দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বারে বারে সতর্ক করা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ কথা কানে তুলছেন না। মাস্ক না পরেই অবলীলায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজের তো ক্ষতি করছেনই, সেইসঙ্গে অন্যেরও। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে দেশ-বিদেশের একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে মাস্কে মুখ ঢাকার ইতিবাচক দিক। মাস্ক না-পরলে করোনা সংক্রমণের বর্তমান চিত্রটা যে আরও ভয়াবহ হতে পারত, তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তা দেখানো হয়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু -র কোভিড গাইডলাইনে প্রথম থেকেই মাস্কের উপর আলাদা করে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তার পরেও লোকজনের চেতনা ফেরেনি। দিল্লি, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্য বেয়াড়া লোকজনকে শায়েস্তা করতে জরিমানা দ্বিগুণ করলেও যে ছবিটা বদলেছে এমনটা বলা যাবে না। একাধিক বাহানায় কিছু মানুষ মাস্ক পরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় ঘুরছেন। গণপরিবহণে চাপছেন। সেইসঙ্গে সংক্রমণেরও ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে বুধবার কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে গুজরাত হাইকোর্ট।
বারবার বলা সত্ত্বেও যাঁরা কথা শুনছেন না, তাঁদের জন্য কড়া দাওয়াই হাইকোর্টের। উচ্চ আদালতের নির্দেশ হল, যাঁরা কোভিডের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করছেন, তাঁদের জন্য সরকারকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে হবে। কী সেই শাস্তি? গুজরাত হাইকোর্ট পরিষ্কার জানিয়েছে, এতবার বলা সত্ত্বেও যাঁরা মাস্ক পরছেন না, তাঁদের কোভিড সেন্টারগুলিতে পাঠাতে হবে। সেখানে তাঁদের ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ দিতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। হাইকোর্টের এই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
গুজরাত সরকারকে এই মর্মে নোটিফিকেশন জারি করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গুজরাতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়ার পরেই হাইকোর্ট এই রায় দেয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ১১ হাজার ২৫৭। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত ১,৪৭৭ জন। যদিও, মৃতের সংখ্যা তুলনায় অনেকটাই কম। মঙ্গলবার গোটা রাজ্যে ১৫ জন মারা গিয়েছেন। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪,০০৪।
গত মঙ্গলবারের হিসেব অনুযায়ী, গুজরাতে অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ১৪,৮৮৫। এর মধ্যে বর্তমানে ভেন্টিলেটরে রয়েছেন ৮১ রোগী। বুধবারের হিসেবে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন ১,৫৪৭ রোগী। সবমিলিয়ে সুস্থ ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৩৬৮ জন। এ পর্যন্ত ৭৮ লক্ষ ৯৪ হাজার ৪৬৭ জনের কোভিড টেস্ট হয়েছে।
কোথায়-কখন মাস্ক পরতেই হবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন গাইডলাইন পড়ুন:
হাইলাইটস
- নিজেদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
- এই নিয়মের মাধ্যমে সংক্রমণ অনেকটাই আটকানো যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
- জিমে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এবং উপযুক্ত হাওয়া চলাচল হলে মাস্কের প্রয়োজন নেই।
দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান-স্যানিটাইজার একাধিক বার ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত থাকা এবং মাস্ক ব্যবহার করা– এই নিয়মগুলির মাধ্যমেই টিকা-পূর্ববর্তী বিশ্ব জয় করতে পারবে করোনাভাইরাসকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( হু) বরাবরই এই নিয়মকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করার কথাই বলে এসেছে। এর পাশাপাশি নিজেদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এই নিয়মের মাধ্যমে সংক্রমণ অনেকটাই আটকানো যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাস রোধে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে নানা মতবিরোধ রয়েছে। অনেকের মতে, স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা দিচ্ছে এই মাস্ক, অনেকের আবার অত্যধিক সময় মাস্ক ব্যবহারের ফলে ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে, শ্বাস নিয়েও সমস্যা হচ্ছে অনেকের। বিশেষ করে শরীরচর্চার সময় মাস্ক ব্যবহার নিয়ে নানা সমস্যাও সামনে এসেছে। এতে ভালোর জায়গায় বরং দম আটকে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
সম্প্রতি এই মাস্ক ব্যবহার নিয়ে নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এই গাইডলাইনে বদ্ধ ঘরের ভিতরেও মাস্ক পরার কথা বলা হয়েছে। শুধু সেন্ট্রালি এসি ঘরেই নয়, এসি গাড়িতে, ছোট ঘরেও খুব সহজেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে হু এমন পরিস্থিতিতেও মাস্ক পরার কথা বলছে। এছাড়া জনবহুল ইনডোর এলাকায় তো মাস্ক পরতেই হবে। তবে খুব টাইট মাস্ক পরতে নিষেধ করেছে হু। তবে জিমে ঘাম ঝরানোর সময় মাস্ক না পরার কথাই বলেছে হু।
জিমে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এবং উপযুক্ত হাওয়া চলাচল হলে মাস্কের প্রয়োজন নেই। এতে অনেক ক্ষেত্রে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়তেও পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের। জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরতেই হবে। যতক্ষণ সম্ভব, যতটা সম্ভভ মাস্ক পরেই থাকতে বলা হয়েছে। ৫ বছরের উপরের শিশুদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এর নীচের শিশুরা না পরলেও চলবে। এই অভ্যেস যত তাড়াতাড়ি হবে এবং থাকবে ততই মঙ্গল এই মারণভাইরাসকে কাবু করার জন্য।