অর্পিতা দে , কলকাতা:
বিয়ের পর কেটে গেছে সাতদিন আজ তিস্তার দ্বিরাগমন। সামাজিক নিয়ম রীতি সব মেনেই চার হাত এক হলো দ্বীপন আর তিস্তার। গত ৫ই আগস্ট শ্রাবনের এক সন্ধ্যায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন দ্বীপন আর তিস্তা। উলু আর শঙ্খ ধ্বনিতে একমাত্র জামাই দ্বীপনকে বরণ করলেন তিস্তার মা ও আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা।
তিস্তা তখন লাল বেনারসি, ফুল, চন্দন আর গয়নার সাজে লাজে রাঙা কনে বৌ; সন্ধেয় নামার সাথে সাথেই শুরু হলো নিমন্ত্রিত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের শুভেচ্ছা বিনিময়পর্ব; এরপর বিয়ের সান্ধ্য লগ্নে পুরোহিতের উপস্থিতিতে মন্ত্রোচ্চারণের সাথে সাথে চার হাত এক হলো৷
সাতপাক ঘুরে শুভদৃষ্টি, মালাবদল, অগ্নিসাক্ষী ও সিঁদুর দান পর্ব শেষ করে তিস্তা আর দ্বীপন আলিঙ্গনবদ্ধ হয়ে সকলকে জানিয়ে দিলেন তাদের দীর্ঘ প্রণয় পর্বের পর সেদিন থেকে তারা সামাজিকভাবে স্বামী স্ত্রী এবং সারা জীবন একে ওপরের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেয়ার জন্য হলেন অঙ্গীকার বদ্ধ ৷
বাঙালি নিয়ম রীতি অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি পেলেন দ্বীপন চক্রবর্তী ও তিস্তা দাস।
পাঠক ভাবছেন হয়তো এতে আর নতুন কি আছে! বাঙালি বিয়েতো এরকমই হয়। কিন্তু সেদিন কলকাতা তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বুকে এক ইতিহাস সৃষ্টি করলো তিস্তা আর দ্বীপ
ন কারণ এটা শুধুমাত্র তিস্তা আর দ্বীপনের বাঙালি প্রথা মেনে কোনো সাধারণ বিয়ে ছিল না ৷ এটা ছিল এক রূপান্তরিত পুরুষ ও এক রূপান্তরিত নারীর প্রেমের সামাজিক জয় লাভের কাহিনী।
জীবনের অনেক ঝড় ঝাপ্টা পেড়িয়ে রূপান্তরকামী চিকিৎসার এক সংস্থার কর্ণধার হলেন তিস্তা; নিজের বাড়িতে মা ও আত্মীয়স্বজন ছাড়াও নিজের পোষ্য দুটি বিড়াল, চারটি কুকুর এবং পাড়ার প্রায় ১৪-১৫ টি প্রিয় সারমেয় তিস্তার জগৎ। থিয়েটার, অভিনয়, আবৃত্তি জগতেও তিস্তা বেশ সফল।
দ্বীপনের সাথে তার পরিচয় নিজের সংস্থার মাধ্যমেই। দ্বীপনের জীবনেও তিস্তা তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, কিন্তু তা যে কখনোও তাদের প্রণয়ে পরিণত হবে তা তিস্তা নিজেও কখনো ভাবেননি৷ কিন্তু দ্বীপন প্রথম থেকেই তিস্তাকে তার প্রণয়ী হিসেবে দেখে এসেছেন, তাই নিজেই একদিন এক বসন্ত পঞ্চমীর রাতে তিস্তাকে জানিয়ে ছিলেন তার মনের কথা।
প্রেমের শুরু সেই থেকেই৷ একে অপরকে বোঝা, একে ওপরের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়ে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর; এবার তাই সামাজিকভাবে একে ওপরের সাথে বন্ধনের পালা আর তাই ওরা নিজেদের এই বন্ধনের নাম দিলেন ‘রেইনবো ওয়েডিং’৷