দেশের সময় ,বনগাঁ: সংবাদ মাধ্যমে আগেই জেনে গিয়েছিল ফের ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে,তবুও যেন একবার চোখের দেখা না দেখতে পেলে মনের তৃপ্তি মিটছিল না ৭২-এর বৃদ্ধা বৃন্দাদেবীর ,তাই পাড়ার কচিকাচাদের কাছে জানতে পারেন বুধবার বিকেলে মতিগঞ্জে তাঁর প্রিয় বিশ্বজিৎ আসছে,আর কোন রকম অপেক্ষা না করেই জনসমুদ্র পার করে একেবারে মঞ্চের সামনে এসে উপস্থিত হন তিনি, তখনই ওই বৃদ্ধার চোখের সামনে জনজোয়ারে ভাসিয়ে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে মঞ্চে আলিঙ্গনে স্বাগত জানান শঙ্কর আঢ্য, ঘরের ছেলেকে বরণ করে নিলেন বনগাঁর অসংখ্য মানুষ।
এদিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কে ঘিরে অন্তত হাজার তিনেক মানুষের জমায়েত দেখে অনেকের মুখে শোনা যায় ভালই হল! এর ফলে বুধবার বিকেলে মতিগঞ্জের জনসমুদ্র কী ইঙ্গিত বহন করছে সেটা হয়ত বনগাঁর মানুষের কাছে অজানা নয়।
পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা। শাসক দলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তৃণমূল স্তর থেকে লড়াই করে একাধিকবার সাফল্যের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি হওয়া বিশ্বজিৎ দাস রাজ্যের শেষ বিধানসভা নির্বাচনেও প্রমান করে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের সমর্থন তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ- পরক্ষ্ ভাবে রয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকেই স্নেহের সম্পর্ক দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে, অনেক বারই কথায় কথায় বলতে শোনা যেত বিশ্বজ্যিৎ এর গলায়৷ ফের দলে ফেরার ঘটনায় এখন আর কারও বুঝতে অসুবিধা নেই যে তৃণমূল দলের বনগাঁর নেতা মানেই দিদির কাছে পছন্দের তালিকায় বিশেষ নাম বিশ্বজিৎ দাস।
বিশ্বজিৎ -এর কথায়, দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মনোমালিন্যের কারণে যখন বিরোধীতার মাত্রা বাড়তে থাকছিল, দলের উচ্চ নেতৃত্বকে বুঝিয়েও যখন সুরাহা হচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে অন্য ভাবনা ভাবতে হয়েছিল তাঁকে। আর তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রাণের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদার করতে হয়েছিল। তখন মনে মনে যথেষ্ট কষ্ট পেতে হয়েছিল তাঁকে।
দল বদলেও মনে শান্তি পাচ্ছিলেন না। নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলেও নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব প্রমান করতে সেখানেও তাঁকে কম বিরোধীতার সম্মুখীন হতে হয় নি। দীর্ঘ দিন বনগাঁ অঞ্চলে রাজনীতি করা বিশ্বজিৎকে একপ্রকার কোনঠাসা করতে বিধানসভা নির্বাচনে বাগদা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয় তাঁকে। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, এবার বিশ্বজিতের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সেখানেই ইতি ।
সেই সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমান করে নিজের রাজনৈতিক দক্ষতায় সফলভাবে ফের জয়ী হলেন তিনি। অন্য দলের বিধায়ক হয়েও মন যেন পরেই ছিল পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে। আর তরই ফল স্বরূপ বিরোধী দলের বিধায়ক হিসেবে বিধানসভায় গিয়ে সটান প্রনাম ঠুকে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে পায়ে। যদিও তখন বিশ্বজিৎবাবু এটাকে রাজনৈতিক সৌজন্য হিসেবে ব্যাখা করার চেষ্টা করেছিলেন৷ তবে গুঞ্জন শুরু হয় সেই সময় থেকেই।
এরপর তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ সেই জল্পনাকে দিন দিন আরও উস্কে দেয়। অবশেষে সব জল্পনার শেষ হয় গত মঙ্গলবার। ততদিনে অবশ্য বনগাঁ তথা জেলার রাজনীতিতে অনেক পট পরিবর্তন হয়েছে। আর এই দিনটির জন্যই হয়তো এতোদিন মনের ভেতরের কষ্টকে চাপা দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন বিশ্বজিৎ দাস *৷
মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে দলের পতাকা তুলে নিয়ে ফের পুরনো দলে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন,, ওই দলে কাজ করা যাচ্ছিল না। আসলে তিনি মানসিকভাবে সেখানে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেবলমাত্র যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বুধবার বিকেলে বনগাঁ শহরে পা রাখতেই বিশ্বজিৎ দাসকে বরণ করে নিলেন বনগাঁর তৃণমূল কর্মীরা। এদিন বনগাঁর ১ নম্বর রেলগেটে তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর যশোর রোড ধরে ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল করে দলীয় নেতা, কর্মীদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে মতিগঞ্জে পৌঁছান বিশ্বজিৎ। সেখানে তাঁকে আলিঙ্গনে স্বাগত জানিয়ে সম্বর্ধনার আয়োজন করেন বনগাঁ শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কর আঢ্য।