দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আপাতত রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না৷ জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে স্বাগত জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বললেন, ‘এই জয় তৃণমূলের আন্দোলনের নৈতিক জয়৷’

কোর্টের রায় সারদা কাণ্ডে শিলং-এ সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে হবে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে৷ এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এতে আপত্তির কিছু নেই৷ এটা সিবিআইয়ের বিষয়৷’’ ‘‌এটা আমাদের নৈতিক জয়। এটা মানুষের জয়। আইনের জয়।’‌ রাজীব কুমার–সিবিআই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে মেট্রো চ্যানেলের সত্যাগ্রহমঞ্চ থেকে একথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‌আমাদের মামলা জোরাল। আমরা কখনওই বলিনি অসহযোগিতা করব। আমরা তদন্তকারীদের পূর্ণ সহযোগিতার পক্ষে। আমরা কোনও সিবিআই অফিসারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এটা যা হয়েছে তা কেন্দ্রের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমি শুধু রাজীব কুমারের জন্য ধর্না দিচ্ছি না

দেশের সব অফিসারের জন্য দিচ্ছি। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে বলে দিয়েছে কোনও আদালত অবমাননা হয়নি। এই জয় সংবিধানের। এই জয় সারা দেশের, দেশবাসীর, সংবিধান বাঁচাও আন্দোলনের।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বের তিন সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়ে আরও জানিয়ে দিল, সিবিআইয়ের তদন্তে সবরকম সাহায্য করতে হবে রাজীব কুমারকে। তবে তাঁকে এখনই গ্রেফতার করা বা তাঁর বিরুদ্ধে সে রকম কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।এ দিন সকালে শুনানি শুরু হতেই প্রথমে সিবিআইয়ের তরফে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই চিটফান্ডের তদন্ত ভার নিয়েছিল সিবিআই। তার আগে চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তের জন্য স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিম তথা এসআইটি গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। এসআইটি-র নেতৃত্বে ছিলেন রাজীব কুমার। তদন্তের সময় তাঁরা প্রচুর নথিপত্র, ইলেকট্রনিক তথ্য প্রমাণ, কল রেকর্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু বারবার তা চাওয়া সত্ত্বেও তা দেওয়া হয়নি সিবিআইকে। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে বার বার নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও তিনি সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দেননি।এর পরই রাজ্য সরকারের তরফে বলেন কংগ্রেস নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে যে ভাবে সিবিআই হানা দিয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য হল তাঁকে অপদস্ত করা অপমান করা। তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর হয়নি।অভিষেক আরও বলেন, সিবিআই যদি তদন্তের ব্যাপারে সিরিয়াস হতো তা হলে রাজীব কুমারকে উপযুক্ত সময়ান্তরে চিঠি পাঠাতো। একবার নোটিস পাঠাচ্ছে তো তার পর পরের নোটিস পাঠাচ্ছে এক বছর পর। রবিবার সিক্রেট অপারেশন চালানোর মতো কোনও তাড়া আগে দেখা যায়নি। অথচ কলকাতার পুলিশ কমিশনার সিবিআইকে আগেই জানিয়েছিলেন যে, কোনও নিরপেক্ষ জায়গায় তিনি সিবিআইয়ের অফিসারদের সঙ্গে বসতে রাজি রয়েছেন। যেহেতু এসআইটি ভেঙে গিয়েছে। এবং ওই তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তাই একবার পুরনো টিমের সঙ্গে সিবিআই বসলেই সবা কথা একবারে সেরে নেওয়া যেত।অভিষেকের এই বক্তব্য শুনেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, আমি বুঝে গিয়েছি। আমি যে রায় দেব কোনও পক্ষেরই আপত্তি থাকার কথা নয়। কলকাতার পুলিশ কমিশনার যখন সিবিআইয়ের সঙ্গে বসতে রাজি, তখন তিনি দ্রুত ওঁদের সামনে হাজিরা দিন। এ কথা শুনে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়, সিবিআই যদি তাদের অফিসে বা দিল্লিতে রাজীব কুমারকে ডাকে তা হলে তাঁর পদ মর্যাদায় আঘাত লাগবে। তৃতীয় কোনও জায়গায় দেখা করলে ভাল। তা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ঠিক মেঘালয়ের শিলংয়ে গিয়ে সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দেবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বা কোনও কঠোর ব্যবস্থা তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া যাবে না।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত করছে। তাই তদন্তে অসহযোগিতা করা আদালতকে অবমাননা করারই সামিল বলে মত সিবিআইয়ের। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি এ দিন বলেন, আদালতকে অবমাননার ব্যাপারে শুনানি নিয়ে তাড়াহুড়ো নেই। ওই বিষয়ে ধীরে সুস্থে শুনব। আমরা কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে নোটিস পাঠাচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here