দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অতিমহামারী ১০০ বছরে একবারই আসে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে কোভিড প্যানডেমিকের কবলে পড়েছে দেশ। জিডিপি কমেছে রেকর্ড হারে। অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মন্দা। এই অভুতপূর্ব বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে সোমবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি আগেই বলেছিলেন, এবছর এমন বাজেট হবে যা আগে কখনও হয়নি। তাতে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, গত বছর অতিমহামারীর মধ্যে চার-পাঁচটি মিনি বাজেট পেশ করা হয়েছিল। তাতে যে ব্যবস্থাগুলি নেওয়া হয়েছিল, তাও এবারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এই প্রথমবার বাজেট হল ‘পেপারলেস’। অর্থাৎ অন্যান্য বছর অর্থমন্ত্রীরা যেমন কাগজ দেখে বাজেট পড়েন, এবার তা হল না। অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণ দিলেন ট্যাবলেট কম্পিউটার দেখে। সেই কম্পিউটার ভারতে তৈরি। পরে অনলাইনেও পাওয়া যাবে বাজেটের সফট কপি।

২০২০ সালের মার্চের শেষে দেশ জুড়ে লকডাউন জারি হয়। তার ফলে কার্যত বন্ধই হয়ে যায় উৎপাদন। ২০২০-২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে মোট জাতীয় উৎপাদন সংকুচিত হয় ২৩.৯ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে ২০২০-২১ সালের আর্থিক বছরে অর্থনীতি ৯.৬ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ২০২১ সালের ভারতের আর্থিক বিকাশ হবে ৫.৪ শতাংশ হারে। অন্যদিকে আই এম এফ বলেছে, জিডিপি-র বিকাশ হবে ১১.৫ শতাংশ হারে। ব্লুমবার্গের ধারণা, বিকাশ হবে ৯.২ শতাংশ হারে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণে এদিন যা বলেছেন:


আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ব্যাপক সংকুচিত হয়েছে।
আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পগুলি কাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করেছে। ২৭ লক্ষ কোটির বেশি আত্মনির্ভর প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে।
২০২১ সালের কোভিডের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।
কোভিডের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এই বাজেটেই আর্থিক পুনরুজ্জীবনের সূচনা হবে।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় বাড়ানো হল ব্যয়বরাদ্দ।
২ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ল ১৩৭ শতাংশ।
টিকার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রতিটি জেলায় হবে স্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি।
বস্ত্রশিল্পের জন্য আলাদা পার্ক তৈরি হবে।
কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।

রফতানি ও কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বমানের কাঠামো।
পরিকাঠামো উন্নয়নে ঋণ।
৩ বছরে ঋণ দেওয়া হবে ৫ লক্ষ কোটি টাকা।
পুরনো গাড়ি দ্রুত বাতিল করা হবে।
পশ্চিমবঙ্গে ৬৭৫ কিলোমিটার স্টেট হাইওয়ে তৈরি হবে। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি রাস্তা মেরামত করা হবে।
৩৫০০ কিলোমিটার স্টেট হাইওয়ে তৈরি হবে তামিলনাড়ুতে। ১১০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে কেরলে। মুম্বই-কন্যাকুমারী হাইওয়ে তৈরি হবে। অসমে ১৯ হাজার কিলোমিটার রাস্তা মেরামত হচ্ছে।
১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা মূলধনী খাতে ব্যয়।
খড়্গপুর থেকে বিজয়ওয়াড়া ফ্রেট করিডোর।

১০০ শতাংশ ব্রডগেজ রুটের ইলেকট্রিফিকেশন।
জাতীয় রেল প্ল্যান তৈরি হয়েছে।
রেলে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
রেলে বরাদ্দ ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি। তার মধ্যে ১ লক্ষ কোটির বেশি মূলধনী প্রকল্পে।
মেট্রো ও বাস সার্ভিসের জন্য ১৮ হাজার কোটি।
এর ফলে ২০ হাজার বাস রাস্তায় নামবে।
পাওয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচারে গত ছ’বছরে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। ফলে ২.৮ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন।
বিদ্যুৎ সরবরাহে মোনোপলি আছে। আমরা একাধিক ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আনতে চাই। তাতে ক্রেতারা উপকৃত হবেন।
একটা নতুন হাইড্রোজেন এনার্জি মিশন তৈরি হবে।
বড় বন্দরগুলির ম্যানেজমেন্ট তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হতে। এই খাতে কিছু ভর্তুকি দেওয়া হবে।

