পার্থ সারথি চক্রবর্তী,কলকাতা:

দুর্ঘটনার মুখ থেকে বাঁচিয়ে স্মৃতিভ্রংশের শিকার বৃদ্ধাকে মাত্র ২ ঘন্টায় ছেলের কাছে ফিরিয়ে দিল বেলেঘাটা ট্রাফিক পুলিশ

৫ জুন, সন্ধে। ঘড়ির কাঁটা তখন ৮.৩০ ছুঁইছুঁই। বাইপাসের চিংড়িঘাটা ক্রসিং-এ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট অমরনাথ দাশ এবং সার্জেন্ট সন্তু পাল। হঠাৎই তাঁদের চোখে পড়ে, সিগনাল না দেখেই একজন বৃদ্ধা রাস্তা পারাপার করতে যাচ্ছেন আর উল্টোদিক থেকে একটি ট্রাক ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে। দ্রুত দৌড়ে গিয়ে সেই বৃদ্ধা মহিলাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে আনেন সার্জেন্ট অমরনাথ দাশ আর সার্জেন্ট সন্তু পাল। সামান্য দেরি হলেই বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

ঘটনার অভিঘাতে হতচকিত হয়ে গেছিলেন সেই বৃদ্ধা মহিলা। প্রথমে তাঁকে ধাতস্থ করেন দুই সার্জেন্ট। তারপর পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সেই বৃদ্ধা জানান, তাঁর নাম সুধারানী কর্মকার। বাড়ি বেহালা। কিন্তু কিছুতেই নিজের বাড়ির ঠিকানা মনে করতে পারছিলেন না তিনি। সুধারানী দেবী জানান, সেদিন সকালে ছেলের সঙ্গে সামান্য মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি রাগ করে বেরিয়ে এসেছিলেন বাড়ি থেকে। তারপর চলে এসেছিলেন সল্টলেকে এক আত্মীয়র বাড়ি। সন্ধেবেলা বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ করেই তিনি বাড়ির ঠিকানা ভুলে যান। তারপর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরছিলেন চিংড়িঘাটা ক্রসিং-এ। সার্জেন্টদের অনেক কষ্টে ছেলের নাম আর কর্মস্থল বলতে পেরেছিলেন সুধারানী দেবী। জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে দিলীপ কর্মকার বেহালা বাজারে একটি দোকানে কাজ করেন।

সমস্ত তথ্য জানার পর সার্জেন্ট অমরনাথ দাশ এবং সার্জেন্ট সন্তু পাল দ্রুত খবর পাঠান বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডে। ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের ওসি, ইনস্পেক্টর পল্লব হালদার এবং অ্যাডিশনাল ওসি, ইনস্পেক্টর ঋত্বিক মুখার্জী। বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের ওসি যোগাযোগ করেন ডায়মন্ড হারবার ট্রাফিক গার্ডের ওসি, ইনস্পেক্টর আশীষ রায়ের সঙ্গেও। সুধারানী কর্মকারের ছেলে যে দোকানে কাজ করেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই দোকানটিকে চিহ্নিত করেন ডায়মন্ড হারবার ট্রাফিক গার্ডের ওসি। যোগাযোগও করেন দিলীপ কর্মকারের সঙ্গে।

ইতিমধ্যে, বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের ওসি সুধারানী দেবীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেন ডায়মন্ড হারবার ট্রাফিক গার্ডের উদ্দেশ্যে। সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন তাঁর ছেলে দিলীপ কর্মকার। মা-কে ফিরে পেয়ে তখন দুশ্চিন্তার মেঘ কেটে গেছে তাঁর মুখ থেকে। ছেলেকে দেখে সকালের রাগ ভুলে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সুধারানী দেবীর মুখও। দুর্ঘটনার মুখ থেকে বাঁচিয়ে মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যেই ছেলের কাছে সুধারানী দেবীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের অফিসাররা। ধন্যবাদ প্রাপ্য ডায়মন্ড হারবার ট্রাফিক গার্ডের ওসিরও।
* — *
ছবিতে সুধারানী কর্মকার তাঁর ছেলে দিলীপ কর্মকারের সঙ্গে। বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের ওসি, ইনস্পেক্টর পল্লব হালদার, ডায়মন্ড হারবার ট্রাফিক গার্ডের ওসি, ইনস্পেকটর আশীষ রায় ও বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের অ্যাডিশনাল ওসি, ইনস্পেক্টর ঋত্বিক মুখার্জী এবং দুই সার্জেন্ট অমরনাথ দাশ ও সন্তু পাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here