দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সব জল্পনার অবসান। আগামী সপ্তাহের বুধবার তথা ১১ নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে লোকাল ট্রেন পরিষেবা ফের চালু হবে বলে জানালেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।
লোকাল ট্রেন চালানোর ব্যাপারে নবান্নের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক ছিল রেলের অফিসারদের। ওই বৈঠকের পর রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রথম দিন অর্থাৎ আগামী বুধবার হাওড়া ও শিয়ালদহ মিলিয়ে ৩৬২টি ট্রেন চলবে। তারপর সুরক্ষা ব্যবস্থা দেখে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। বিধি কার্যকর হওয়া ও সুরক্ষা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে আগামী সোমবার ফের নবান্নে বৈঠকে বসবেন রেল ও রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা।
এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে গ্যালপিং ট্রেন চালানো হবে। সব স্টেশনে সেই ট্রেন দাঁড়াবে না। তা ছাড়া রেলের তরফে প্রাথমিক ভাবে বলা হয়েছে,নতুন কোনও টাইমটেবিল হবে না। পুরনো সময় অনুযায়ী ট্রেন চলবে।

যথাযথ যাত্রী পরিবহণের জন্য পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কাছে ‘উপযুক্ত সংখ্যক’ ট্রেনের দাবি করেছিল রাজ্য। তারই প্রেক্ষিতে যথাযথ পরিষেবা ও যাত্রীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পুলিশ প্রয়োজন বলেও রাজ্যকে জানাল রেল।

বুধবার স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ও পরিবহণসচিব রাজেশ কুমার সিনহার সঙ্গে লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার পর আবার বৃহস্পতিবারও নবান্নে আসেন রেলকর্তারা। সেখানেই ঠিক হয়, সামনের বুধবার থেকে চলবে রাজ্যের লোকাল ট্রেন। আপাতত ১৮১ জোড়া অর্থাৎ ৩৬২টি করে লোকাল ট্রেন চালানো হবে। তবে, নতুন কোনও সময়সূচী আপাতত চালু হচ্ছে না। পুরনো সময় সূচী মতোই চলবে ট্রেন।

শিয়ালদা ডিভিশনে অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার কারণে ওই ডিভিশনে আপাতত ১১৪ জোড়া অর্থাৎ ২২৮টি ট্রেন, হাওড়া ডিভিশনে ৫০ জোড়া অর্থাৎ ১০০টি লোকাল ট্রেন চলবে। বাকি ১৭ জোড়া অর্থাৎ ৩৪টি ট্রেন চলবে দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশন অর্থাৎ খড়গপুর থেকে।

রেল ও রাজ্য পরস্পরের থেকে কী চাইছে, বুধবারের এক ঘণ্টার বৈঠকে তাই নিয়েই আলোচনা হয়। রেলের একটি সূত্র জানিয়েছিল, রাজ্য সরকার চায়, ব্যস্ত সময়ে হাওড়া, শিয়ালদহ এবং খড়্গপুর ডিভিশন মিলিয়ে ২১০টি ট্রেন চালাক রেল। যদিও নবান্ন এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। কিন্তু এদিন এ বিষয়ে স্পষ্টতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল।

লোকাল ট্রেন চালানোয় রেলকে সহায়তা করতে রাজ্যের প্রয়োজন রেলের এসওপি। অন্য দিকে, রাজ্যের দাবিমতো ট্রেন চালাতে রেলের প্রয়োজন রাজ্য সরকারের থেকে উপযুক্ত পুলিশি সহায়তা। রাজ্যে এ বিষয়ে সর্বত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।

কবে থেকে ফের চালু হবে লোকাল ট্রেন? কোন ডিভিশনে ক’টি করে লোকাল ট্রেন চলবে? কোন ট্রেন কোন স্টেশনে দাঁড়াবে? কী ভাবে ট্রেনে ওঠা-নামা করতে পারবেন যাত্রীরা? এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই বৃহস্পতিবার নবান্নে আরও একবার রাজ্য-রেল বৈঠক হল। আজই রাজ্য প্রশাসনের কাছে লোকাল ট্রেন চালানোর এসওপি জমা দেয় রেল। ট্রেন চালানোর পদ্ধতি নিয়ে দু’পক্ষের মতের মিল হওয়াতেই লোকাল ট্রেন চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হল।

করোনাভাইরাসের জেরে ২৩ মার্চ থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালানোর জন্য রাজ্য-রেল বৈঠক হয় ২ নভেম্বর। ওই আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, ১০-১৫ শতাংশ পরিষেবা দিয়ে লোকাল ট্রেন চালাতে শুরু করবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বরেল। এর পরদিনই স্বরাষ্ট্রসচিব রেলকে চিঠিতে জানান, যাত্রীদের যথাযথ পরিবহণ করতে যত ট্রেন লাগে, তত ট্রেনই চালানোর ব্যবস্থা করা হোক। তারই প্রেক্ষিতে ফের বুধবার আলোচনায় বসে রাজ্য ও রেল। তারপর আবার বৃহস্পতিবার। এরপর সোমবার ফের বৈঠকে বসবে দুপক্ষ। তবে, স্টেশনের ভিড় সামলানোর দায়িত্ব রাজ্য পুলিশকে নিতে হবে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে রেল। প্রতিটি স্টেশনের এন্ট্রি গেটে থাকবে নিরাপত্তারক্ষীরা, করা হবে যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং।

নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা রেলের আধিকারিকদের জানিয়েছেন, লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় সামাল দেওয়ার পদ্ধতি, কোন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে সর্বোচ্চ সংখ্যক যাত্রীকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে, কোন স্টেশনে কত পুলিশ মোতায়েন রাখতে হবে, হাওড়া ও শিয়ালদহের মতো টার্মিনাল স্টেশন বাদ দিলে অন্য স্টেশনে যাত্রীদের ঢোকা-বেরোনোর উপায় কী হতে পারে – এই সব বিষয়ে রেলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট এসওপি পেলে তবেই রাজ্য নিজের মতো পরিকল্পনা করতে পারবে। সোমবার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here