ভারতে এখন পুরোনো জাহাজগুলি রিসাইকল করার চেষ্টা হচ্ছে। ৯০টি জাহাজ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। ইউরোপ ও জাপান থেকে আরও জাহাজ ভারতে এসে রিসাইকল করা হবে। এর ফলে ১.৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।
শহরে গ্যাস ডিশট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক আরও প্রসারিত হবে।
আমরা সেবি অ্যাক্ট ও গভর্নমেন্ট সিকিউরিটি অ্যাক্ট কিছু পরিবর্তন করছি। কর্পোরেট বন্ড মার্কেটকে আমরা আরও শক্তিশালী করতে চাই।
গোল্ড এক্সচেঞ্জ রেগুলেটরি অথরিটি তৈরি হবে।
১০০০ কোটি টাকা সোলার এনার্জি খাতে ব্যয়।
ইনসিওরেন্স অ্যাক্ট বদলানো হচ্ছে। বিমা কোম্পানিতে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি।
অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি তৈরি হবে।
ব্যাঙ্কের ডিপোজিট ইন্সিওরেন্স গতবার ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ করা হয়েছিল। যে ব্যাঙ্কগুলি এখন সমস্যায় আছে, তাঁদের আমানতকারীরা যাতে ইন্সিওরেন্সের টাকা পান, তাঁর পরিকাঠামো তৈরি হল।

ছোট কোম্পানির সংজ্ঞা বদলানো হল। ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত যাদের টার্ন ওভার তাদের ছোট কোম্পানি বলব।
কোভিড ১৯ সত্ত্বেও আমরা পণ্য পরিবহণ চালু রেখেছি।
২০২১-২২ সালে আমরা এলআইসি-র শেয়ার বাজারে বিক্রি করব।
চারটি ক্ষেত্রে বিলগ্নিকরণ করব।
আমরা রাজ্যগুলিকে বলছি, যে বিপুল পরিমাণ জমি পড়ে আছে, তা মনিটাইজ করতে হবে। এর ফলে যে টাকা পাওয়া যাবে, তা বিনিয়োগ করা যাবে।
আমরা ধরে নিচ্ছি ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিলগ্নিকরণ থেকে পাওয়া যাবে।
আমরা পি এস এ সিস্টেমের প্রসার ঘটাচ্ছি।
পঞ্চদশ ফিনান্স কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সেন্ট্রালি স্পনসরড প্রকল্প আরও বাড়াচ্ছি। মাল্টি স্টেট কো-অপারেটিভের প্রসার ঘটবে।
২০২০-২১ সালে ৭৫ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। ৪৩.৬ লক্ষ কৃষক এর ফলে উপকৃত হয়েছেন৷

আমরা মনে করছি ১ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে কৃষকদের থেকে ফসল কেনা হবে।
কৃষকদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে ১৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা। মৎস্যচাষিরাও ঋণ পাচ্ছেন।
১.৮৬ কোটি কৃষক অনলাইন কৃষি বাজারের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন।
কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ বাড়ল
আধুনিক মৎস্যচাষের জন্য বন্দর নির্মাণে আমরা বরাদ্দ বাড়াচ্ছি। এর ফলে অনেক কর্মসংস্থান হবে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এক দেশ এক রেশন কার্ড চালু হবে। যাঁরা পরিবার থেকে দূরে আছেন, তাঁরাও এই কার্ড দেখিয়ে রেশন পাবেন। ৩২টি রাজ্যে এই প্রকল্প চালু হবে।
ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশনের জন্য স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া নামে নতুন প্রকল্প হল।
এমএসএমই সেক্টরের সাহায্যে বরাদ্দ করা হচ্ছে।

