দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিজেপি যোগ দিয়েছেন ১২ দিন হল। বছরের শেষ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে বড় পুরস্কার পেলেন শুভেন্দু অধিকারী। জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান করা হল শুভেন্দু অধিকারীকে।
জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সমতুল্য একটি পদ। অর্থাত্ দলে যোগ দেওয়ার পক্ষ কাল কাটার আগেই শুভেন্দুকে সেই মর্যাদা দিল কেন্দ্রীয় সরকার। যা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।’
তৃণমূল ছাড়ার পরই জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দুকে। এবার ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমমর্যাদাসম্পন্ন জেআইসি-র ডিরেক্টর করা হল সদ্য তৃণমূল ত্যাগী রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীকে। যদিও বিজেপিতে গিয়েই শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘কোনও পদের লোভে আমি বিজেপিতে আসিনি। আমাকে পতাকা লাগাতে বললেও তাই করব।’ কিন্তু শুভেন্দুকে পতাকা লাগানোর বদলে বড় পদে বসাল বিজেপি।
অনেকের মতে শুভেন্দুকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাজ্য বিজেপির অনেক নেতা সিআইএসএফের নিরাপত্তা পান। কিন্তু শুভেন্দুকে সিআরপিএফের নিরাপত্তাবলয় ঘিরে রাখে। তাঁর পিছনে কালো স্যুট পরে যে নিরাপত্তারক্ষী দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা সিআরপিএফের নিরাপত্তারক্ষী। এতেই অন্যদের সঙ্গে শুভেন্দুর ফারাক স্পষ্ট।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শুভেন্দুকে জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান করে ঠিক কী লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে চাইলেন মোদীরা?
পর্যবেক্ষকদের মতে, এক তো বাংলারজন্য জুট কর্পোরেশন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দুই, কলকাতার নেলি সেনগুপ্ত সরণিতে জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার দফতর রয়েছে। কলকাতায় এলে শুভেন্দু সেখানে অফিসে বসতে পারবেন। তাঁর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। চাইলে নিজাম প্যালেসেও বসতে পারবেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা।.
তা ছাড়া রাজ্যের অন্যত্র দলের কাজে গেলে সিআরপিএফ বা বিএসএফ গেস্ট হাউসে থাকতে পারবেন শুভেন্দু। হোটেলে থাকার প্রয়োজন হবে না।
মেদিনীপুরের সভা শেষে অমিত শাহ তাঁর চপারে তুলে নিয়েছিলেন শুভেন্দুকে। কলকাতায় এসে বৈঠকও করেছিলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন শুভেন্দুকে।
প্রতিদিনই সদ্য ছেড়ে আসা দলকে বারবার হুমকি দিচ্ছেন বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। এরই মাঝে তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘আমি আমার নিজের বাড়িতে পদ্ম ফোটাব তো বটেই, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে ঢুকেও পদ্ম ফোটাব।’ মঙ্গলবার খড়দহে সারদা-নারদের টাকার প্রসঙ্গ তুলেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন শুভেন্দু। এরই মাঝে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুকে। তাঁর বিরুদ্ধেও ‘তলেতলে’ বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। খুব শীঘ্রই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দুর ভাই। শুধু পরিবার নয়, একাধিক তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদ নিয়ে দলবদল করার পরও তৃণমূল ভাঙানোর কাজ অব্যাহত রেখেছেন শুভেন্দু। সেই সূত্রেই এবার শুভেন্দুকে বড় পদ দিল বিজেপি।
যদিও বোলপুর বিজেপির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কয়েকজন বিধায়ককে কিনে নেওয়ার অভিযোগ এনে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলত্যাগীদের ‘পচা-ধচা’ আখ্যা দিয়ে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওই বিধায়করা দল ছেড়ে যাওয়ায় তৃণমূলের আখেরে কোনও ক্ষতি হবে না। গত মঙ্গলবার বোলপুরে রোড শোয়ের পর ভাষণে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘নির্বাচন সামনে আসতেই টাকা ছড়ানো শুরু করে দিয়েছে। এটা ওদের টাকা নয়, জনগণের। গরিব মানুষ টাকা দিলে নিয়ে নিন, আর ভোটের বাক্সে ফিরিয়ে দিন। ভাবছে, টাকা দিয়ে ক’টা এমএলএ কিনে নিলে তৃণমূলকে খেয়ে নেবে, এত সোজা! টাকা দিয়ে বিধায়ক কিনছে। তাও আবার তৃণমূলের পচা-ধচা বিধায়কদের। ওতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কর্মীরাই আসল সম্পদ। তিরিশটাও আসন পাবে না, অথচ স্বপ্ন দেখছে ২৯৪টা পাওয়ার!’
যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব তো বটেই, বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। পুলিশকে বলছেন তৃণমূলের ক্রীতদাস, কম্পালসারি ওয়েটিংয়ের হুমকি দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে প্রতিটি সভাতেই তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরানোর শপথ করছেন। এবার শুভেন্দুকে আরও উৎসাহিত করতে তাই বড় পদ দিল গেরুয়া শিবির।