দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সকাল ৯টা বেজে ২৮ মিনিট। নির্দিষ্ট সময়েই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ হল কার্টোস্যাট ৩ স্যাটেলাইটের। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল ‘পিএসএলভি-সি৪৭’-এর পিঠে চড়ে মহাকাশের দিকে উড়ে গেল এই স্যাটেলাইট। সফল উৎক্ষেপণের কথা ঘোষণা করা হল ইসরোর তরফে।

এই উৎক্ষেপণে পিএসএলভি রকেটের সাহায্যে ভারতের কার্টোস্যাট ৩ ছাড়াও আমেরিকার ১৩টি স্যাটেলাইট নিয়ে যাওয়া হয়েছে মহাকাশে। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের ‘নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড’ ( NSIL )-এর চুক্তির ভিত্তিতেই এই ১৩টি কৃত্রিম উপগ্রহকে পাঠানো হবে ‘সান সিনক্রোনাস অরবিট ( SSO )’-এ। এদিনের উৎক্ষেপণের সঙ্গে একটি নতুন রেকর্ড গড়ল ইসরো। এখনও পর্যন্ত ৩০০টি স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। পৃথিবী থেকে ৫০৯ কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে, ৯৭.৫ ডিগ্রি কোণে প্রদক্ষিণ করবে এই কার্টোস্যাট ৩।

কার্টোস্যাট ৩ স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির হাল হকিকত জানানো। সেইসঙ্গে দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে এই স্যাটেলাইট। ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন জানিয়েছেন, ‘‘দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত করতেই কার্টোস্যাট সিরিজের এই উন্নত সংযোজন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে শত্রুঘাঁটির গোপন খবর পৌঁছে দেবে এই উপগ্রহ। কড়া নজরদারি চালাবে সীমান্তেও।’’

১৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের কার্টোস্যাট ৩ অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট। কার্টোস্যাট ২ স্যাটেলাইটের ক্যামেরার রেজোলিউশন ছিল ০.৫ মিটার বা ৫০ সেন্টিমিটার। এই স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে তা করা হয়েছে ০.২৫ মিটার বা ২৫ সেন্টিমিটার। যার অর্থ, এত দিন ৫০ সেন্টিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের কোনও পদার্থকে মহাকাশ থেকে নিখুঁত ভাবে দেখতে পারত না কার্টোস্যাটের পুরনো সিরিজের স্যাটেলাইটের ক্যামেরা। কিন্তু কার্টোস্যাট-৩-এর ক্যামেরা ২৫ সেন্টিমিটার আকারের পদার্থকেও মহাকাশ থেকে ভাল ভাবে দেখতে পারবে।

ইসরো জানিয়েছে, কার্টোস্যাট ৩ উপগ্রহের কাজ হবে সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা। নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ইজরায়েলি বোমা নিয়ে দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে জইশ, লস্করের মতো পাক মদতপুষ্ট একাধিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের প্রতি মুহূর্তের গতিবিধি ভারতের সেনার হাতে তুলে দেবে এই উপগ্রহ।

কার্টোস্যাট ৩-এর হাই রেজোলিউশন ক্যামেরা যেহেতু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকেও নজরে আনতে পারে, তাই শত্রুপক্ষের সেনাঘাঁটি বা জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটিগুলির উপর মহাকাশ থেকে নিখুঁত ভাবে নজরদারি চালাতে পারবে এই স্যাটেলাইট। এর ক্যামেরায় ধরা পড়বে জঙ্গিদের বন্দুক, বাঙ্কারও। গাছপালার আড়ালে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের গোপন সুড়ঙ্গও চিহ্নিত করবে এই স্যাটেলাইট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here