ইন্দ্রজিৎ রায় শান্তিনিকেতন
বীরভূম জেলার শিবপুর মৌজায় শিল্পের জন্য দেওয়া জমি ফেরত চাইলেন অনিচ্ছুক চাষির দল। তাদের অভিযোগ, শিল্প নামে অধিকৃত হওয়া জমি সরকার এখন আবাসন তৈরি করে বিক্রি করছে। চাষীদের দাবি হয় বৃহৎ শিল্প করুন না হলে চাষযোগ্য করে জমি ফেরত দিন।
বাম জমানার শেষ ও তৃণমূল সরকারে আসার আগে জমি আন্দোলনের শিরোনামে ছিল শিবপুর মৌজা। ২০০১ সালে বামেরা যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষমতায় তখন প্রায় বারোশো পরিবারের কাছ থেকে শিল্প হবে এই মর্মে ২৯১একর জমি অধিগ্রহণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর অধিকৃত জমিতে কিছু না হওয়ায় বারবার আন্দোলনের নামেন চাষিরা। তখন চাষীদের এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস।
এরপর ২০০৯ সালে বাম সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে চাষীদের আন্দোলন বৃহত্তর হয় এবং সেই জমির কাঁটাতার ভেঙে পুনরায় চাষাবাদ শুরু করেন শিবপুর মৌজার চাষিরা। প্রায় দু’বছর চাষাবাদ করার পর তৃণমূল ২০১১ সালে যখন সরকার গঠন করেন তখন সরকারের তরফ থেকে বিবৃতি দেয়া হয় যে এই জমিতে শিল্প হবে– এই মর্মে শিবপুর মৌজার অন্তর্গত নুরপুর, বেনেপুকুর, মির্জাপুর এলাকার প্রায় বারশো চাষী পরিবার তাদের জমি দান করেন নির্ধারিত সরকারি মূল্যে। কিন্তু সেই একই জায়গায় তৃণমূল সরকার ও আবাসনসহ বিভিন্ন প্রোমোটারি ব্যবসা শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় জমিদাতা চাষিরা। এতে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধও হন তাঁরা।
এই নিয়ে দফায় দফায় তাঁরা আন্দোলন করলেও বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে একপ্রকার বলপূর্বক আন্দোলন দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন চাষীদের একাংশ। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের ফলাফলে তৃণমূলের শক্তি কমলে ফের সরব হন স্থানীয় জমিদাতারা। বুধবার সকালে জমির দানে অনিচ্ছুক চাষিরা শিবপুর মৌজায় অবস্থিত বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েবেল আইটি পার্ক, হিটকোর আবাসন প্রকল্প গীতবিতান এর সামনে বিক্ষোভ দেখান। গোটা এলাকায় পুলিশের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বুধবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও প্রতিবাদ মিছিলের পর এক অনিচ্ছুক চাষী রাধেশাম ব্যাপারী জানান– “বৃহৎ শিল্পের উদ্দেশ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমি তৎকালীন মূল্যে (৪৮ হাজার টাকা প্রতি বিঘা) দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই জমিতে আবাসন ও বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসা গড়ে উঠায় তিনি ক্ষুব্ধ,” ফের জমি ফেরতের দাবি জানান তিনি।
“অধিগৃহীত জমিতে শিল্প ছাড়া অন্য কিছু করা বেআইনি। বিষয়টি মামলা করার ফলে বর্তমানে আদালতের বিচারাধীন। হাইকোর্ট এই নির্মাণ কাজের ওপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন কিন্তু
বিচারাধীন থাকার সত্বেও মাত্র চালিয়ে যাওয়া আদালত অবমাননার শামিল। কিন্তু তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এক প্রকার গায়ের জোরে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার” –বলে জানান মামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম হলেন সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের সম্পাদক অধ্যাপক চঞ্চল চক্রবর্তী। তিনি জানান বিষয়টি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন, যতদিন মামলা চলবে ততদিন স্থগিত রাখতে হবে এই নির্মাণকার্য। আজকের আন্দোলনে নির্মাণ কর্মী দের শান্তিপূর্ণভাবে পাত্তা দেওয়া হয়েছে নির্মাণকার্য বন্ধ রাখার জন্য এরপরও যদি নির্মাণ শ্রমিকরা যদি কাজ চালিয়ে যায় তা হলে বলপূর্বক আন্দোলনের মাধ্যমে হটিয়ে দিতেও পিছনে তাকাবনা।