দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোটমুখী বাংলায় ফের দরাজহস্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা বলেন, ‘৫৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলাম। এদিন ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করা হল। ৩ লাখ ২৯ হাজার কর্মসংস্থান হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে।’ প্রাক্তন খেলোয়াড়দের হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ভোট ঘোষণার আগে তাঁর শেষ বাজেটে অঢেল প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৬ হাজার কিলোমিটার রাস্তা থেকে ডজন খানেক ফ্লাইওভার—সেই তালিকা বেশ লম্বা।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এদিন বিকেলে ও মঙ্গলবার ‘মাটিতীর্থ’ থেকে মোট ১৯ টি প্রকল্পের সূচনা ও উদ্বোধন করবেন তিনি। এই সব প্রকল্প খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এবং সেই গুলি রূপায়ণ হলে বাংলায় ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সারা ভারতে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে, বাংলায় ৪০ শতাংশ দারিদ্রতা কমিয়েছি। কোভিড, আমফানের দিনগুলো দেখেছি। বাংলাই আজকে সারা পৃথিবীর গন্তব্যস্থল। আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রতিভা রয়েছে।’

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘৩ বছরে ১ লাখ করে ২৬ হাজার ক্লাবকে সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার। ৩৪টি ক্রীড়াসংস্থাকে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করেছে। ৮ হাজার ২৮৯ ক্লাবকে ৮২ কোটি ৮৯ লক্ষ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ৯৪৭টি স্পোর্টস কোচিং ক্যাম্পকে ১ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। ১০০ জন ছেলেমনেয়েকে স্পনসর করবে রাজ্য। ক্লাবগুলোকে কেন সাহায্য করা হবে, এ নিয়ে অনেকে রাগারাগি করেন। এই ক্লাবগুলোই মানুষের পাশে দাঁড়ায়’।

প্রসঙ্গত, ভোটমুখী বাংলায় উন্নয়নের অস্ত্রে শান দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। গত বছরের শেষ লগ্নে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় সমাধান’ কিংবা সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-এমন অনেক উন্নয়নমুখী কর্মসূচিতে ইতিমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার। ‘মমতা সরকার ২’-এর বিদায়ী বাজেটেও মা-মাটি-মানুষের সরকারের জনমোহিনী দিকই বাজেট বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে। ‘অতিমারি-আমফান-কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’-এই ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলা ‘অসমসাহসী’ লড়াই করে যে ‘অপরাজিত’, সেই বার্তাই তুলে ধরা হয় এবারের রাজ্য বাজেটে। ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এ হেন বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ বাজেট বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘১০০ দিনের কাজে ক্ষুদ্রশিল্প, গ্রামে বাড়ির তৈরির ক্ষেত্রে, গ্রামে রাস্তা নির্মাণে, সংখ্যালঘু বৃত্তি প্রদানে, দক্ষতা বৃদ্ধিতেও আমরা এক নম্বরে। ২০১১-১২ থেকে ২০১৭-১৮ সময়কালে দারিদ্র দূরীকরণেও আমরা এক নম্বর স্থান অধিকার করেছি।’ রাজ্যে ২০১১ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নতি লক্ষ্য করা গিয়েছে বলেও তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রসঙ্গ পরিসংখ্যান দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাজ্যের GDP ২.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্ব আদায় ২.৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে পরিকল্পনাখাতে খরচ ৭.২ গুণ বেড়েছে। কৃষি ও সেই সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ব্যয় ৬.১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ) ব্যয় ৩.৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে’।

https://www.facebook.com/MamataBanerjeeOfficial/videos/454731688992476/

এদিন মুখ্যযে প্রকল্পগুলির কথা মমতা জানিয়েছেন তা হল—


• কলকাতায় চর্মনগরীতে ১০২ কোটি খরচ করে কমন এফ্লুয়েন্ট প্লান্ট।
• হাবড়ায় মেগা পাওয়ারলুম ক্লাস্টার। বানিপুরে ১০ একর এবং অশোকনগরে ৪০ একর জমিতে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত হবে এই ক্লাস্টার।
• ৭ কোটি টাকা খরচ করে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে তাঁতের হাট।
• কোচবিহারে ভাওয়াইয়া শিল্পীদের জন্য কমন ফেসিলিটি সেন্টার।
• কোচবিহারে মেখলা ড্রেস তৈরির জন্য কমন ফেসিলিটি সেন্টার। খরচ ৪ হাজার কোটি টাকা।
• বাতাসা, কদমা তৈরির জন্য পূর্ব বর্ধমানে একটি অভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্র।
• মালদহের মধুঘাটে সিল্ক পার্ক।
• শিলিগুড়ির ফুলবাড়িতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।
• কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে মেগা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং লজিস্টিক্স পার্ক।
• পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্পশহর।
• দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় ফার্মাসিউটিক্যাল পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩০০ কোটি টাকা।
• বজবজে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা।
• বাঁকুড়ার বড়জোরায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা।
• পশ্চিম মেদিনীপুরে টয় পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা।
• হাওড়ার জগদীশপুরে হোসিয়ারি পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫০ কোটি টাকা।
• হাওড়ার উনসানিতে টেক্সটাইল পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা।
• জলপাইগুড়ির বিন্নাগুড়িতে শিল্পাঙ্গন পার্ক। বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা।

বাংলায় শিল্প বাণিজ্যের অধঃপতন ও অনগ্রসরতা নিয়ে রবিবার সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন, বাংলায় গত দশ বছরে একটা শিল্পও স্থাপন করতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উল্টে যে ইস্পাত কারখানার পত্তনের কথা ছিল, সেখানে রহস্যজনক ভাবে এখনও উৎপাদন শুরু হয়নি। তার পরই এই বড় ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here