দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একান্তই ব্যক্তিগত আক্রোশেরই বলি হয়েছেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত অভিজিৎ কুন্দারি এখনও ধরা না পড়লেও, বাকিদের জেরা করে খুনের মোটিভ সম্পর্কে মোটের উপর নিশ্চিত গোয়েন্দারা।

খুনের পর কেটে গেছে ৩ দিন। এলাকার শোক-ক্ষোভ থিতিয়ে গেছে অনেকটাই। তবে আলোচনার কেন্দ্রে এখনও নিহত বিধায়কই। কী কারণে খুন, তাই নিয়ে চলছে কাঁটাছেড়া বিশ্লেষণ৷গত শনিবার আততায়ীর গুলিতে সত্যজিৎবাবু নিহত হওয়ার পরে মোটিফ হিসেবে রাজনীতিই ছিল প্রথম সারিতে। কারণ খুনের খবর ছড়াতেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ ঘটনার দায় চাপিয়েছিলেন বিজেপির উপর। যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল তাঁদের মধ্যে রয়েছে মুকুল রায়ের নামও।

এই ঘটনায় প্রথম যাদের গ্রেফতার করা হয় সেই সুজিত মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডল এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত। কার্তিকের বাড়িতে গেঞ্জি তৈরির কারখানা রয়েছে। ঘটনার দিন সে কারখানায় কাজ করছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে পেশায় গাড়ির খালাসি সুজিতকে জেরা করে এই মামলার বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে বিধায়ক খুনের মাস্টার মাইন্ড অভিজিৎ কুন্দারিকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত মিসিং লিঙ্কগুলি থেকেই যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।

শনিবার সন্ধ্যায় সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে খুন হন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎবাবু। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রায় ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। এ ছাড়া আশেপাশের থেকে উঠে আসা তথ্য থেকে বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র অভিজিতের সঙ্গে বিধায়ক সত্যজিৎবাবুর পুরোনো শত্রুতার কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। কলেজের ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ থাকাকালীন টাকা পয়সা নিয়ে গণ্ডগোলের সময় বিধায়ক তাঁকে প্রকাশ্যে চড় মেরেছিলেন বলেও অভিযোগ। এরপর ফুলবাড়িতেই মহিলা সংক্রান্ত গণ্ডগোলে জড়িয়েও বিধায়কের কাছে প্রকাশ্যেই চড় খেয়েছিলেন ওই যুবক। অভিজিৎ তৃণমূল কর্মী হলেও বিধায়কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে ভালো ছিল না তা জানেন দলের অনেকেই।

বিজেপির জেলা সভাপতি (দক্ষিণ) জগন্নাথ সরকার বলেন, “আসলে সীমান্তবর্তী এলাকা। এখানে টাকা ওড়ে। গরু পাচার, চোরাচালান। নিজেদের দলের লোক হলেও বখরার গণ্ডগোলই আততায়ীর আক্রোশের কারণ। আর তার জেরেই বলি হয়েছেন বিধায়ক।” বিজেপিকে জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে জানান, এলাকায় পায়ের তলায় মাটি শক্ত করতেই সত্যজিৎ বিশ্বাসকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। এখানে অন্য আর কোনও কারণ নেই।

২০১৬ সালের ১৬ মে বগুলায় দলের অফিসের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা দুলাল বিশ্বাস। অভিযুক্ত অভিজিৎ তাঁরই অনুগামী ছিলেন বলে জানা গেছে। বিধায়কের উপর দীর্ঘদিন ধরে পুষে রাখা রাগেই তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা। ধৃত সুজিতকে জেরা করেও পুলিশ জানতে পেরেছে অন্তত ছ মাস ধরে বিধায়ককে মারার জন্য ছক কষা হচ্ছিল।

ঘটনার দিন বিধায়কের দেহরক্ষী প্রভাস মণ্ডল ছুটি নিয়েছিলেন। তবে তা থানাকে জানিয়ে, খাতায় কলমে নয়, মৌখিকভাবে। এরজন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। সারাক্ষণ বিধায়ককে নজরে রাখা আততায়ীদের কাছে সেই খবর থাকায় তারা বাড়তি সুবিধা পেয়ে যায় বলে পুলিশের দাবি। সে দিন ঘটনাস্থলের আশেপাশে অভিজিৎকে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই। তবে খুনের পর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যায় সে। এলাকাটি একেবারে সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় তার বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশকর্তারা।এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে এখনও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here