পার্থ সারথি নন্দী ও রতন সিনহা, বনগাঁ: প্রায় দু’ বছর পর খুলেছে স্কুল কলেজের দরজা। গ্রাম-শহরের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে যেন উৎসবের মেজাজ। ব্যাগ বই-খাতা গুছিয়ে নিয়ে আবার আগের মতো স্কুলে গেছে তারা। সবকিছু হয়তো আগের মতো নেই। আগের মতো একজোট হয়ে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে গল্পগুজব হয়তো হবে না। কিন্তু এতদিন পর চেনা মুখগুলো আবার দেখার আনন্দেই শিহরিত কচিকাঁচারা। স্কুলের দরজায় দরজায় সেই দৃশ্য ঘুরে দেখল দেশের সময়।

স্কুলের গেটে সুদৃশ্য লম্বা লাইন
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর থেকে বনগাঁর সর্বত্র স্কুলের বাইরে ধরা পড়েছে বিচিত্র ছবি। সকাল থেকেই স্কুলে স্কুলে যথাযথ কোভিডবিধি মেনে পড়ুয়াদের ঢোকানো হল। দরজার বাইরেই মাপা হল দেহের তাপমাত্রা। কড়া নজর রাখা হয়েছিল দূরত্ববিধিতে। বেশিরভাগ স্কুলেই এক-একটি বেঞ্চে দুজনের বেশি পড়ুয়াকে বসতে দেওয়া হয়নি। সকলের জন্যেই মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার ছিল বাধ্যতামূলক।

বিধিনিষেধের ঘেরাটোপে স্কুলে পা দিলেও তাকে ছাপিয়ে গেছে ছোটদের মুখের হাসি। এতদিন পর স্কুলে ফিরতে পেরে তারা আপ্লুত। বনগাঁর মহকুমার অনেক স্কুলেই সব ছাত্রছাত্রীকে একসঙ্গে ডাকা হয়নি। এক-একটি ক্লাসে ২০ জন করে পড়ুয়া অফলাইন ক্লাস করতে এসেছে। বাকিরা সেই একই ক্লাস করছে বাড়ি থেকে অনলাইনে।আবার আগামীকাল তারা স্কুলে আসবে, আজকের পড়ুয়াদের ক্লাস করতে হবে বাড়ি বসে।

স্কুল খোলার আনন্দে গমগম করছে বনগাঁর স্কুলরোড৷

বনগাঁ কুমুদিনী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রানী উকিল বললেন, বাচ্চারা খুবই উৎসাহী। সবরকমের কোভিড প্রটোকল মেনে তারা ক্লাস করছে। আমরা ক্লাসের ব্যাপারে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছি। হাইব্রিড পদ্ধতিতে অফলাইন অনলাইন ক্লাস চলছে একসঙ্গেই। এদিন ৩০০ জন ছান্রী উপস্থিত ছিল৷

বন্ধুদের সামনে পেয়ে খুশি বাঁধ মানছে না
কুমুদিনি গার্লস স্কুলেও ছবিটা একরকম। লাইন দিয়ে মাস্ক পরা বাচ্চারা স্কুলে ঢুকেছে, তাদের সকলের দেহের তাপমাত্রা মেপে নেওয়া হয়েছে। একে অপরকে নিজের টিফিন বক্স থেকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে প্রিয় বান্ধবীকে , ছাত্রী দেবশ্রী মিশ্র বললেন , দারুণ লাগছে প্রিয় স্কুলের সঙ্গে প্রিয় বান্ধবীদেরকে ফিরে পেয়ে৷

প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রানী উকিল জানিয়েছেন, এতদিন পর স্কুল খুলল, ছাত্রছাত্রীদের প্রচণ্ড উৎসাহ। এতদিন ওরা ঘরবন্দি ছিল। বন্ধুদের সামনে আসা, ক্লাসে বসে পড়াশোনার কোনও বিকল্প হয় না। আমরাও খুব খুশি। বাচ্চাদের চোখে চোখ রেখে পড়াতে পারব। ওদের সুরক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। অক্সিমিটার ব্যবহার করা হয়েছে ওদের স্কুলে ঢোকানোর জন্য। আশা করছি সাফল্যের সঙ্গে ক্লাস চালিয়ে যেতে পারব।

সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই মধ্য বনগাঁর কলেজ চত্বর গমগম করছে ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে। কাছেই নিউ বনগাঁ গার্লস স্কুলের দরজা খুলে গেছে তখনই। লাইন দিয়ে তাপমাত্রা মেপে তাদের স্কুলে ঢোকানো হয়েছে এক এক করে। সকলের মুখে অনিবার্যভাবে রয়েছে মাস্ক।

বনগাঁ হাইস্কুল।

তবে সকাল ১১ টা পর্যন্ত ঘোষ স্কুল খুলতে দেখা যায়নি।
স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের মুখে উৎকণ্ঠা
গৌরী সুন্দরী স্কুলের সামনে আবার অভিভাবকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাচ্চাদের এতদিন পর স্কুলে পাঠাতে পেরে তাঁরা খুশি। তবে বাচ্চারা কেউ ভ্যাকসিন না পাওয়ায় রয়েছে খানিক উদ্বেগও ছিল। সকলেই আশা করছেন, স্কুলে ঠিকমতো কোভিডবিধি পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাই চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য চিন্তা করতে গিয়ে রাখালদাস স্কুলের সামনে অভিভাবকরা নিজেরাই ভুলে গেলেন কোভিডবিধি। দূরত্ব না মেনেই স্কুলে পাঠালেন বাচ্চাদের।

মাস্কের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে হাসিমুখগুলো
কুমুদিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় টপকে বনগাঁহাই স্কুলের দিকে এগিয়ে গেলেও স্কুল চত্বরের ছবিটা খুব একটা বদলায় না। স্কুলের সামনে মাস্ক পরা ছোট ছোট পড়ুয়াদের ভিড় সেখানেও। স্কুল ড্রেসের সঙ্গে মাস্কও যেন মানানসই। তার সঙ্গে আরও মানানসই হয়েছে মাস্কের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা মুখের হাসি, চকচকে চোখ।

বন্ধুদের দেখতে পাওয়া, একসঙ্গে ক্লাস করার আবেগ ঝরে পড়েছে সেসব চোখেমুখে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুনাল দে বলেন, এদিন ৩০০জন ছাত্র উপস্থিত হয়েছিল তাঁদেরকে এবং সমস্ত স্কুল শিক্ষক ও কর্মীদেরকে প্রতীকী হিসাবে ১টি করে ইরেজার উপহার দেওয়া হয় ৷ কারণ হিসাবে বলা হয় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল এবং খারাপ দিন ও দুঃসময়কে মুছে দিয়ে নতুন করে শুরু দিন চিহ্নিত করার আহ্বান জানান৷

ফুল, পেন পেল ছাত্র-ছাত্রীরা
আশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন হাইস্কুল খোলার কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে তার তোড়জোড়। সাজানো সেই স্কুলেই এদিন পা রেখেছে নবম দশম একাদশ দ্বাদশের পড়ুয়ারা। স্কুলের প্রথমদিন তাঁদের ফুল আর পেন দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ বলেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের হৃদপিন্ড ওরা ছাড়া আমাদের কোন অস্তিত্ব নেই৷ ওরা ফের ফিরে এসেছে মনে হলো নতুন করে বাঁচলাম, ফের প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে গোটা স্কুল৷

আশোকনগরে ছবিগুলিতুলেছেন দেবানন্দ পাইন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here