১৫ হাজার স্কুলকে নতুন এডুকেশন পলিসির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করছি।
হায়ার এডুকেশন কমিশন তৈরি হবে। তার আওতায় ইউনিভার্সিটি, কলেজগুলি থাকবে।
লাদাখে উচ্চশিক্ষার জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে।
আদিবাসী এলাকায় ৭৫৮টি নতুন বিদ্যালয়।
তফসিলি জাতিদের জন্য পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ স্কিমে বরাদ্দ বাড়বে। চার কোটি ছাত্র উপকৃত হবেন।
প্রফেশনাল অ্যাপ্রেনটিসশিপ ট্রেনিং স্কিম চালু হচ্ছে।
ডিজিট্যাল ট্রানজাকশনের জন্য ৫ হাজার কোটি বরাদ্দ।
ন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজ ট্রানস্লেশন মিশন চালু হবে।
আমাদের আইনি ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে।

ন্যাশনাল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কমিশন তৈরি হবে।
চা শিল্পের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।
এই আর্থিক বছরের শুরুতে অতিমহামারী দেখা দেয়। স্বাস্থ্য সংকট কিছুটা কমেছে। এখন আমরা চাহিদা বাড়াতে চাই।
আমরা মূলধনী ব্যয় আগের থেকে বাড়িয়েছি।
৯.৫ শতাংশ রাজকোষ ঘাটতি হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার বাজার থেকে ধার করবে। ৮০ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তোলা হবে।
২০২১-২২ সালে রাজকোষ ঘাটতি ৬.৮ শতাংশ হতে পারে।
বাজার থেকে ১২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করা হবে।
এফআরবিএম অ্যাক্ট বদলানো হচ্ছে।
রাজ্যগুলি করের ৪১ শতাংশ পাবে।
এখন আমরা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করছি।
অতিমহামারীর ফলে নতুন আর্থিক ব্যবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।

করদাতাদের ওপরে যথাসম্ভব কম চাপ দেওয়া হবে।
সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রত্যক্ষ করে সংস্কার করা হয়েছিল। রিবেট বাড়ানো হয়েছিল। আমরা সিনিয়র সিটিজেনদের ছাড় দিয়েছি।
বয়স্ক নাগরিকদের জন্য আমরা বিশেষভাবে চিন্তিত। যাঁদের বয়স ৭৫ বা তার বেশি, তাঁদের সুদের আয়ে সম্পূর্ণ ছাড়।
ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট রি-ওপেন তিন বছরের মধ্যে করতে হবে।
কর নিয়ে মামলা কমাতে হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জিরো কুপন বন্ড যাতে সহজে বাজারে আসে তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কম দামে যাতে বাড়ি পাওয়া যায়, তার জন্য ট্যাক্স হলিডে আরও কিছুদিন বাড়ানো হল।
গৃহঋণের সুদ ১.৫ লক্ষ টাকা করমুক্ত।
স্টার্ট আপদের জন্য ট্যাক্স হলিডে আরও বাড়ানো হল।
জিএসটি চালু হয়েছে চার বছর আগে। তা আরও সহজ করা হয়েছে। আমরা জিএসটি খাতে রেকর্ড কালেকশন করতে পেরেছি।

শুল্ক নীতি তৈরি করা হয়েছে দেশীয় শিল্পের দিকে লক্ষ রেখে।
আমরা ৮০টি পুরানো নিয়ম পুনর্বিবেচনা করব।
এনআরআইদের ডবল ট্যাক্সেশন যাতে না হয়, তার জন্য নিয়ম পরিবর্তন করা হবে।
মোবাইল ফোন শিল্প খুব তাড়াতাড়ি বিকশিত হচ্ছে। আমরা মোবাইল ও চার্জার রফতানি করছি। তাদের ওপরে ২.৬ শতাংশ রফতানি শুল্ক ধার্য করা হল। আগে শুল্ক দিতে হত না।
সোনা ও রুপোর ওপরে আমদানিশুল্ক কিছুটা বদলাবে।
সোলার লণ্ঠনের ওপরে শুল্ক বাড়ানো হল।
টানেল বোরিং মেশিনের ওপরে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হল।
বস্ত্রশিল্প ও চামড়া শিল্পের ওপরে আমদানিশুল্কের পরিবর্তন ঘটবে।

তুলোর ওপরে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হল।
কৃষিক্ষেত্রে পরিকাঠামোর উন্নতি করা হবে। ফলে কৃষকদের আয় বাড়বে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here