মাদলের তালে সাঁওতাল পরগণায় সপ্তাহের কটা দিন

0
871

লিখছেন- দেবন্বিতা চক্রবর্তী:

কর্মব্যস্ত জীবনে এখন বড় বড় ট্যুরের থেকে সকলে চায় নির্ঝন্টাটে নিরিবিলি ও অবশ্যই পরিচিত নয় এমন জায়গায় একটি বা দুটি দিন কাটিয়ে ফিরে আসতে ৷সেই দিক থেকে সাঁওতাল পরগণা অর্থাৎ বীর ভূমের লাল মাটি হলে তো কোনো কথাই নেই , প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে একটা দিন
মল্লহাটি৷

বীরভূমের রামপুরহাট প্রাচীন শহর হিসাবে প্রসিদ্ধ ৷ শিয়ালদা থেকে ভোর ৩.৩০ এ গৌড় এক্সপ্রেস এ চড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৬ টার সময় পৌঁছে যাওয়া যায় রামপুরহাট স্টেশানে ৷ ঐতিহাসিক সাঁতাল বিদ্রোহকালীন সাহেব দের তৈরী গোলঘরটি এই রাম পুর হাটের প্রধান আকর্ষন বলা যেতে পারে ৷

সেটি থেকে যে কোনো যান বাহন অর্থাৎ অটো বা টোটোর সাহায্য নিয়ে চলে যাওয়া যায় সোজা মল্লহাটি যা স্থানীয় ভাষায় মালুটি নামে খ্যাত ৷ মল্লরাজাদের তৈরী এই নগরে প্রায় ৭২ টি টেরা কোটার মন্দির আছে যা প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ৷ কিন্ত বেশির ভাগই ভগ্ন অবস্থা , এখন ধ্বংস স্তূপে পরিনত ।

৩৫ টি মতো মন্দির ভ্রমনার্থীদের দর্শনের জন্য এখনও রয়েছে, যে মন্দিরের টেরাকোটার কাজে মুগ্ধ হতে হয় ৷ এক জায়গায় মন্দির গুলো যেন দলবদ্ধ হয়ে সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে সেই লক্ষণ সেন বল্লাল সেন এর যুগ থেকে যুগযুগান্তের প্রহরী হয়ে ৷
এরপর চলে যাওয়া যায় মৌলাক্ষী কালি মন্দির , যে মা কে সাধক বামাক্ষ্যাপা বড়মা বলে ডাকতেন ৷ মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হিসাবে বলা যায় আদিবাসীদের উৎসব যা প্রধানত হয় কালি পুজোর সময় ৷

মাদলের তালে তালে ট্রিপিক্যাল সাঁওতালি দের এই উৎসব সকলের মনোগ্রাহী হয় ৷ তারা পীঠের মায়ের পুজোর আগেও এই মন্দিরের পুজো দেওয়া হয় ৷ শান্ত পরিবেশে মায়ের মন্দিরে বসে চোখ আর মন জুড়াবে ।পাশেই বয়ে চলছে কোপাই নদীর খাড়ি৷ স্থানীয় পরিবেশে বেশির ভাগই বর্ধিষ্ণু বাঙালিদের বাস , আর আছে সাঁওতালি গ্রাম আর লালমাটির রাস্তা । জঙ্গলের রাস্তা থেকে আনা ঝাঁকা মাথায় সাঁওতালি মহিলা দের যেন পটে আকা তৈল চিত্র মনে হয় ৷

নলহাটি

রামপুরহাট স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে মাত্র ৪৫ মিনিটের রাস্তায় মাত্র ১৪ কিমিতে পড়বে নলহাটি । নলহাটি নামকরন হয় নল রাজাদের রাজধানীর অনুযায়ী ৷প্রথমে নাম ছিল নলহাটেশ্বরী অপভ্রংশ ললাটেশ্বরী বা নলহাটি ৷ রেল স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিমি র মধ্যে পড়বে সতীপিঠের একপিঠ অনুচ্চ পাহাড়ের উপর দেবী পার্বতীর নলাটেশ্বরী মন্দির ৷

চারচালা মন্দিরে বস্ত্রে আচ্ছিদিত সিন্দুর চর্চিত পাষান খন্ডে রূপার চোখ , নাক, মুখ বসিয়ে দেবীরূপে পূজিতা হন । বিষ্ণ চক্রে খন্ডিত সতীর কন্ঠনালা পড়ে এখানে , দ্বিমতে নলক অর্থাৎ নলা বা নুলো তথা কনুইএর হাড় পড়ে এখানে । কিংবদন্তি ২৫২ বঙ্গাব্দে স্বপ্নাদেশে কামদেবের আবিষ্কার , আর মন্দির গড়েন নাটোরের রানী ভবানী এখানেও দ্বিমত ….রামশরণ শর্মা স্বপ্নাদিষ্ট হন -মন্দির তৈরী করেন বাণিজ্য করতে বেরিয়ে সওদাগরেরা ।

থাকার ব্যবস্থা নতুন হয়েছে ধর্মশালায়, যেখানে এসি নন এসির বন্দোবস্থও ইদানিং হয়েছে ৷

এরপর নলহাটি থেকে ভদ্রপুরের বাসে NH2 ধরে বহরমপুরহামী নানান বাস যাচ্ছে তাতে করে চলে যাওয়া যায় আকালীপুরে দেবী আকালীর মন্দির ।আটকোনা গর্ভগৃহে মহারাজ নন্দকুমারের স্বপ্নে পাওয়া দেবী কালির মূর্তিতে বৈচিত্র আছে ৷ সর্পাসীনা , সর্পাভরণা , বাভয়দায়িনী দ্বিভুজা , শ্মশানবাসিনী জগন্মাতা শ্রীশ্রী গুহ্য কালিকার মূর্তি হয়েছে কষ্টিপাথরে ৷

আকালী পুরে শ্মশানের ধারে মন্দিরটি পাশে বয়ে চলেছে ব্রাহ্মনী নদী , যা বর্ষায় ও শরতের জলে নতুন রূপ খোলে ৷ নদীর ধারে বালূচড়ে দাঁড়ালে সারা সপ্তাহের ক্লান্তি নিমেষে উধাও ৷
ফেরার পথে নলহাটি স্টেশান থেকে ৪.৫০ এ ডাউন গনদেবতা এক্সপ্রেসে চার থেকে পাঁচ

ঘন্টার রাস্তায় ফিরে আসা যায় হাওড়া স্টেশানে।

বাংলার প্রাচীন রাজাদের যথা মল্ল , সেন ,নল ইত্যাদির প্রাচীনতার স্বাক্ষসাথে সাথে উইকেন্ডের ট্যুর প্ল্যান কিন্তু জমে যেতে পারে ৷

Previous articleএক যে আছে মৌসুনি দ্বীপ
Next articleনজরদারি নামে, দেদার দূষণ দিঘা উদয়পুর সৈকতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here