ত কয়েকদিন ধরে রাজধানি দিল্লিতে যা ঘটছে তাতে যে কোন সংবেদনশীল মানুষ আতঙ্কিত ও উত্তেজিত হতে বাধ্য।খোদ রাজধানিতে পুলিশ প্রশাসন একেবারে ঠুটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে আর একদল দুষ্কৃতী লাগাতার হিংসা ছড়িয়ে যাচ্ছে।

এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত ২৭জন মানুষ সাম্প্রদায়িক হিংসার বলি হয়েছেন,তার মধ্যে একজন পুলিশ কর্মীও আছেন।আহতের সংখ্যা শত শত।এ কেমন প্রশাসন যে হিংসা ছড়াতে দেখেও চুপ থাকে?বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেল ও সর্বভারতীয় সংবাদ পত্রের রিপোর্ট বলছে দিল্লিতে পুলিশ প্রশাসন একেবারে নীরব থেকে হিংসা ছড়াতে সাহায্য করছে।সুপ্রিম কোর্ট ও দিন্নি হাইকোর্ট পরিষ্কার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছে এই ভয়াবহ হিংসার দায় তাদের নিতে হবে কারণ মানুষকে তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আদালতের পর্যবেক্ষনের উপর আস্থা রেখেও আমাদের একটা আশঙ্কা হচ্ছে আসলে কী সত্যি ব্যর্থ হয়েছে নাকি প্রশাসন ইচ্ছে করে হিংসা ছড়াতে দিয়েছে ও দিচ্ছে।এই আশঙ্কার কারণ এখন যারা দেশের শাসন ক্ষমতায় বসেছে সেই বিজেপির দাঙ্গা বাধিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অতীত ইতিহাস যথেষ্ট দৃঢ়।

দাঙ্গার রক্তে হাত রাঙিয়ে রাজনাতিক ক্ষমতাকে সুনিশ্চিত করতেই গোধরা হত্যা কান্ড ঘটানো হয়েছুিল,উত্তর প্রদেশেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাজনৈতিক ফায়দা বিজেপি ঘরে তুলেছিল।সেই সব ইতিহাস মাথায় রাখলে এমন আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয় যে বিজেপি আবার সংখ্যা লঘুদের আতঙ্কিত করে এদেশে সিএএ ও এনআরসি চালু করার পথকে মশৃন করতে চাইছে।

সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে দিল্লির ধর্মীয় সংখ্যা লঘুরা লাগাতার আন্দোলনের পথে নেমেছে,শাহিন বাগ দেশের বর্তমান শাসক সম্প্রদায়কে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে তা বোঝা যায় দিল্লিতে সদ্য বিধান সভায় বিজেপি তুমুল ভাবে পরাজিত হওয়ায়।দিল্লির নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিজেপি এখন পেছন দরজা দিয়ে হিংসাকে আশ্রয় করে সিএএ ও এনআরসি বিরেধীদের শবক শেখাতে রাস্তায় ঠ্যাঙাড়ে বাহিনি নামিয়ে দিয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।

যেভাবে রাজধানির মত একটা জায়গায় দিনের পর দিন মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালানো হচ্ছে বাজার দোকান পুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা ধিক্কার যোগ্য।বিজেপি গণতন্ত্র ও ভারতের সংবিধানের মর্মকে অপমান করছে।ভারত সর্ব ধর্ম ও মতের সমন্বয়ের দেশ।সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার দেশ।সেখানে একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে সামনে রেখে হিন্দুত্বকে জাতীয়তাবাদের মোড়কে যে ভাবে দিনের পর দিন সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে তা খুবই বিপজ্জনক ও ভীতিপ্রদ এক প্রক্রিয়ারই নামান্তর।

এমন আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে যে গোটা দেশেই এই প্রক্রিয়াতে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে।প্রত্যেকটি সচেতন মানুষেরই এখন অবস্থান নেওয়ার সময়।সোচ্চারে বলার সময় আমরা রাজনীতি করি না বুঝিও না,আমরা শুধু এদেশের নাগরিক হিসেবে হিংসা মুক্ত নিরাপদ পরিবেশ চাই।আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই আপনি শুধু হিন্দুর প্রধানমন্ত্রী নন,আপনি দিল্লির দাঙ্গায় নিহত প্রতিটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী তাই তাদের সকলের মৃত্যুর দায় আপনাকে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে কোন যুক্তিতে দিল্লির আম জনতা যখন আতঙ্ক ও উতকন্ঠায় জীবন যাপন করছেন আপনি তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে নির্লজ্জ বিলাসি আড্ডায় মেতে থাকেন?দেশের মানুষ আপনাকে নির্বাচিত করেছে শুধু দামি পোষাক পরে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবার জন্য নয়,দেশের মানুষের উন্নতির কথা ভাবার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী জানেন তাঁর শাসনকালে দেশের অর্থনীতি বেহাল।চাকরি নেই,শিল্প হচ্ছে না।স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে।রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি বেঁচে দেওয়ার উদ্যেগ দেখা যাচ্ছে।অথচ দেশের শাসক শুধু হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বাঁধিয়ে ক্ষমতা আর নিশ্চিত করতে ব্যস্ত।এই সময় মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে সব ভেদাভেদ ভুলে শাসকের কাছে কাজ ও খাওয়ার নিশ্চয়তার দাবি তুলতে হবে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মৃত মানুষগুলের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় শাসকের চোখে চোখ রেখে বলতে হবে,এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়।আমার দেশ হিন্দু মুসলমানের একসঙ্গে ভালবেসে থাকার দেশ,আমার দেশ পারস্পরিক সহমর্মিতার দেশ,এ দেশ সবাইকে আশ্রয় দেওয়ার দেশ,শাসক তুমি যদি সেই দেশকে ধ্বংস করতে চাও তবে তোমাকে আমরা বিদায় দিতে দ্বিধা করবো না।এখন মানবিকতা ও বিবেকের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সময়,চুপ থাকার সময় নয়।এখন চুপ থাকা পাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here