বাহনের ব্যবস্থা করবে না?পেটে ক্ষিদে নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হাঁটতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ পথেই মারা গেছেন।আর বাইরে থেকে আসা এইসব দিনমজুরদের শরীরের জীবাণু ধুইয়ে দিতে তাদের উপর রাসায়নিক স্প্রে করছে উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি প্রশাসন। যেন গরিব মানুষগুলির সঙ্গে বিষাক্ত কীটপতঙ্গের কোন ফারাক নেই।এভাবেই গরিব মানুষগুলিকে চরম অপমান করছে তাদেরই দ্বারা নির্বাচিত একটা গণতান্ত্রিক সরকার। আসলে একটা চরম আর্থিক ও শ্রেণি বৈষম্য মূলক সমাজে বাস করতে করতে আমরা ভুলতে বসেছি যে এদেশে যে মানুষটা মাঠে ময়দানে গায়ের ঘাম ঝড়িয়ে কাজ করে সে ও এদেশের মর্যাদা সম্পন্ন একজন নাগরিক।বছরের বেশী সময় যাদের ভিন রাজ্যে কেটে যায় রুটি রোজগারের তাড়নায় তারাও এ দেশের নাগরিক।এদের একটা ভোট যে মূল্য বহন করে সেই একই মূল্য বহন করে বড় চাকরিওয়ালাদের ভোটও।এদেশের গরিব মানুষই সংখ্যায় বেশী,তারাই একটা সরকার গঠন করতে পারে আবার সেই সরকারকে ক্ষমতার অলিন্দ থেকে সরিয়ে দিতেও পারে।যে ভাবে গরিব মানুষগুলোকে দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ্অপমান করল তাতে এই গরিব মানুষজন নিশ্চয়ই সেটা মনে রাখবেন।লকডাউন হয়তো দরকার ছিন কিন্তু েই সব গরিব দিন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনের সমস্যা সুরাহারও দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল সরকারের।তা না করে যেভাবে মানুষগুলোকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেওয়া হল তাতে বলা যায় গণতন্ত্র কায়েম থাকলে তার জন্য মূল্য দিতে হবে বিজেপি দলটাকে।

আর যে সব মধ্যবিত্ত এখনও নিজের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন যারা গরিব মানুষজনগুলির আচরণকে অশিক্ষা আর অসচেতন মানসিকতা বলে গাল দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন,তারা যেন ভুলে না যান এই মারণ ভাইরাসকে এদেশে বহন করে এনেছেন অনায়াসে বিদেশে যাওয়া আসায় অভ্যস্ত তথাকথিত শিক্ষিতরাই।তারাই এখানে এসে রোগ লুকিয়ে মল ও বিয়েবাড়িতে ঘোরাঘুরি করে বিপদ বাড়িয়েছেন।তাই গরিব মানুষগুলোর দিকে অশিক্ষার ্অভিযোগ তোলার আগে ভেবে দেখুন,শিক্ষা শুধু বইয়ের পাতায় থাকে না থাকে মানসিকতায়।যে মানসিকতা এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষকে সম্মান জানাতে পারে না,তাদের বেঁচে থাকা বা না থাকাকে গুরুত্ব দেয় না সেই মানসিকতাকে শিক্ষিত মানসিকতা বলে না।মানুষকে ভালবাসা ও তাদের সম্মান করার অনুভূতিতেই এদেশ মহত ও উন্নত।আর সেই মহত্ব ও উন্নয়নের কারিগর দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলোই।তাই পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে মরিয়া মানুষগুলির পক্ষ নিয়ে আমরা তাদের সহনাগরিক হিসেবে দেশের সরকারের কাছে দাবি করছি সমস্ত মানুষকে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে সহযোগিতা করুক সরকার। একজন মানুষও যেন না খেতে পেয়ে রাস্তায় মরে যেতে বাধ্য না হয়।সরকার যেন মনে রাখে এরকম মৃত্যু হলে তা কিন্তু পাহাড়ের চেয়েও ভারি হয়ে উঠবে।
Previous articleNo COVID 19 only, see it as world war 3 (economic)
Next articleকরোনা আপডেট: দেশে করোনা আক্রান্ত ২৯০২, মৃত্যু বেড়ে ৬৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here